দোলা এর আগেও কয়েকবার মালয়েশিয়া বেড়াতে এসেছিল, কিন্তু পেনাং আসা
এই প্রথম । পেনাং যে এতো সুন্দর না আসলে সে কখনও জানত পারতো না। বৃটিশদের ঐতিহাসিক স্থাপনায় ঘেরা একটি শহর। একেবারে গোছানো ছবির মতো। আধুনিক বড় বড় দালানের পাশাপাশি সেই চারশো পাঁচশো বছর আগের বৃটিশদের তৈরি পুরনো দালান। কিন্তু কি সুন্দর করে যত্ন করে রাখা । এরা যত্ন নিতেও জানে।
হোটেলে প্রবেশ করে তো দোলা মুগ্ধ । কতো তলা হবে ? ১৫ / ১৬ তলা ? তাতো হবেই । দোলাদের রুমটাই তো ১৩ তলায়। হোটেল তো নয় যেন ছোট্ট একটা সাজানো apartment । ড্রইং রুমের ঠিক মাঝখানে চারটা সোফা । একপাশে একটা টু সিটার আর অন্য পাশে দুইটা single সোফা। সেন্টার টেবিলটা কাচের , তার ওপর একটা কারুকাজ করা ফুলদানি। কোনায় একটা পড়ার টেবিলের মতো আর অন্য পাশে একটা গোল ছোট্ট ডাইনিং টেবিল। ড্রইং রুমের সাথে ছোট একটা এটাচ টয়লেটও আছে।
সবচাইতে ভালো লেগেছে যেইটা সেইটা হলো হোটেলের জানালা থেকে নীল সমুদ্রের অনেক খানি দেখা যায় । ছোট ছোট পালতোলা নৌকা, দুই একটা জাহাজও দেখা যাচ্ছে, দুরে আবার ছোট ছোট দ্বীপ,দ্বীপগুলি আবার সবুজ টিলা দিয়ে ঘেরা, কি সুন্দর দৃশ্য। দোলা মূগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছে।
দোলার পাঁচ বছরের কন্যা সন্তান রানিয়াতো বলেই ফেলল -
মামনি , আমরা কি এইখানে সারাজীবন থাকতে পারি না ?
পারি মা , পারবো না কেন ? কিন্তু তোমার বাবা যে থাকতে পারবেনা, তোমার বাবাকে ছাড়া থাকতে পারবে ?
বাবাকে ছাড়া কোনদিন থাকতে পারবো না মামনি।
দোলা হেসে ফেলল , আর ঠিক তখনই আবির ঢুকলো।
আবির হাসান, একটা প্রায়ভেট কোম্পানিতে চাকরী করে। পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসে। পেনাং ঘুরতে আসার পরিকল্পনা তার অনেক দিনের। কিন্ত কাজের চাপে হয়ে উঠছিল না। আজ এতোদিন পর পূরন হলো। আবিরকে দেখে দোলা বললো,
তুমি কোথায় নাই হয়ে গিয়েছিলে ?
ছোট রানিয়াকে কোলে তুলে আবির বললো,
এই শহরের কোথায় কি আছে একটু জানতে গিয়েছিলাম।
তো, জানতে পেরেছো ?
হাঁ পেরেছি, তোমরা চট করে তৈরি হয়ে নাও। আজকে আমরা সারাদিন ঘুরবো।
রানিয়া চোখ বড় বড় করে বললো,
আমরা কি সারাদিন শুধু ঘুরবো বাবা , কিছু খাব না ?
অবশ্যই খাব , সারাদিন খাব।
কি খাব বাবা ?
অনেক কিছু ।
বাবা , আমরা কি খাদক ?
না মা , আমরা খাদক না, কিন্তু আজকে খাদক হয়ে যেতেও পারি,
দোলা বললো,
তুমি রানিয়াকে তৈরি করে দাও, আমি তাহলে চট করে স্নানটা করে আসি।
এই বলে দোলা বাথরুমে ঢুকলো।
কি বিশাল বাথরুম। তার এক পাশে একটা wall আলমারিও আছে। একটা বাথটাব আর দুইটা টয়লেট। কি আজব , দুইটা টয়লেট কেন ?
দোলা স্নান করতে লাগলো, বিশাল আধুনিক বাথরুমে সনান করতে দোলার ভালোই লাগছে, একধরনের রাজকন্যা রাজকন্যা অনুভূতি । কিন্তু হঠাৎ সে এর ধরনে অসসহসথ অনুভব করলো, কেমন যেন বুকের ভিতরটা ধ্বক্ করে উঠলো। মনে হলো বাথরুমে কেউ আছে । মনে হচ্ছে দোলাকে কেউ ডাকছে, খুব হালকা করে ডাকছে দোলা দোলা, যে ডাকছে সে দোলার খুব কাছাকাছি, দোলা তার নিশ্বাসের শব্দও পেল । কি আশ্চর্য বাথরুমে কে থাকবে,আর কে ডাকবে ? ভয়ে তার নিশ্বাস ভারি হয়ে যেতে লাগলো, সে দেখলো ঝরনা পানির সাথে দু এক ফোটা রক্ত ঝরছে , আবার কিছুক্ষণের মধ্যে মিলিয়েও গেল । এইসব কি হচ্ছে, দোলা একবার মনে হলো আবিরকে ডাক দিবে পর মুহূর্তে আবার মনে হলো ধুর হয়তোবা তারই বোঝার ভুল। সে ঝটপট স্নান সেরে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসলো।
আবির বললো,
দোলা , তারাতারি তৈরি হয়ে যাও , আমি আর রানিয়া তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।
আমার দশ মিনিটের বেশি লাগবে না ।
দোলা দশ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল , বললো,
চল এইবার শহর ঘুড়তে যাই।
দরজা পর্যন্ত আসার পর দোলা বলে উঠলো, এই যা আমিতো আমার পারস্ টাই বেগে ঢুকাই নাই, তোমরা দাড়াও আমি পারস্ টা নিয়ে আসি।
রুমে ঢুকেই তার আবার বুকটা ধ্বক্ করে উঠলো। আবার একইরকম অস্বস্থি হতে লাগলো। মনে হলো কে যেন দোলাকে দেখছে, কে যেন তার ওড়না স্পর্শ করলো। আচ্ছা বার বার দোলার এইরকম কেন মনে হচ্ছে ? তার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ?
দোলা ঝটপট পারস্ টা বেগের ভিতর ভরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো, মনের মধ্যে একধরনের অস্বস্থি নিয়েই সে শহর দেখতে বের হয়ে গেল।
YOU ARE READING
ধ্বক্
Mystery / Thrillerআমাদের অতি পরিচিত এই পৃথিবীতে হঠাৎ হঠাৎ এমন সব অপরিচিত ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা দেয়া মানুষের পক্ষে হয়তো সম্ভব না। দোলার জীবনে কি এমন কিছুই ঘটলো ? বেড়াতে যাওয়াতো আনন্দেরই হয়। কিন্তু আসলেই কি সবসময় আনন্দের ?