*১

192 11 0
                                    

#দায়_বন্ধন
#নাইমা_জাহান
#পর্ব_১

ধূসর মেঘে ছেয়ে রয়েছে আকাশ। মুশলধারায় বৃষ্টি নেমে পড়বে যেকোনো সময়। বৈশাখের আগমনেও গরমের আভাস নেই একটুও। বরং শরীরে কাটা দেয়ার মতো শীত লাগতে শুরু করেছে। ওড়না দিয়ে হাত ঢেকে নিল তোড়া। জানালা বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাকালো পাশের লোকটির দিকে। লোকটি বেশ বয়স্ক। ঠোঁটে সিগারেট। বড়বড় গোফ-দাঁড়ি দিয়ে মুখের প্রায় আঁধখানটা তার ঢাকা। মাথায় চুল নেই। গায়ের রঙ কালো। যেন রোদে ঘুরেঘুরে পুড়ে কালচে হয়ে গেছে চামড়া। পরণে কোটপ্যান্ট থাকলেও তাকে দেখতে সাহেব সাহেব লাগছে না। লাগছে খেত-খামারে কাজ করা লোকদের মতো। ভেবেই নাক শিটকে ফেললো তোড়া। এমন এক লোকের পাশে বসে তার একদম ভ্রমণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মাঝেমাঝে সিগারেটের গন্ধে শরীর গোলাচ্ছেও।

"আপনি হামিদ স্যারের গেইস্ট?"
সিটে হেলান দিয়ে চোখজোড়া বুজে ছিল তোড়া। হঠাৎই মোটা পুরুষালী গলার স্বর কানে আসায় সোজা হয়ে বসলো সে। কালো কোট পরা লোকটিকে চিনতে খুব একটা কষ্ট হলো না তার। ইনিই খানিকক্ষণ আগে এসে টিকেট চেক করে গিয়েছিল। তবে কি রাগী চেহারার এই মানুষটিই টিটি?
"হামিদ স্যার আমায় কল করেছিল। আপনি ঈশ্বরদীতে নামবেন?"
লোকটির করা দ্বিতীয় প্রশ্নে নড়েচড়ে বসলো তোড়া। ঘাড় নেড়ে মৃদুস্বরে বললো,
"জ্বি.. আমিই দুলাভাইকে কল করেছিলাম। আসলে ব্যাগপত্র বেশি হওয়ায় আমার নামাটা কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ঈশ্বরদীতে ট্রেইন খুব কম সময় দাঁড়ায়। এরউপরে উঠেছি নরমাল বগিতে। লোকজনের ভীড় দেখে তাই কিছুটা ভয় হচ্ছিলো।"
"ভয়ের কিছু নেই। আমি আপনার নামার ব্যবস্থা করে দেব। আপনি না নামলে ট্রেইন ছাড়বে না।"
"থ্যাঙ্কিউ।"
এবারে লোকটি তোড়ার পাশে বসা লোকটির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন,
"আপনি সিগারেট খাচ্ছিলেন?"
"না.."
"তবে গন্ধ কীসের এখানটায়?"
"আমি কী জানি কে খাচ্ছিলো? এই বগিতে কি শুধু আমি একাই আছি?"
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে লোকটি আবারও তাকালো তোড়ার দিকে। তবে এবারে তার নজর বেশ নমনীয়।
"আপনি হামিদ স্যারের কী হন? শালিকা?"
"জ্বি।"
লোকটি বেশ উৎসাহের সাথে বললেন,
"আপনি আমায় আগে বলবেন না! আপনি হামিদ স্যারের শালিকা হয়ে নরমাল সিটে কেনো বসেছেন?"
"আসলে টিকেট পাইনি।"
"হামিদ স্যারকে বললেই হতো।"
"দুলাভাইকে এই টিকেট নিয়ে ফোন করাটা আমার খুবই অপছন্দের একটি কাজ।"
"আচ্ছা.. আপনি বরং আমার সাথে আসুন। আমি আপনাকে এসি রুমে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেই।"
"না, থাক। আমি এখানে ঠিক আছি। আপনি শুধু নামার সময় আমাকে সাহায্য করলেই হবে।"
"না না। তা কী করে হয়? আপনি স্যারের গেইস্ট। আপনি বরং একটু অপেক্ষা করুন। আমি সিট ঠিকঠাক করে আসি।"
গম্ভীর হয়ে ভাবনায় ডুবে পড়লো তোড়া। একমুহুর্তের জন্য মনে হলো খুব কড়া করে লোকটিকে নিষেধ করবে আগ বাড়িয়ে সাহায্য না করার জন্য। তবে পরমুহূর্তেই পাশে বসা লোকটির কথা ভেবে চেপে গেল সে। এই লোকটির সাথে আর এক মুহূর্ত নয়.. এক মুহুর্তও নয়।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Jan 26, 2022 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

দায় বন্ধনWhere stories live. Discover now