অবাক হয়ে গেলাম বিলুকে দেখে। আজকাল চুল ব্লন্ড করানোর একটা চল উঠেছে ঠিকই, কিন্তু সবাইকে সেটা মানায় না। বিশেষ করে বিলুকে তো নয়ই। অত্যন্ত গোবেচারা টাইপের দেখতে বিলুকে। স্বভাবও সেরকম, তাই চোখে মুখেও সেটা ধরা পড়ে। এহেন ছেলেকে ব্লন্ড চুলে দেখে বাকিদের কি অবস্থা হবে জানিনা, তবে আমাদের তো বেশ মজা লাগলো। বিলু বোধহয় ভেবেছিল স্টাইলে তাক লাগিয়ে দেবে, বদলে হয়ে উঠল হাসির পাত্র।
" ওসব কি আমাদের সাজে, যাদের নরমালি ওরকম চুল তাদেরকেই মানানসই লাগে। আর না হলে কোনো বিদেশি ফুটবলার যদি করে।" রাহুল বললো। " কেন আমরা করলে কী দোষ?" জিজ্ঞেস করল বিলু।
-" আরে বাবা তুই বুঝছিস না ব্যাপারটা।" রাহুল বলল।
-" বুঝিয়ে দে তাহলে।"
-" আয়নায় দেখ বুঝে যাবি।" রাহুলের কথায় আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। বিলুর মুখ কাঁচুমাচু হয়ে গেল।আমরা চার কলেজ পড়ুয়া বন্ধু গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম। আমি, বিলু, রাহুল আর তাতাই। আমরা ছোটবেলার বন্ধু, এখন আলাদা কলেজে পড়লেও একই পাড়ায় থাকি বলে বন্ধুত্বটা এখনো অটুট আছে। পুজোর ছুটিতে সবাই বাড়ি এসেছি। আমাদের বাড়ি হাওড়া তে। এখন শরৎকাল, বিকেলে রূপনারায়ণ নদীর ধারে মনোরম হাওয়া বইছে। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়েই গেছে এই নদী, তাই মাঝে মাঝেই আমরা হাঁটতে আসি এদিকটায়।
আমি আর রাহুল টুকটাক গল্প করতে করতে চলেছি। বিলু ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটু পিছনে আসছে। তাতাইকে দেখলাম অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। বিলু আসা থেকেই দেখছি, ওকে কেমন অন্যমনস্ক লাগছে। আমরা এবার দাঁড়িয়ে পড়লাম। রাহুল বলল, " কিরে তাতাই, কি হলো?" একটু জোরেই জিজ্ঞেস করল রাহুল। তাতাই আমাদের থেকে প্রায় ২০-৩০ হাত পিছনে। বিলুও দাঁড়িয়ে পড়েছে এবার। তাতাই একবার আমাদের দিকে দেখলো, তারপর আস্তে আস্তে কী একটা বলে, আমাদের অপেক্ষা না করেই রাস্তা থেকে নেমে, ঘাস জমির উপর দিয়ে হাঁটতে লাগলো। আমরা ওর পিছু পিছু চলতে শুরু করলাম। নদীর একেবারে কাছাকাছি গিয়ে চারজন বসলাম। একটু উসখুশ করছিল তাতাই। সাধারণত গ্রামের মধ্যে সিগারেট খায় না ও, পাছে চেনা কেউ দেখে ফেলে। কিন্তু আজ ধরাল একটা। বললো, " আজ বিলুকে দেখে পুরনো একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।"
"কী ঘটনা?" রাহুল বললো।
-" শোন তাহলে।"
আমরা জড়সড় হয়ে বসলাম। তাতাই বলতে শুরু করলো....
YOU ARE READING
তাতাইয়ের স্মৃতি
Short Storyবিলুকে ব্লন্ড চুলে দেখে হঠাৎ কোন ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো তাতাইয়ের?