জীবন্ত বনানী

6 1 0
                                    

বসন্তের মৃদু বাতাস, বইছে দু-একটা পলাশের পাপড়ি বাতাসের ঘূর্ণির মধ্যে পাক খেতে খেতে চলে যাচ্ছে সামনের নীল জীবন্ত জলাশয়-এর কাছে । ওখানেই কয়েকটা রংবেরঙের পাখি কখনো উড়ে যাচ্ছে আবার কখনো ফিরে এসে নরম রৌদ্রে নিজের গায়ের বিক্ষিপ্ত রঙের তরঙ্গে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে জলাশয়ের বুকে জেগে ওঠা নীল পদ্মফুল গুলিকে। তারাও ছাড়বার পাত্রী নয়, জলাশয়ের সমস্ত জৈবিক শক্তি নিজের শায়িত কোশের  দ্বারে সঞ্চিত করে কালবৈশাখীর দাপটে লাগা দাবানলের মতো জ্বলে উঠতে চাইছে।
                                 জলাশয় এর উল্টো দিকে যে ঘন বনানী এতদিন ধরে শীতের অত্যাচার সহ্য করে বৃদ্ধ পিশাচের মতো দাঁড়িয়ে ছিল তারাও এখন নবজাতকের মত হাসতে শুরু করেছে। পর্ব মুকুলে কচি পাতার সুরে মেতে উঠেছে সকল বণ্য জীবনযাত্রা। আনন্দ শুরু করেছে । তবুও অতীতের কয়েকটি চিহ্ন এখনো মুছে যায়নি । সাদাকালো বনানীর মধ্যে থেকে যে পথটা চলে এসেছিল সাপের মতো এঁকেবেঁকে, যার ধুলোতে লেগে থাকত শান্ত জ্যোৎস্নার পায়ের ছাপ; সেটি এখন শুকনো পাতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ।
         হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যায় তার উপরের কঠিন আস্তরণ, বাদামি খোলসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একরাশ দমবন্ধ করা নিঃশ্বাস এবং শেষে প্রশান্তির গন্ধ। উন্মুক্ত হয় শত শত প্রাণীর জীবনযাত্রার চিত্র, যারা এতদিন এই নির্বাক বনানীর বুকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছিল। তাদের তৈরী জৈবিক সাম্রাজ্য সমগ্র বিশ্বের কাছে প্রকাশিত আজ ।তারাও নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম, তারাও সামনে এগিয়ে চলেছে সময় কে পিছনে ফেলে। রাস্তার বাঁকে বাঁকে তৈরি তাদের মাটির দুর্গে যে কত অস্ত্রধারী সৈন উপস্থিত তা কোন‌ সুস্থ  আদিম বা আধুনিক কোন মস্তিস্কেরই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
                   পাতার নুপুর ধ্বনি তুলে পথটা জীবন্ত বনানীর বুক চিঁড়ে যে কোথায় চলেছে তা কেউ জানে না । তার শেষ কোন অন্ধকার নাকি আলোর সন্ত্রাস তা আবিষ্কারের দায়িত্ব এ সময় পর্যন্ত কারো কাঁধে এসে পড়েনি। তবে মাঝে মাঝে যখন ভাঙা চাঁদ জ্যোৎস্না বিদায়ের গান গায় তখন দূর থেকে কয়েকটি আদিম বন্য আওয়াজ  একসাথে ডেকে ওঠে অথবা কখনো প্রকৃতির আদি নিয়মকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসে এক নিরাকার ছায়া যা পূর্ণ চাঁদকে পাহারা দেয় আবার মিলিয়ে যায় অন্ধকারের বুকে। এইসবই প্রমাণ করে ওখানে প্রাণ আছে, তবে তা আদিম না আধুনিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
                                এই জীবন্ত বনানীর মাঝেই আরেকটি প্রাণ বেড়ে উঠছে কালের নিয়মে। এ প্রাণ বড় মায়াময়, যার প্রতিটি স্পন্দনে ভেঙে পড়ে সাগরের বিশাল ঢেউয়ের পাহাড়। যার প্রচন্ড নেশাগ্রস্ত নীলমণির আকাঙ্ক্ষা বসন্তের যৌবনকেও হার মানায়।
তার হিম শৈলের মতো দেহের যে এত উত্তাপ তা চোখের আঙ্গিকে‌ বিশ্লেষণ করা ব্যর্থ। তবুও সে গলে যায় না, পায়ের নিখুঁত ছাপ মাটিতে এঁকে, মাথার কালো ঘন চুলের গন্ধ বাতাসে উড়িয়ে এই বসন্ত বনানীরর গর্ভে বেড়ে চলেছে। হিংস্র বনানীর সমস্ত কাম,লালসা,যৌবন শুষে নিয়ে  নিজেকে তৈরী করছে আগামী পর্বের জন্য যা তার নিঁখুত যৌবনের দ্বারা সৃষ্টি, যা তার চঞ্চল অথচ নীথর বুকের বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে লেখা।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Oct 29, 2021 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

চিত্রবিজয়াWhere stories live. Discover now