এক মুঠো গোলাপ ৫

10 1 1
                                    

এক মুঠো গোলাপ

___
একসপ্তাহ পরের ঘটনা । খুব তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছি ,আজ ক্লাস টেস্ট আছে । সব সাবজেক্টে ফিফটি মার্কস করে এক্সাম । প্রথমে এক্সাম হবে তারপর ক্লাস । গত রাতে আপুর ভীষণ জ্বর এসেছিল , প্রায় সারারাতই জেগে থাকতে হয়েছে ।  মধ্যরাত অবধি জল পট্টি দিয়েছি তারপর একটু ঘুমালে বই নিয়ে বসে পড়েছি। সময় কম অথচ সিলেবাস কমপ্লিট হয়নি । একমাস পরেই প্রি টেস্ট। পরীক্ষার নাম শুনলেই সারা গায়ে কাঁপুনি শুরু হয় আমার । ঘাড় ফেরাতেই দিন পেরিয়ে যায় । কি হবে, পরীক্ষায় কি লিখবো! আমার মত মিডিয়াম টাইপের স্টুডেন্ট দের মুখে এই এক কথা সবসময় ।
গরম পড়েছে বলে ক্লাস শুরু হয় সকাল আটটায় । পড়াশোনা করতে করতে চোখ লেগে এসেছিল বলে লেইট হয়ে গিয়েছে আমার ।
বাপি আজ সার্কিট হাউজে যাবেন এক সচিবের সাথে দ্যাখা করতে তাই গাড়ি করে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম না , যদিও বাপি ফোর্স করেছিলেন । বাট আমারই লজ্জা লাগে । বাপির গাড়ির চাইতে রিকশাই বেশি কম্ফোর্টেবল, কলেজ আর প্রাইভেট গুলোর জন্য ।
লেইট হবে বলে নাশতাটাও করতে পারিনি , ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু এক সেকেন্ড নষ্ট করার মত সময় নেই । আজ রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না । হাঁটতে হাঁটতে কান্না পেয়ে যাচ্ছে আমার । মোড়ের চা'য়ের দোকানটা পেরুতেই একটা পুরুষালি কণ্ঠের ডাক_
-- এ্যাই ঘুমন্ত রাজকন্যা কোথায় যাও তাড়াহুড়ো করে?
আমি ভাবলাম অন্য কাউকে ডাকছে, আমলে নিলাম না । এক ধাপ বাড়াতেই ফের ডাক, এবার নাম ধরেই_
-- এ্যাই সুপ্ত তোমাকেই তো ডাকছি । শুনতে পাও না?
পিছু ঘুরে দেখি নিদ্র । এই ছেলে আমাদের পাড়ায় করে কি?
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম , চায়ের কাপ রেখে একপ্রকার ছুটে আসলো সে ।
-- কাল রাতে হোয়াটস আ্যাপে নক দিলাম । রিপ্লাই করনি কেন?
-- ব্যস্ত ছিলাম ।
-- এতটুকু মেয়ে তোমার কিসের ব্যস্ততা হুমম?
এর উত্তরে আমি কিছুই বললাম না ।
-- আচ্ছা কোথায় যাচ্ছো?
-- কলেজে ।
-- কতদূর তোমার কলেজ? চলো আমি নামিয়ে দিই ।
-- নো থ্যাংক্স আমি যেতে পারবো ।
-- আভা তো সাড়ে সাতটায় বের হয়ে গিয়েছে । তুমি এত লেইট কেন? নিশ্চয়ই ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে তোমার ।
এবারে আমি ভাবলাম যেচে পড়ে রেখে আসতে চাইছে যখন , তা'হলে আমি আর অমত করি কেন?
আস্তে করে বললাম_
-- খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে । আপনি লিফট দিলে ভালো হয় ।
-- সেটাই তো বলছিলাম আমি । আচ্ছা দাঁড়াও বাইক টা নিয়ে আসি ।
মুচকি হেসে সে রাস্তা পার হয়ে বাইক আনতে গেল৷
কলেজে পৌঁছে দিয়ে "আমার কাজটা কিন্তু করে দিও" কথাটা বলতেও ভুললো না একদম ।
আমি মুখে একটা প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে সম্মতি দিলাম ।
___
কলেজ শেষে বন্ধুমহল নিয়ে জুস বারে এসেছি ।
ক্যাফেটা নতুন হয়েছে , আমরা না গেলে জমে নাকি!
