একটি নীল শার্ট ও তার গল্প ~~ সৈ য় দ কা ম রা ন আ হ মে দ

967 17 30
                                    

একটি নীল শার্ট ও তার গল্প ~~~~~~ সৈ য় দ কা ম রা ন আ হ মে দ

এখন দুপুর। মাথার উপর দাড়িয়ে আছে যেন এক অগ্নি দৈত্য। মাথাটা বুজি এবার ফাটিয়ে দিল! শালার! ক্যাপটাও আজ আনা হয়নি। কলেজ থেকে বের হয়েছে আধ ঘন্টা আগে। রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষ পর্যন্ত এই মাথা ফাটানো রোদের মধ্যে হাটা শুরু করে রুমান। মেয়ে হলে ভাল হত। ওরা আবার চট্ করে রিকশাও পেয়ে যায়। ওইতো একটু আগে একটা খালি রিকশাকে যেতে দেখে ডাকল, কিন্তু যাবেনা বলল। অথচ রুমান দেখল কিছু দুর গিয়ে দুটি মেয়ের ডাকে থামল, মেয়ে দুটিকে তুলল। শালা। মেয়ে দেখে ভাব ধর, না? যেন মেয়েদের জন্যই রিকশা, ছেলেদের কে ঠেকায় পরে তুলে। কিন্তু এখন উপায়। রুমান সিদ্ধান্ত নেয়, পরিচিত কাউকে রিকশায় দেখলে টুপ করে উঠে পরবে, নো ফরমালিটি। যদিও এ ব্যাপারটা সব সময় সে এড়িয়ে চলে।
-রূমান ভাই!
পেছন দিক থেকে ডাক শুনতে পায়, ঘুড়ে তাকায় সে।
একটি বোরকা পড়া মেয়ে। একটুতো অবাক হয়ই। এক, মুখ না দেখার কারনে চিনতে পারছে না, দুই,কলেজের পরিচিত কেউ বলেও মনে হচ্ছে না। নিজ স্থানে দাড়িয়ে থাকে সে। কাছে আসুক, দেখা যাক চেনা যায় কিনা।
-'আপনাকে আজ এক সপ্তাহ ধরে খুজঁছি। বাড়িতেও পাইনা, কলেজেও না, থাকুন কোথায় বলুনতো?'
কন্ঠস্বর জানা শুনা কারোর মত লাগছে, যাক্ অপরিচিত কেউনা তাহলে! তারপরও নিশ্চিত হওয়া দরকার।
'আপনাকে ঠিক......'
ফিক্ করে হেসে ফেলে মেয়েটি। রুমান কিছুটা ধাধাঁয় পড়ে। রুমানের মুখ দেখে কিছু বুঝতে পারে মেয়েটি, মুখের নেকাব খুলে।
-ও, তুই!
-চিনতে পারছ তাহলে? হ্যাঁ, কিন্তু বোরকা.....
সীমা। বাবার চাচাত ভাইয়ের মেয়ে। ওর চাচাতো বোন। রুমানদের তিন চার বাসা পর ওদের বাসা। আরেকটা সম্পর্ক অবশ্য আছে।ছাত্রী শিক্ষক সম্পর্ক। সীমার এইচ,এস,সি পরিক্ষার সময় মাস তিনেক পড়িয়ে ছিল। চাচী এমন ভাবে বললেন যে, না করতে পারেনি। 'ইংরেজিতে এমনেইরেবা কাচাঁ, তার উপরে আরো ফার্স্টডিয়ারো জিতা পড়ছিল, তার সব খাইয়া বই রইছে!' আর সীমাই নাকি আগ্রহ নিয়ে বলেছিল 'রুমান ভাইর যা মাথা, দু মাস পড়লেই লেটার মার্কস'!
পাম্প দেয়া আর কি! রুমান বুজে। মেয়েকে পড়ানোর জন্যই একটু ইয়ে দিলেন!
