চোখ ভেজানো বৃষ্টি

511 32 5
                                    

#চোখ_ভেজানো_বৃষ্টি

ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়েছি। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশভর্তি কালো মেঘে। চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। রাস্তায় রিক্সা, সি এন জি কিচ্ছু নেই। আমি এক হাতে ছাতা ধরে বৃথাই বৃষ্টি থেকে বাঁচবার চেষ্টা করছি। কাজ হচ্ছে না। জামার নিচের দিক পুরো ভিজে গেছে। এদিকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। আজ বিকেলে আমায় দেখতে আসার কথা। মা বারবার ফোন করছেন। আমি উপায় না দেখে হাঁটতে শুরু করলাম।
অবস্থা এমন যে পারলে আমি বৃষ্টির মাঝেই ছুটে বাড়ি ফিরি। নির্জন রাস্তায় আশপাশ দেখে ছাতা বন্ধ করে অনেকটা দৌড়ানোর মত করেই হাঁটতে শুরু করলাম।ফলাফল হল খারাপ। পা ফসকে পরে গেলাম পথের ধারের জমা পানিতে। ময়লা কাদায় মাখামাখি হয়ে উঠে দাঁড়ালাম।জুতো হাতে হাঁটতে শুরু করলাম। মাথার উপর ঝুম বৃষ্টি। কাদা ধুয়ে যাচ্ছিলো গায়ের। এর মাঝে আমার পাশেই একটা বাইক এসে থামলো। কালো হ্যালমেট পরনে একজন। সেও ভিজে গায়ে বাইক চালাচ্ছে৷ পরনের ধূসর পাঞ্জাবি ভিজে কালচে হয়ে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।
আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
---লিফট চাই?
আমি মাথা নাড়লাম। অসম্ভব। এই ঝুম বৃষ্টিতে অপরিচিত একজনের বাইকে উঠবো! মরে গেলেও না।
সে আবার বললো,
---উঠে পড়ুন। পৌঁছে দিই।
---উঁহু।

আমি দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। খারাপ লোক হয়তো। বৃষ্টিতে একা পেয়ে পিছু ধরেছে। ওমা বাইক নিয়ে আমার সামনে এসে পথ আটকালো। 
হ্যালমেট খুলে মাথার ভিজে চুল পেছনে নিলো। শ্যামলা চেহারার ক্লান্ত মুখ। হঠাৎ করেই চোখে বিঁধে রকম খাড়া নাক। ধারালো ঠোঁট। আমি ঢোঁক গিললাম। মুখটা এত কেটে বুকে বসলো কেন? বৃষ্টির মাঝেই দেখেছি বলে? আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
জমে যাওয়া ওড়না মেলে গায়ে পরার জন্য টানলাম।
আটকে আসা স্বরে কোনোরকমে বললাম,
---যেতে পারবো। লিফট লাগবে না।
---হাত কেটে গেছে আপনার। রক্ত পড়ছে খুব। উঠুন, বাইকে উঠুন।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। আসলেই আমার ডানহাতের কনুই কেটে গেছে। নীল জর্জেট জামা ভিজে চুইয়ে রক্ত আর পানি টপ টপ করে পড়ছে। হয়তো তখন ওভাবে পড়ে গেছিলাম, তখনি কেটে গেছিলো।
আমি জুতো ফেলে কাটা হাত চেপে ধরলাম। ততক্ষণে আমার কাঁধব্যাগ গড়িয়ে মাটিতে ঝুলছে। মুষলধারে বৃষ্টি। আশপাশের দোকানপাটগুলো পর্যন্ত শাটার নামানো। 

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Jun 03, 2021 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

চোখ ভেজানো বৃষ্টিWhere stories live. Discover now