তাছাড়াও পরীক্ষা ভালো হয়নি , এই কষ্ট ভোলাতে কিছু সময় আমোদ প্রমোদে থাকা জরুরী ।
ক্যাফেতে ঢুকেই ফাগুন ডিক্লেয়ার করে দিলো আজকে ওর পক্ষ থেকে ট্রিট।  যার যা খেতে মন চায় তাই যেন অর্ডার করে । আমার বন্ধুরা হলো বিশ্ব খাদক , এমন গুড অপর্চুনিটি ফাঁকা ফাঁকা যেতে দিবে নাকি?
কোনোরকমে বসে শুরু হয়ে গেল তাদের অর্ডার দেয়া ।
আমি জেরিন আর আভা একসাথে বসেছিলাম । এক ফাঁকে জেরিন আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল_
-- ফাগুনটার লটারি লেগেছে নাকি? এত টাকা খরচ করতে চাইছে কেন পাগল টা!
ওর কথা শুনে দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করলাম_
-- তোর তা'তে কি?
-- বা' রে আমার বুঝি মানবিকতা নেই । এতটুকু একটা ছেলে এত টাকা খরচ করবে আমি একটু খোঁজ নিবো না!
-- আচ্ছা! তোর এত কষ্ট হচ্ছে তো তুই বিলটা দিয়ে দে ।
-- আমার কাছে তো বেশি টাকা নেই । আচ্ছা দাঁড়া তো দেখি ব্যাগে থাকলেও থাকতে পারে ।
আমার কথা না শুনেই ও কাউন্টারের দিকে চলে গেল । ওর সিরিয়াসনেস দেখে আমি শিওর হলা ম ফাগুনকে ও পছন্দ করে ।
অন্যদিকে আভা পাশে বসেই উশখুশ করছে , সাজিদের সাথে ইশারায় কথা বলছে ।  আমার মনে হলো ওদেরকে কথা বলার সুযোগ  দেয়া উচিৎ । আমি আভার কাঁধে হাত রেখে বললাম, সাজিদের পাশে গিয়ে বস ।
আভা চকিতে আমার দিকে তাকালো । আমি হেসে মাথা নাড়লাম । ও ভীষণ খুশি হয়ে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো সাজিদের কাছে ।
টেবিলে একাই বসে রইলাম আমি । কাঁচে ঘেরা ক্যাফেটায় বসলে বাইরের সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় । 
ব্যস্ততম রাস্তাটায় অনিমেষ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মনে পড়ে গেল, একদিন প্রিয় বলেছিলো ও আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে সিলেট । ওখানে ওর পরিচিত এক দাদা আছেন , তার থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে একটা ক্যাফে খুলবে ।
প্রথম প্রথম ও রান্নাবান্না করবে , কিছুদিন পর যখন অনেক নামডাক হয়ে যাবে তখন কর্মচারী রেখে দিবে । ও শুধু ক্যাশ কাউন্টারে বসে টাকা গুনবে আর আমার সাথে প্রেমালাপ করবে ।
ওর কথাবার্তা শুনলে আমার খুব হাসি পেতো। কড়া শব্দে রিপ্লাই দিলেও ফোনের এপাশে আমি ঠিকই হাসতাম।
-- কি ভাবছো সুপ্ত?
ফাগুনের ডাকে আমার ধ্যান ভাঙলো । মাথা নাড়িয়ে বললাম_ কিছুনা ।
-- আমি কি বসতে পারি এখানে?
-- শিওর । বসো ।
-- থ্যাংকিউ ।
ফাগুনের সাথে টুকটাক কথা হলো আমার । এর মাঝেই জেরিন চলে আসলো । ফাগুনকে আমাদের সিটে দেখে ও বোধহয় খুশিই হলো একটু । চমৎকার হেসে সেও গল্পে যোগ দিলো । আমি আবারও কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম । 
আমার কল্পনায় এবার আর প্রিয় আসলো না  ,আসলো নিদ্র ।  নিদ্র'র দেয়া ঠিকানার কথা মনে পড়ে গেলো। আ্যাপ্রোনের পকেট থেকে ফোন বের করে ডাটা কানেকশন অন করতেই ননস্টপ মেসেজের টিউন বাজতে শুরু করলো । ফেইসবুক , হোয়াটস আ্যাপ কোথাও মেসেজ দিতে বাকি রাখেনি ছেলেটা । এত অস্থির হয়ে আছে কেন?