- কিন্তু তোকে চিনবার তো কোন উপায় রাখলি না, আমি আবার ভাবছিলাম কে না কে! বোরখা নিলি কবে?
- নিয়েছি, এই তো সপ্তাহ দুই হল।
-কিন্তু হঠাৎ?
-নিলাম, আর আপনিওতো চান।
-আমি চাই মানে?
-কেন ঐ যে সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠানে.....
-ও! তা বোরখা নেয়ার কথা তো বলিনি, বললাম আরেকটু... অসমাপ্ত রাখে রোমান।
-ওই একই; - সীমার নিস্প্রভ জবাব।
রুমান কে খুশি করার জন্য কিংবা তার কথার উপর জিদ করে যে সীমা বোরকা নিয়েছে, সে বুঝতে পারে। এই বয়সে এসে এমনই হয়!
- আচ্ছা বল, খুজঁছিস কেন। তোর কথায় তো ইমার্জেন্সির গন্ধ পাচ্ছি।
- বলব, কিন্তু এখানে? দেখুন না, ঘেমে একাকার হয়ে গেছি...।
হেসে ফেলে রুমান।
-দেখব কি করে? তোর তো টপ টু বটম ঢাকা।
- তাও ঠিক.....
সীমাও হাসল এবার।
হাসলে এই মেয়েটাকে কেন যে এত ভাল লাগে! নাকি সব মেয়েকেই হাসলে সুন্দর দেখায়?
-অবশ্য তোর নাকটা দেখা যাচ্ছে; বিন্দু বিন্দু শিশির....
-রুমান ভাই! আপনি মাজে মধ্যে এমন সব কথা বলেন না; রাগ হয়।
-এইরে, তোর আবার রাগ আছে নাকি, জানতাম না তো?
- আবার?
- ওকে, মাফ চাচ্ছি। কিন্তু এখন একটা সত্য কথা বলি।
-কি?
- রাগ করবি না বল?
- হু, বল।
-'তোকে কিন্তু খুভই সুন্দর লাগছে, লালচে গাল আর নাকে তোকে অন্য রকম লাগছে। অবশ্য তুই এমনিই সুন্দর'।
কোন উত্তর আসে না সীমার দিক থেকে। ভুল হয়ে গেল। আসলে ও ফর্সা না, শ্যামলা। কেউ তাকে সুন্দর বললে ও খুশি হয়না, ব্যাপারটা সে অন্যভাবে দেখে। সীমা ব্যাপারটা বলেছিল একদিন রুমানকে। কিন্তু রুমান জানে সীমার মাজে একটা আলাদা সুন্দর্য্য আছে, যা বলার নয়, সে কোনদিনই তা পারবেনা সীমাকে বলতে। থাক্, এটা তার কাছে তার নিজস্ব 'সৌন্দর্য্য' হয়েই থাক।
-আচ্ছা, বুজলাম, কিন্তু আমাকে খোঁজার কারনটাতো এখানেই শুনতে পারি। রোমান প্রসংগ ঘোড়ায়।
-পারেন, আচ্ছা চলুন কোথায় গিয়ে বসি।
-কোথায় বসবি, এদিকেতো বসার ভাল কোন ব্যবস্থা নেই।
-চলুন না শাকুরায় যাই
-শাকুরায়! এই রুদ্রের মধ্যে হেটে ঐ দিকে যাবি!
