©সবিতা
সুজাতা আর দীপেনের সাথে পরিচয় করিয়েই আমি বিদায় নেব। কাহিনীটা আপনারা শুনবেন সুজাতার বয়ানে। আপাতত, ওদের সাথে পরিচয়টা করিয়ে দিই। দীপেন এখন বিদেশী ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার। কর্মদক্ষতার জন্য আরও দু’বছর এক্সটেনশন পেয়েছে। সার্টিফিকেটের বয়স দু বছর কমানো। কিন্তু আসল বয়স তো ষাট! সুজাতার সাথে বয়সের ফারাক চোদ্দ বছরের। সে হিসেবে সুজাতা এখন পঁয়তাল্লিশ।
এমনিতে ওরা সুখী দম্পতি। একমাত্র ছেলে গৌরব বরাবরই লেখাপড়ায় চৌকশ। তবে এতটা যে চৌকশ , ওরা ভাবতে পারেনি। গৌরব যখন আই আই টি খড়গপুরে চান্স পেয়ে গেল, ওরা অবাক। আর একটা সেমেস্টার পার হয়ে গেলেই, চাকরীর দরজা খুলে যাবে। ক্যাম্পাসিং-এ একটা বহুজাতিকে সিলেক্টেড হয়েছে। তবে তাকে আমেরিকা চলে যেতে হবে। গৌরবের ইচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সে আই আই এম- এ পড়বে। তারপর হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে। একমাত্র ছেলের স্বপ্ন সফল করার জন্য দীপেনের কোনও কার্পণ্য নেই। ফলে ছেলের শিক্ষা, চাকরী,-- এসব নিয়ে অন্য মা-বাবার মত চিন্তা তাদের নেই।
কিন্তু সমস্যাটা অন্যত্র। সেটা ওদের শরীরী সম্পর্কে। সুজাতা দেখতে সুন্দরী। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। দীপেন তখন ছিল সরকারী ব্যাঙ্কের ক্লার্ক। সংসারের বোঝা বইতে গিয়ে, বিয়ের বয়স পিছিয়ে পড়েছিল। দুই বোনের বিয়ে, ছোট দুই ভাইকে পড়ানো, তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো অবধি তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তাই ইংরেজিতে সদ্য এম এ পাশ করা সুজাতার জন্য যখন সরকারী ব্যাঙ্ক কর্মী দীপেনের আলাপটা এল, সুজাতার বাবা এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। সুজাতার মধ্যেও দ্বিধা ছিল। বয়সে পনেরো বছরের বড় ছেলেকে বিয়ে করবে, নাকি সরকারী চাকুরে বরের আর্থিক নিশ্চয়তায় জীবনটা কাটাবে। সারা জীবন বেসরকারি চাকুরে বাবার আর্থিক সংকটের ছায়ায় বড় হয়েছে বলে, সব দ্বিধা ঝেড়ে, দীপেনকেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। বিয়ের দু বছরের মাথায় দীপেন পরীক্ষা দিয়ে অফিসার হয়ে যায়। আর এর মধ্যে গৌরব এস গেছে ওদের জীবনে। সুখ যেন চুইয়ে পড়ছে ওদের জীবনে।