। সেই রাত ।

16 1 0
                                    

ভূত বলে কিছু নেই এ বিষয়ে বিজ্ঞানও কোনো যুক্তিগত তথ্য দিতে পারিনি। তাই ভূত আছে না নেই সেই তর্কে না গিয়ে আমরা সবাই এখনো ভূতের সিনেমা দেখলে বা ভূতের নাম শুনলেই ভয় পায় এ কথা সত্য। একটি অভিজ্ঞতা থেকেই আমার এই মন্তব্য। সেদিন আমি কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। কলেজে ছুটি পড়েছে বেশ কয়েক দিনের জন্য। আমরা চারজন বন্ধু একসাথে ট্রেনে চাপি। ট্রেন থেকে নেমে দেখি অকাল বৃষ্টি ।স্টেশন থেকে একটা অটো করি আমরা। হঠাৎ মাঝপথে অটো গেল থেমে। রাত তখন সাড়ে এগারোটা। এমনিতেই ট্রেন দু ঘন্টা লেট ছিল। তার ওপর বৃষ্টি। সবকিছুই ঘটনার সাথে মিলে যাচ্ছিল।এই অবস্থায় অটো ঠিক হবে না বলে ড্রাইভার আমাদের জানিয়ে দিল। কিন্তু সারারাত তো অটোতে বসে থাকা যায় না। তাই চারজন মিলে ভিজে ভিজে হাঁটতে শুরু করলাম, যদি এগিয়ে গিয়ে কিছু ব্যবস্থা করতে পারি এই ভেবে। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখি আমাদের মত সামনে আরো চারজন জলে ভিজে ভিজে হাঁটছে। আমাদের একটু সাহস হলো। এই নির্জন রাস্তায়,কালো মেঘের অন্ধকারে রাত যেন ঘুটঘুটে কালো হয়ে গেছে ।এই অবস্থায় মানুষ দেখতে পাওয়া মানে সৌভাগ্যের কথা। আমরা ওদের জোরে জোরে ডাক দিলাম। ওরা প্রথমে দাঁড়ালো না। তারপর দাঁড়ালো। আমরা দৌড়ে ওদের কাছে এলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর বৃষ্টিটা ও নাজেহাল করে দিয়েছে।কারো মুখ দেখার মত উৎসাহ আর নেই ।মানুষ দেখতে পেয়েছি এটাই অনেক ।যাইহোক, ওদের জিজ্ঞাসা করলাম ওরা কোথায় যাচ্ছে।ওরা বলল গাড়ির খোঁজে যাচ্ছে। আমরাও ওদের সাথে এগোলাম। যেতে যেতে আমাদের সমস্যার কথা ওদের জানালাম।ওরা কিছু বলল না।ওদের সাথে গল্পের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করলাম ।ওদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলাম। আমরা কোনো ভুল সঙ্গ পেলাম না তো,তা জানার জন্য । কিন্তু ওরা চারজনই কোনো কথা না বলে শুধু হেঁটেই চলেছে। আমাদের সম্পর্কে কিছু জানার কৌতূহল ওদের দেখলাম না ।হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি ।এখন আর ওদের দেখে মনে হচ্ছে না যে ওরা আমাদের কিছু ক্ষতি করতে পারে। এখন পর্যন্ত একটা গাড়ি ও পার হতে দেখছি না। আর বৃষ্টি থামছে না। বাড়ি পৌঁছাতে আমাদের এখনো অনেকটা রাস্তা হাঁটতে হবে।আমাদের প্রায় সব কথাই ওদের আমরা বলেছি কিন্তু এতটা রাস্তা একসাথে এসেও ওদের সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পারলাম না। তিন ঘন্টা ধরে একটানা বৃষ্টিতে ভিজে আর চলার ক্ষমতা নেই। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই সময় একটু গরম চা হলে শরীরে বল পেতাম। ওই যে, বলতে না বলতেই দূরে একটা আলো দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ, একটা ছোট চায়ের দোকান। একেবারেই ফাঁকা। আমরা চারজন চা খেলাম কিন্তু ওরা খেলো না।এমনকি ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষাও করলো না ।এগিয়ে গেল। আমরা তাড়াতাড়ি চা খেয়ে আবার ওদের সঙ্গ নিলাম।এর থেকে ভালো সঙ্গ বোধ হয় এই রাতে আর পাওয়া যেত না । সত্যি ওদের এনার্জি দেখে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। একটানা এই বৃষ্টিতে হাঁটা কম ব্যাপার।ওদের দেখে আমরাও উৎসাহ পাচ্ছি । কিছুটা দূরে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম।সামনে এসে যা দেখলাম তাতে আমাদের হাঁটা সেখানেই থেমে গেল। আমরা পেছনে যে অটোটাকে ছেড়ে এসেছি সেই অটো। অটোর আলোতে সেই ড্রাইভারকে দেখলাম গাড়ির ভিতর বসে আছে আর তার মাথা থেকে গল গল করে রক্ত ঝরছে। আমরা ভয়ে একে অন্যের দিকে দেখতেই দেখি আমাদের সাথে যে আরো চারজন হাঁটছিল তারা আমরা ছাড়া অন্য কেউ নয় ।ওদের মাথা থেকেও গল গল করে রক্ত ঝরছে। আমরা পুরো ঘটনাটা বুঝতে পারলাম।ট্রেন থেকে নেমে অটো করে আসার সময় একটি ট্রাকের সাথে আমাদের অ্যাক্সিডেন্ট হয় এবং অটোচালক সমেত আমরা চারজন তখনই মারা যায়। অটোচালক মৃত্যুর পরও তার অটোটা ছেড়ে যেতে পারেনি ।আর আমরাও আমাদের বাড়ি ফেরার আশা নিয়ে কোনদিনও না ফিরতে পারার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছি। কিছুক্ষণ পর দেখি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে আমাদের বাড়ির লোকেরা আমাদের মৃতদেহ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ।এমন সময় অটোচালক তাড়া দিচ্ছে," দাদা যাবেন তো বসুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Apr 22 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

সেই রাতWhere stories live. Discover now