[সম্পূর্ণ পর্ব একসাথে।]

7 0 0
                                    

শফিকের বাড়ির উঠোনে ডাকপিয়ন রহমত দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন ধরেই ভাবছে শফিকদের বাড়িতে শফিকের চিঠিটা দিয়ে আসবে। রহমত ঘোর লাগা মাথা নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছে চিঠিটা ঠিক কবে দেওয়া যায়। শেষে এসে ঠিক করলো আজ বিকালের দিকেই শফিকের বাড়িতে যাবে। 

শফিকের বাড়িতে যেয়ে ডাক দিলে শফিকের তিনবছরের মেয়েটা ঘর থেকে বের হয়ে আসে। মেয়েটার পিছু শফিকের বউ ঘর থেকে বের হয়। শফিকের বউয়ের নাম মহুয়া, মেয়ে হিসেবে মহুয়া যেমন রূপবতী তেমন ভদ্র একটা মেয়ে। রহমতকে দেখে মহুয়া বলে চাচা আপনি হঠাৎ, কি মনে করে। রহমত বলে আসছি মা একটা কাজে। মহুয়া রহমত চাচার জন্যে এক গ্লাস পানি আর কিছু বিস্কিট একটা প্লেটে দেয়। রহমত শফিকের মেয়েকে কাছে ডাকে, মেয়েটার চোখ জোড়া একেবারে শফিকের মতো, সৌন্দর্য্যের দিক থেকে মায়ের সৌন্দর্য পেয়েছে, শুধু চোখের দিক থেকেই শফিকের মতো চোখ।

রহমত চা খেতে খেতে মহুয়াকে ডাক দিয়ে বলে মা তোমার নামে একটা চিঠি আসছে। মহুয়া গলার স্বর উদাস করে বললো ‘চাচা কে চিঠি পাঠিয়েছে?’ রহমত কোনো কথা না বলে ব্যাগ থেকে চিঠিটা বের করে মহুয়ার হাতে দেয়।

মহুয়া দেখে সেই বাঁকা বাঁকা হাতের লেখায় চিঠির উপরে ‘শফিক’ নাম লেখা। মহুয়া চিঠির দিকে তাকিয়ে আর কান্না ধরে রাখতে পারে না। দুচোখ বেয়ে পানি ঝরে। রহমত চাচার সাইকেলের আওয়াজ শুনলেই মহুয়ার বুকের ভেতের ওলট পালট হতো, মহুয়া বুঝতো শফিকের চিঠি এসেছে শহর থেকে। যদি চিঠি আসতে দেরি হতো মহুয়া কতো যে অপেক্ষা করতো, পথের দিকে তাকিয়ে থাকতো। রাস্তা দিয়ে যদি রহমত আলীকে যেতে দেখতো মহুয়া জিগ্যেস করতো শফিকের চিঠি আসছে কিনা। সেই শফিকের চিঠি হাতে মহুয়ার তবে তাঁর শুধু বুকভেঙে কান্না আসছে, খাম খুলে চিঠিটা পড়তে ইচ্ছে করছে না। অন্যসময় হলে মহুয়া শফিকের চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলতো, শফিকের চিঠি পড়বার অপেক্ষা সে সইতে পারে না। চিঠি আসতে এমনিতেই দেরি করে, তাই চিঠি যখন হাতে পায়, হাতে পাওয়ার সাথে সাথে কয়েকবার পড়ে ফেলে।

মহুয়া আর শফিকের বিয়েটা প্রেমের। মহুয়ার বাবা ছিলেন এখানকার একটা মাদ্রাসার শিক্ষক, মেয়েকে তাই রক্ষনশীল ভাবে রাখতেন। শফিক ছিলো মহুয়ার থেকে দুবছরের বড়, একই কলেজে পড়তো। শফিক ভয়ে ভয়ে একদিন রাস্তায় মহুয়ার হাতে একটা চিঠি দেয়, প্রেমের চিঠি। মহুয়া এর আগে অনেক চিঠি পেয়েছে তবে এই শফিকের চিঠিটা পড়বার পরে সে যেনো বারবার মুগ্ধ হলো। একটা চিঠি গুনে গুনে সত্তর বার পড়েছে সে রাতে। মহুয়া শফিককে পরে একটা চিঠি লিখে সেই চিঠিতে শুধু একটা লাইনই ছিলো।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Feb 15 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

দুই কামরার ঘরWhere stories live. Discover now