চিরসাথী

10 2 0
                                    

মেইন রোডের ওপর দিয়ে বেশ জোরেই স্কুটি চালাচ্ছে কৌশিকী আর পেছনে বসে ওর বান্ধবী রিধিমা। রিধিমার সাথে একটা কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করেনি সামনে একটা বাইক আসছিল। ব্যাস্! লাগল ধাক্কা! স্কুটি আর বাইক দুটোই তাদের আরোহী সমেত রাস্তায় কাত হয়ে পড়ল। যে ছেলেটা বাইক চালাচ্ছিল সে আর কৌশিকী দুজনেই উঠে রেগেমেগে একে অপরকে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু দুজন দুজনকে দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে গেল। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেনা। দুজনে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন কত দিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
রিধিমা :- ইন্দ্র দা!
হঠাৎ কথাটা কানে আসতেই দুজনের হুশ ফিরল। দুজনে একে অপরের থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
ইন্দ্র......আই পি এস অফিসার ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। লম্বা, জিম করা চেহারা, খুব ফর্সা নয় তবে সুদর্শন। তবে ওর যে বৈশিষ্ট্য টা সবচেয়ে আকর্ষণীয় তা হল ওর সমুদ্রের মত নীল চোখ।
কৌশিকী দত্ত........দত্ত গ্রুপ অফ কম্পানিস এর মালিক রাঘব দত্ত এর একমাত্র মেয়ে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, একঢাল লম্বা চুল, গভীর চোখ আর স্বভাবে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। সদ্য একটা নামকরা স্কুলে ইংলিশ টিচার হিসেবে জয়েন করেছে। রিধিমা ছোটোবেলা থেকেই ওর বেস্টফ্রেন্ড।
কৌশিকী :- কেমন আছো ইন্দ্র দা?
ইন্দ্র :- ভালো আছি রে। তুই কেমন আছিস? কতদিন পর দেখা হল!
কৌশিকী :- আমিও ভালোই আছি। তা মিস্টার আই পি এস দিল্লি ছেড়ে এখানে? ছুটিতে এসেছ নাকি?
ইন্দ্র :- না রে। আমার এখন কোলকাতায় পোস্টিং হয়েছে।
কৌশিকী :- বাহ খুব ভালো।
ইন্দ্র :- (মলিন হেসে)তুই তারমানে আমার সব খবরই রেখেছিস। ছার বাদ দে.... তা এখন কোনো জব করছিস নাকি?
কৌশিকী :- হ্যাঁ, নিজের স্বপ্নটা পুরণ করেছি।
ইন্দ্র :- (হেসে) ওহ! দিদিমণি?
কৌশিকী :- হুম। একটা স্কুলের ইংলিশ টিচার হিসেবে জয়েন করেছি রিসেন্টলি। আর কিছু টিউশন ও করছি।
ইন্দ্র :- কাকু তোকে জব করতে দিল তাহলে?
ম্লান হাসল কৌশিকী।
রিধিমা :- আমাকে বোধহয় একজন ভুলেই গেছে। পাত্তাই দিচ্ছে না!
ইন্দ্র :- (মুচকি হেসে) না রে তোকে ভুলতে পারি? কেমন আছিস রিধি?
রিধিমা :- ভালো আছি গো।
কৌশিকী :- দেখেছ! কথায় কথায় খেয়ালই নেই! সরি ইন্দ্র দা। আসলে আমি রিধিকে একটা কথা বলতে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেল।
ইন্দ্র :- ইটস ওকে। তেমন কিছুই হয়নি। সরি তো আমার বলা উচিত। তোর স্কুটিটা বোধহয় খারাপ হয়ে গেল।
কৌশিকী :- ও এমন কিছু না। আজ তাহলে আসছি ইন্দ্র দা। স্কুটিটা সারাতে দিতে হবে তো।
বলেই স্কুটিটা তুলে নিয়ে এগোতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই ইন্দ্র ওকে 'কুশ' বলে ডেকে উঠল। এতবছর পর চেনা ডাকটা কানে আসতেই থমকে দাঁড়ালো কৌশিকী। চোখের জল টা অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে পেছন ফিরল।
কৌশিকী :- কিছু বলবে?
ইন্দ্র :- কাকু কী তোকে আমার সাথে যোগাযোগ করতেও বারণ করে দিয়েছিল? আমি তোকে অনেক বার ফোন করেছিলাম কিন্তু ধরিসনি আর নিজেও ফোন করিসনি। মাঝে মাঝে একটু ফোনে কথা বললেও কী কাকু রাগ করত? নাকি কাকু ভয় পেয়েছিল যে আমি তোকে ছিনিয়ে নিয়ে আসব।
কৌশিকী :- পুরনো কথা থাক না ইন্দ্র দা।
ইন্দ্র :- ঠিক ই বলেছিস। পুরনো কথা। তাই জন্যই আজ তুই আমায় নীল দা না বলে ইন্দ্র দা বলে ডাকছিস। তুই ভুলে গেছিস একদিন তুই ই বলেছিলি যে 'সবাই তোমায় ইন্দ্র বলে ডাকে তাই আমি তোমায় ইন্দ্র দা বলব না নীল দা বলে ডাকব'?
কৌশিকী :- কখনো কখনো পুরোনো অভ্যাস গুলো পাল্টে ফেলতে হয় ইন্দ্র দা। নাহলে বেশি কষ্ট হয়। আসছি গো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ইন্দ্র :- হুম। ঠিক বলেছিস। অনেএএএক টাই দেরি হয়ে গেছে।
দুজনেই চোখের জল টা লুকিয়ে মুছে নিয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেল।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Feb 23, 2023 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

 বাংলা প্রেমের ছোটো গল্প সমূহ Where stories live. Discover now