যদিও সেটা খুভ বেশি দুর নয় কিন্তু রুম্মান চাচ্ছে না কলেজের আশে পাশে রীমাকে নিয়ে বসতে।
-আমার কোন সমস্যা হবেনা রীমা উত্তর দেয়।
-তা না হয় হলনা, কিন্তু খুঁজছিস কেন সেটাতো বললি না।
-কারন তো আছেই, আর কারন ছাড়া কি কেউ কাউকে খুঁজতে পারেনা? লাইব্রেরীতে যাব, ২য় বর্ষের ক্লাস শুরু হবে শ্রীগ্রই, বই কিনতে হবে।
-তা তো তুই নিজেই কিনতে পারিস।
-পারি, আপনি থাকলে ভাল হয়। আপনি যাবেন কিনা বলুন? কিছুটা রাগ নিয়ে বলে সীমা।
- আরে, রাগ করছিস্ কেন, যাবনা কেন,যাব, কিন্তু...! আসলে রুমান এড়াতে চাচ্ছে সীমাকে।
-যাবেন তো আবার কিন্তু কিসের; আপনার সব সময় একটা কিন্তু থাকে।
না, আজ সীমাকে আর এড়াতে পারিবেন না রোমান সাহেব! নিজেকেই বলে রোমান।
-আচ্ছা চল। কিন্তু বই কিনতে গিয়ে আজ ঠগবি, এটি আমি আগেই বলে দিলাম, লাইব্রেরীওয়ালারা আজ কমিশন দশের উপর উঠাবে না, চান্দি গরম এখন সবার।
রোমানের কথা শুনে আবার হাসে সীমা।
-সে দেখা যাবে, চলুন।
তারা দুজন গিয়ে একটি কেবিনে ঢুকে। ব্যাপারটা একটু অন্যরকম দেখালেও উপায় নেই। খোলা টেবিলের সিমা কে নিয়ে বসার সৎ সাহস রুমানের নেই। কেউ যাতে তাদের না দেখে তার জন্যই সেটা করতে হল। সিলিংয়ের সাথে বসানো স্পিকারে গান বাজছে.. 'কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই,আজ আর নেই...' গানটা কিন্তু শুনতে বেশ লাগে যদিও তার কোন আড্ডা ছিলনা, কিন্তু বসা হয়; প্রায়ই, তবে এই রকম কফি হাউজে না, চা স্টলে। সেখানেও গান বাজে ফেটে যাওয়া স্পিকারে, দোকানের ক্যসিয়ারের পছন্দ মত। সবই প্রায় 'ফাইট্টা যায়' টাইপের গানের মত। পুরাতন হিব্দি ছবির গানও। একবার একটা গান রুমানের খুভ ভালো লেগেছিল- 'একবার দাড়াও বন্ধু এত দিনে পাইছি তোমার লাগ'... কার গান ছিল গানটা রোমান জানে না।
- কি খাবেন?
- সীমার গলার আওয়াজে তার গান ভাবনায় ছেদ পরে। - আমার কোন পছন্দ নেই, তুই-ই পছন্দ কর। বলে রোম্মান।
-আমি জানি আপনি এরকম কথা বলবেন।
-তার মানে?
-আপনাকে আমি চিনিত
-বুজিয়ে বল
-আপনি যখন আমাকে পড়াতেন তখনই লক্ষ করেছি এসব ব্যাপারে আপনি নিরব থাকেন। -যেমন দুধ চা নাকি রং চা জিজ্ঞেস করলে আপনি তো এরকমই বলতেন। অনেকদিন আমি আপনার চায়ে ইচ্ছে করেই চিনি কম দিতাম, কখনো কখনো দিতামই না, অথচ আপনি নির্বিকার থাকতেন, যেন চায়ে মিষ্টি হওয়া না হওয়া একই ব্যাপার।
-কি রাগ করলেন? রোমান কিছু বলছে না দেখে জিজ্ঞেস করে সীমা।
-কেন?
-এই যে আপনার সাথে দুষ্টুমী করেছিলাম বলে।
-নাহ্, আর আমি কার উপর সহজে রাগ করতে পারিনা। -আমি তাও জানি। বলে একটু হাসল সিমা।
এ হাসির অর্থ কি? ভাবে রুমান।
-কি, আমি যা পছন্দ করব খাবেন তো তা?
