প্লেমেইট

9 0 0
                                    

- "যতদিন এই বাড়িতে ছিলাম, ততদিন চিলেকোঠার এই ঘরে তালা ঝুলিয়েই রেখেছিলাম। আজও খুলতাম না, নেহাৎ আপনাদের জোরাজুরি'তেই খুলতে হল।"
- "মিস্টার বসু, আপনি তো জানেন আমি একজন স্টুডেন্ট। শান্তিতে পড়াশোনা করতে চিলেকোঠার এই নিরিবিলি ঘরটা আমার নিতান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া ওই পেন্টিং নিয়ে আপনারা যখন এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তখন ওইটা নিজের সঙ্গেই নিয়ে যান না! আমাদের কোনও আপত্তি নেই।"
-"না না!" বিটকেল বুড়োটার মুখটা যেন মুহূর্তে ছাইয়ের মতো সাদা হয়ে গেল, "যেই বিভীষিকার তাড়নায় আমাদের এত পুরনো পৈতৃক বাড়িটা জলের দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি, সেই অভিশাপ নিজের সঙ্গে বয়ে বেড়াব? ইম্পসিবল্!"

**************

দিব্যি দশদিন কেটে গেছে। কিছুই অস্বাভাবিক টের পাইনি। যত্তসব বোগাস! মিথ্যেবাদী বুড়োটার উপর মাঝে-মাঝে ভারি রাগ হতো। এত সুন্দর তৈলচিত্রটা নাকি অভিশপ্ত! পুকুরপাড়ে বসে আছে এক এলোকেশী বিদেশিনী। কোলে তার বছর দুয়েকের শিশু। বাচ্চার ডান হাতে একখানা সবুজ বল, আরেক হাতে রয়েছে একটি ঝুমঝুমি। কী সুন্দর মুখশ্রী বাচ্চাটার! নিষ্পাপ চোখদুটো সমুদ্রের মতো গভীর নীলবর্ণ। এক পলকের জন্য সেই চাঁদপানা মুখ দেখলে প্রাণটা যেন জুড়িয়ে যায়।

রাত তিনটে বাজে। কাল একটা চাকরির পরীক্ষা আছে। চিলেকোঠায় বসে এক মনে অঙ্ক কষে চলেছি। আচমকা একটা শব্দে চমকে উঠলাম। খুব হালকা অথচ মিষ্টি এক শব্দ। কিন্তু ঘরের ভিতরে তো তেমন কিছুই অস্বাভাবিক চোখে পড়ল না। আওয়াজটা কি তবে বাইরে থেকে আসছে? কানে মধু ঢালা সেই ছন্দবদ্ধ সুরেলা ঝুম-ঝুম শব্দে কী যে এক গাঢ় মাদকতা মিশে ছিল....আমি নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।

কতক্ষণ পর চোখ খুললাম মনে নেই। আরে! এ আমি কোথায় এসে পড়েছি? উফ্! মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে। নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে চতুর্দিক ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার পর বুঝলাম, এইটা সম্ভবতঃ আমার চিলেকোঠার স্টাডি রুমটাই। কিন্তু....কিন্তু সবই কেমন যেন অচেনা ঠেকছে। কোথায় সেই সিমেন্টের শক্ত মেঝে? মনে হচ্ছে ফ্লোরটা কাঠের তৈরি। শুধু ফ্লোর'টাই নয়, দেওয়ালগুলো পর্যন্ত কাঠের। ঘরে আমার নিজস্ব একটাও ফার্নিচার নেই। পুরনো আমলের আসবাবপত্র দিয়ে ঘরটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো। ঠিক মনে হচ্ছে যেন আমি প্রায় একশো বছর আগেকার সময়কালে এসে উপনীত হয়েছি।

প্লেমেইটWhere stories live. Discover now