খানিক বিরক্ত হয়ে হোয়াটস আ্যাপ চেইক করলাম । ঠিকানাটা পরিচিত মনে হলো । আমাদের পাশের পাড়াতেই তো । কিন্তু মনে করতে পারছি না কার ঠিকানা এটা । ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলাম কিন্তু নাহ্ মনেই পড়ছে না নামটা । পরে জেরিনকে দেখালে সে বলল _ "আরেহ্ এটা তো আমাদের মিউজিক টিচার অর্পিতা আপুর ঠিকানা" তুই কোথায় পেলি?
-- আমার একটা ফ্রেন্ড দিয়েছে ।
-- গান শিখবে বুঝি?
-- হুম ।
আমি আর এ ব্যাপারে কথা বাড়ালাম না ওদের সাথে । অর্পিতা আপু'র খোঁজ নিয়ে কি করবে এই ছেলে?
রিপ্লাইয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম , "এটা তো অর্পিতা আপুর আ্যাড্রেস । আপনি কি করবেন তার আ্যাড্রেস দিয়ে"
দু মিনিট বাদে রিপ্লাই আসলো_
-- তুমি নিয়ে যাবে আমাকে । প্লিজ?
-- বাট উনি আপনার কে হয়?
-- আগে নিয়ে চলো তারপর বলবো ।
-- ওকে ফাইন আজ বিকেল পাঁচটায় আমাদের বাসার গলিতে আসবেন আর হ্যাঁ গাড়ি নিয়ে আসার দরকার নেই আমাদের পাশের পাড়া । হেঁটে যেতে হবে ।
-- ওকে থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ..
থ্যাংকিউ এর বন্যা বইয়ে দিয়েছে একদম । আমি ছোট্ট করে রিপ্লাই দিলাম "ওয়েলকাম" তারপর ডাটা অফ করে বন্ধুদের আড্ডায় যোগ দিলাম ।
আমাদের আড্ডাবাজী শেষ হলো তিনটার দিকে ।
আমাদের সবার বাসা প্রায় পাশাপাশি পাড়ায় তাই সবাই একসাথেই হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরলাম ।
বাসার গলিতে এসে ফাগুন আমার হাতে এক মুঠো লাল গোলাপ ধরিয়ে দিলো । গোলাপ আমার পছন্দ নয় তা সত্বেও ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম । কেউ ভালোবেসে কিছু দিলে গ্রহণ করতে হয় ।
আমি জানি ফাগুন আমাকে পছন্দ করে  , ব্যাপারটা দুঃখজনক । ওর জন্য আমার মনে কোনো অনুভূতি নেই , খারাপ লাগে । ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে কেবল কষ্টই পাবে ।
___
নিদ্র ভীষণ পাংচুয়াল মানুষ । ঠিকঠিক পাঁচটায় এসে আমাকে কল করলো। আমি তখন ঘুমে আচ্ছন্ন । শান্তির ঘুমটা ভেঙে গেল ফোনের রিংটোনেই । হাতড়ে ফোনটা টেনে নিয়ে রিসিভ করে ঘুমুঘুমু গলায় প্রশ্ন করলাম, কে?
ওপাশ থেকে ভারী অবাক গলায় পাল্টা প্রশ্ন আসলো, তুমি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছ? আমি তোমার বাসার গলিতে দাঁড়িয়ে ।
ফোনের ওপাশে নিদ্র'র গলা শুনে খুব বিরক্তবোধ করলাম আমি কিন্তু কথা দিয়ে ফেলেছি । কথার খেলাফ করা আমার ধাতে নেই । তাকে আর পাঁচমিনিট ওয়েট করতে বলে ফোন রেখে দিলাম ।
ফ্রেশ হয়ে এসে ওয়ারড্রোব খুলে দেখা গেল আমার একটা কাপড়ও আয়রন করা নেই, কেবল একটা সাদা কামিজ ছাড়া। মেজাজ দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেল । ইউজুয়ালি কামিজ আমি পরিনা , আমার পছন্দ না । ওড়না সামলাতে কষ্ট লাগে বিধায় ফতুয়া টাইপের ওয়ান পিস গুলো স্কার্ফ পেঁচিয়ে পরা হয় । কিন্তু আজ যেহেতু কাপড় নেই তাই কামিজ পরেই যেতে হবে ।
এটাও খারাপ না , সাদা জমিনে আকাশি রঙের ছাপা নকশা বেশ সুন্দর ।
উপায়ান্তর না পেয়ে এই কাপড়টাই পরে নিলাম সাথে আপুর কটনের একটা ওড়না , প্যান্ট ।
এলোমেলো চুলে কোনো রকমে চিরুনি চালিয়ে কাটা দিয়ে আটকে ফোন নিয়ে বেরুলাম । মা জিজ্ঞেস করলে মিথ্যেমিথ্যি বলে দিলাম জেরিনের বাসায় ইম্পর্টেন্ট নোটস নিতে যাচ্ছি ।
.