মাথা দুলায় রুমান। কিছুক্ষন নিরবে কাটে দুজনের।
- কিছু বলছেন না যে।
-আমি কি বলব, তুই ই বল, তোকে আজ খুভ খুশি খুশি লাগছে।
- তা কিছুটা অবশ্য বলতে পার। কেন সেটা জিজ্ঞেস না করলেও বলছি; আমার খুভ ইচ্ছা ছিল আপনাকে নিয়ে আপনারই কোন প্রিয় চা-স্টলে আপনার সাথে বসে চা খাই। যেহেতু সেটা সম্ভব না, তাই এখানেই আসলাম। জানি, আপনি এখানে আপনার চা-স্টলের মত আনন্দ পাচ্ছেন না, কিন্তু আমি পাচ্ছি, একটু হলেও..... অসমাপ্ত রাখে সীমা, একসাথে অনেক কথা বলে।
রুমান নিরব থাকে। ব্যাপারটা বুজার চেষ্টা করে। সবকিছু হেয়ালীর মত লাগছে। সীমাকে যতটুকু জানে, ও এরকম আচরন কখনো করেনি। ঘটনাটা কি? সরাসরি জিজ্ঞেস করবে নাকি? আবার যদি অন্যকিছু মনে করে। হু, বড়ই সমস্যা হল তাহলে। নিজের সাথেই কথা বলে রোমান।
-কি, কিছু বলছেন না যে। সীমা জিজ্ঞেস করে।
আবার সেই প্রশ্ন! কি বলবে সে। সে নিজেই আছে দন্ধের মাজে। তারপরও কিছু না বলেতো উপায় নেই।
-তুই কি এখানে প্রায়ই আসিস।
-না, মানে কেন বলুনতো?
-আমার মনে হচ্ছে, এখানে তুই প্রায়ই আসিস এবং এটা তোর প্রিয় একটা জায়গা। উত্তর জানার অপেক্ষায় থাকে রোমান।
কোন উত্তর আসেনা ওপাশ থেকে।
-কি ঠিক বলিনি?
-প্রায় বলতে মাজে মধ্যে আসি, আর প্রিয়? হ্যাঁ, তা কিছুটা বলা যায়, তবে আপনার চা স্টলের মত না। সীমা তাকায় রুমানের দিকে।
কিছুক্ষন নিরবতা তারপর রোমান জিজ্ঞেস করে-
-তারপর পরাশুনার খবর কি? ইংরেজী নিলি শেষ পর্যন্ত?
-হ্যাঁ নিলাম, গত সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। বলে সীমা। কিন্তু সীমা ভাবে অন্য বিষয়; রোমান জানল কি করে সে ইংরেজি নিয়েছে, রোমানকে তো সে বলেনি! -- - কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে? আপনাকে তো বলিনি। সীমার কথায় তীব্র কৌতুহল.
