মুক্তির খোঁজে( ছোট গল্প)

13 1 1
                                    

----"কি'রে!! কি নাম তোর ? আর এই খড়ের কাঠামো গুলো নিয়ে কি করবি তুই ?"

প্রশ্ন করতেই আমার দিকে চোখটা তুলে তাকিয়ে মুখটা নামিয়ে নিল মেয়েটা। ওর চোখে চোখ পড়তেই কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি যেন হারিয়ে গেলাম অজানা এক জগতে, যেন একটা সম্মোহনী জাদু আমাকে দুর্বার গতিতে ওর দিকে টানছে। অদম্য একটা কৌতূহল কেন আমার মনটা কে নাড়া দিচ্ছে! কেন জানতে ইচ্ছে করছে ওর বিষয়ে!
কি আছে ওর মধ্যে!!

আজ কয়েকদিন যাবৎ ওকে রোজই দেখছি। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর মেয়েটা আপন মনে জলে ভাসা মূর্তির কাঠামো গুলোকে জল থেকে তুলে এনে নদীর পাড়ে জমা করছে। হেমন্তের হালকা শীতল আবেশ মাখা ভোরে নদীর পাড়ে এসে বসে থাকি আমি। কুয়াশার হাল্কা আস্তরণ সরিয়ে রবির প্রথম কিরণ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘাটে। একটু একটু করে নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততার ছাপ পড়তে থাকে ঘাটের আনাচে কানাচে। হাজার ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় আবার একটা নতুন দিনের।

গঙ্গাস্নানের পর বিশ্বম্ভর পান্ডের সূর্যস্তুতির মন্ত্র গুলো শুনলে এক অদ্ভুত শিহরণ লাগে শরীরে, লোমগুলো খাড়া হয়ে যায়। প্রভাতের এই মনোরম পরিবেশের প্রলেপ আমার সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবনকে উজ্জীবিত করে।

" জয় শিবশম্ভু, জয় ত্রিকালপতি মহাদেব, হর হর মহাদেব,"- শব্দের উচ্চারণে আর ঘাটের অদূরেই শ্মশান ভৈরবের মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘন্টা আরতির শব্দের মাঝে বুড়ো বিশ্বম্ভরের গলায় শিবস্তুতি কর্ণগোচরে এসে ঢুকলে একটা পরম শান্তির অনুভুতি হয় সারা শরীরে।

মন্দিরের ঘন্টা ধ্বনি শোনা মাত্রই মেয়েটা এক ছুটে মাটির কলসি করে জল নিয়ে মার্বেল বাঁধানো মন্দির চত্বরটা ধুতে শুরু করে আপন মনে। বয়েস বড়জোর আট কি ন'বছর হবে। হাড় গিলগিলে শরীরে এত প্রাণশক্তি পায় কোথা থেকে- ওই জানে। পুজো শেষে ওর বরাদ্দ নৈবেদ্য চাল, কলা, কখনো বা এক আধ টুকরো নারকেল। দিনের শুরুতে এই প্রাপ্তির সুখ ছড়িয়ে পড়ে ওর চোখে মুখে। ওর প্রতি হাজার কৌতূহল কেমন যেন দিনে দিনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে আমার মনের গভীরে.....

কে ও ! ?

অনেকটা বেলা হয়ে গেল এবার ওঠা যাক, বাড়ি ফিরতে হবে- মনে মনে কথাটা বলেই উঠে পড়লাম।
আমি কে? প্রশ্ন জাগছে মনে। আমি ছেন্দীলাল মগনলাল শাহ। এখানে বড়বাজারে আমার একটা ছোটখাটো মশলার আড়ৎ আছে। তিন পুরুষের পৈতৃক ব্যবসা। সেই কোন ইংরেজ আমলে পেটের তাগিদে সুদূর গুজরাট থেকে এই বাংলার মাটিতে পত্তন করেছিলেন আমার পূর্বপুরুষেরা, সেই থেকে এখানকার হয়েই রয়ে গেছি।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Oct 31, 2021 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

মুক্তির খোঁজেWhere stories live. Discover now