নিদ্র গলির মোড়েই দাঁড়িয়ে ছিলো গাড়ি নিয়ে । আমি যেতেই চোখ ছোট ছোট করে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো_
-- এই তোমার পাঁচ মিনিট!
-- ঘুমুচ্ছিলাম আমি ।
-- এত ঘুম কেন তোমার ।
-- আরে বাদ দিন তো । আপনাকে যে বললাম গাড়ি নিয়ে আসার দরকার নেই তবুও গাড়ি নিলেন কেন?
-- হাঁটতে ইচ্ছে করছে না আমার । এত কথা বাদ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসো তো ।
ওনার ধমক খেয়ে নাক মুখ কুঁচকে একরাশ গালি দিতে দিতে গাড়িতে উঠে বসলাম ।
কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছুতে বেশি একটা দেরি হলো না আমাদের কিন্তু গিয়ে শোনা গেলো ঐ বাসায় ওরা আর থাকেনা ।
এই কথা শুনে নিমেষেই মুখ কালো হয়ে গেল নিদ্র'র । বাসাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম , ওনারা এখন কোথায় থাকে জানে কি না!
উনি ঠিকঠাক বলতে পারলেন না কিন্তু পাশের আ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা জানে এ কথা বললেন ।
একটু আশার আলো দেখা গেল । কিন্তু পাশের আ্যাপার্টমেন্টের মহিলা বাচ্চাকে ড্রয়িং স্কুলে নিয়ে গেছেন । ফিরবেন রাতে ।
এখন কি করা যায়? জিজ্ঞেস করলাম নিদ্রকে । বিষণ্ণ মুখে সে বলল_ অপেক্ষা করি প্লিইজ?
আমি সম্মতি দিলাম । তার উৎকণ্ঠা দেখে অর্পিতা আপুর সাথে সম্পর্কটা ধারণা করে নিলাম আমি , মুখোমুখি হলে সত্যতা নিশ্চিত করার পালা ।
ভদ্রমহিলা যথারীতি সন্ধ্যার একটু পরপরই বাড়িতে ফিরলেন । তাকে দেখামাত্র নিদ্র ছুটে গিয়ে অর্পিতা আপুর ঠিকানা জানতে চাইলো । হুট করে অপরিচিত একটা ছেলে এসে নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করায় মহিলা একটু ভড়কে গেলেন । তিনি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে একবার নিদ্র'র দিকে একবার তাকাতে থাকলেন । পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম আমরা ওনার ফ্রেন্ড হই । প্রমাণ স্বরূপ নিদ্র তার ফোনে অর্পিতা আপুর সাথে ছবিও দেখালো । ভদ্রমহিলা বিশ্বাস করলেন এবং আমাদের বাসার ভেতর নিয়ে বসালেন ।
কম সময়ে ফ্রেশ হয়ে এসে মুখোমুখি সোফায় বসলেন উনি । এবার আমিই আগ্রহ চেপে রাখতে পারলাম না , সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম তাকে ।
জবাবে একটা শকিং নিউজ পাবো তা কল্পনাতীত ছিলো ।
অর্পিতা আপু ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত । লাস্ট স্টেইজে আছেন এবং বাসা চেইঞ্জ করাটা নাটকীয় ভাবে দ্যাখানো হয়েছে । মূলত ওনার হাজবেন্ড অরিন্দম দা ওনাকে নিয়ে চেন্নাই গিয়েছেন ।
বাসা চেইঞ্জের ব্যাপারটা মিথ্যেমিথ্যি বলা হয়েছিল কারণ অর্পিতা আপু বলেছিল তার একটা পাগল ফ্রেন্ড তার খোঁজ করতে আসবে একদিন কিন্তু সে যাতে কোনোভাবেই আপু অবধি পৌঁছুতে না পারে, এজন্য এই ব্যবস্থা ।
ভদ্রমহিলাকে বলতেন না কিন্তু উনি বেশি ক্লোজ হওয়ায় কথার ফাঁকে বলে দিয়েছেন ।
এবার আমি শিওর হয়ে গেলাম আপুর পাগল ফ্রেন্ড আর কেউ নয় আমার পাশে বসে থাকা সুদর্শন এই যুবক ।
আমি নিদ্রর দিকে একবার তাকালাম , কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে সে ।
আমি তার আগে আলতো স্পর্শ করলাম , সে আমার মুখের দিকে তাকালো । টুকটুকে লাল চোখে জলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে ।
কিছু বলবার জন্য ঠোঁট নড়ানোর পূর্বেই সে উঠে দাঁড়ালো , বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলো "সব আমার জন্য, সব আমার জন্য .. সব!"
বাতাসের বেগে বেরিয়ে গেলো সে বাসা থেকে । ভদ্রমহিলা আবারও অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে । আমি এটাসেটা বুঝিয়ে ওড়না গলায় জড়িয়ে বেরিয়ে আসলাম ।

__
এরপরের ঘটনা খুব সাধারণ । রাত আটটা পর্যন্ত আমি নিদ্রর পিছু পিছু ঘুরে তাকে ডাকতে থাকলাম কিন্তু কোনো জবাব সে দিলোনা , একবারও না । শেষে হাল ছেড়ে দিতে হলো আমায়। একবার ভাবলাম চলে যাবো কিন্তু জানিনা কেনো তাকে একা ছাড়তে ইচ্ছে হলো না।
ছন্নছাড়া নিদ্র তার কল্পনার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে সেনপাড়ার গলি থেকে বেরিয়ে
ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলো , উদ্দেশ্যেহীন । 
কিছুদূর যাওয়ার পর ধপ করে বসে পড়লো এক জায়গায়।  আমি ছুটে গেলাম তার পাশে ।
সে মাথা নিচু করে কাঁদছে । আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার পাশে বসলাম । নিঃসংকোচে তার কাঁধে হাত রাখলাম , আমার আলতো স্পর্শে সে মাথা তুলে তাকালো । রক্তিম মুখটা এক পলক দেখার ভাগ্য হয়েছিল আমার - কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার কাঁধে মাথা রাখলো সে । বুকের ভেতরটা ধক্ করে উঠলো আমার । শুকনো ঢোক গিলে ডান হাতটা তার মাথার ওপর রাখলাম ।
গুমরে কেঁদে উঠলো ও । এর আগে ছেলেদের কান্না দেখিনি আমি । তার অসহায়ত্ব আমাকে দূর্বল করে দিলো । ভেতরটা ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেল আমার । উতলা হয়ে উঠলাম তার কান্না থামাতে , কিন্তু এই উতলাপনা সব মনের ভেতর ।
কত সময় এভাবে অতিবাহিত হলো জানা নেই আমার ।
সময়ের সাথে তার কান্নার বেগ বেড়ে গেল ।
রাস্তার ধারে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোর দিকে শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকালাম আমি । আচমকা কয়েকটা কথা মস্তিষ্কে তীব্রভাবে নাড়া দিয়ে গেল , মানুষটার সাথে আমার কত মিল! আমাদের বিচ্ছেদের ধরনটা ভিন্ন হলেও অনুভূতিগুলো এক । ঠিক যেভাবে আমি ভেতর থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছি , সেও তেমনি ভাবে ভেতর থেকে ভাঙা । সৃষ্টিকর্তার কোনো ইশারা হতে পারে কি?
চকিতে দৃষ্টি ফিরিয়ে ঘুরে বসলাম তার দিকে । তার একটা হাত নিজের দু হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে সিদ্ধান্ত নিলাম , এই হাত আর কখনোই ছেড়ে দেবো না আমি । মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এই মানুষটার পরিপূরক হয়ে কাটাবো ।
ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া মনটাকে সযতনে সাজাবো আবার ।
এই মানুষটা আজ থেকে শুধুই আমার , শুধুই আমার ।
সেদিনের সেই অবাক সন্ধ্যেবেলা আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটালো । আমার স্বঘোষিত আপনি থেকে তুমিতে রূপান্তর করে নেবার সূচনা ।
চলবে?
sinin tasnim sara

এক মুঠো গোলাপNơi câu chuyện tồn tại. Hãy khám phá bây giờ