জবাবে রোমান একটু হাসল যার অর্থ দাড়ায় 'কিভাবে জানলাম তা না হয় একটু রহস্যই থাক।'
সীমা এবার অনার্স ১ম বর্ষ। ইংরেজি নিল অথচ ইংরেজিতে বরাবরই কাচাঁ। রোমান বুঝতে পারে কারনটা। তাইতো উত্তরটা শুধু 'হ্যাঁ'তেই রেখেছে। রোমান মাঝে মাঝে সীমাকে বুঝতে পারে না, নাকি সব মেয়েই এ বয়সে একটু রহস্যময় থেকে যায়! এইচ,এস,সি তে কোন সাবজেক্ট নিবে তার প্রধান পরামর্শক হিসেবে বেছে নেয় রোমান কে। অথচ ভর্তির সময় রোমানের পরামর্শের বিপরীতটাই সীমা করেছিল। সাইন্সে কাঁচা অথচ সাইন্সই নিল। রোমানের সাইন্স ছিল বলে? কিস্তু রোমানকে অবাক করে এইচ,এস,সি, তে দুই সাবজেক্টে লেটার সহ প্রথম বিভাগে পাশ করে। এর কৃতিত্ব নাকি রোমানের। ঘটনা হচ্ছে এইচ,এস,সি ফাইনাল পরীক্ষার মাস তিনেক আগ থেকে সে রিমাকে পড়িয়েছিল। পড়ানো কিছুই না, সীমার প্রিপারেশন ভাল ছিল। যা সে করেছিল তা হচ্ছে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার আর সীমার যে বিষয়ে বুজতে অস্পষ্টতা ছিল সেটা তাকে সহজে বুজে নিতে সাহায্য করেছিল। এর মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রায় দিনই থাকে ইরেজির 'The Magi' গল্পটা নিয়ে ঘষামাজা করতে হয়েছিল। কিন্তু মূল ঘটনাটা ছিল ভিন্ন। ঐ বয়সে যা হয়। রোমান কয়েকদিন বেশ উপভোগ করেছিল সীমার পাগলামো। কিন্তু এক সময় রোমান নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সীমার মাজে ছিল একটা রঙ্গীন ঘোর। কিন্তু রোমানের অবস্থা ছিল ভিন্ন। তাকে প্রতিটা মুহুর্ত বাস্তবতার সাথে হিসেব করে চলতে হয়। ব্যাপারটায় মান সম্মানও জড়িত ছিল দুটি পরিবারের। সীমা তার রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্থ থাকলেও রোমান বাস্তবতাকে এড়াতে পারে না। তাই সে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। সীমার পরীক্ষার পর সীমাদের বাসায় যাওয়া আসাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। কিস্তু রোমানের ভিতর কি একটুও দুর্বলতা ছিলনা সীমার প্রতি? মাজে মাজে রোমান নিজেকেই প্রশ্ন করে। নিজের সাথে কি মিথ্যে বলা যায়? সামান্য ছিল হয়ত। তাইতো রাস্তায় কখনো দেখা হলে রোমান অস্বস্থি বোধ করত। তাই পারত পক্ষে সে সীমার মুখোমুখি হত না। কি দরকার নিজের ভিতর জন্ম নেয়া অতি ক্ষুদ্র দুর্বলতা ওর সামনে প্রকাশ করার। কিছুটা কষ্ট হলেও রোমান ঐ সময়কার মানসিক দন্ধকে সামাল দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এখন কি হবে। আজকে সীমা এখানে সামনে বসে। যদি অনেকদিন আগেরকার দুর্বলতা কোন অসতর্কভাবে বের হয়ে যায়? সিমাও কি নিজেকে আগলে রাখতে পারবে? তারপর?
-তোর সময় কেমন যাচ্ছে? নিরবতা ভাঙ্গার জন্য প্রশ্ন করে রোমান।
-এইতো যাচ্ছে। ক্লাস শুরু হবে। সীমার ছোট্ট জবাব।
-আচ্ছা, ইংরেজি নিলি কেন? পড়ে সমস্যা হবে নাতো? - না, হবে না। তাছাড়া...
অসমাপ্ত রাখে সীমা তার কথা।
- তাছাড়া কি?
- না, মানে কোন সমস্যা হলে আপনিতো আছেনই। রোমান কিছুটা হতচকিয়ে যায়। কিন্তু সামলেও নেয়। মুহুর্তেই বুজে যায় সীমার আসল অভিপ্রায়। না, সে সুযোগ সীমাকে দেয়া যাবেনা, আর সেটা সম্ভবও নয়। সময়তো আর সব সময় এক থাকেনা।
-কি, আপনি সাহায্য করবেনা? সীমা জিজ্ঞেস করে। রোমান হ্যাঁ না কিছু বলেনা, শুধু একটু হাসে। তারপর অনেক্ষন নিরবতা। দুজনেরই মাজে কম বেশি দন্ধ।
-আপনি সত্যিই কি চলে যাবেন? সীমার কাপাঁ স্বরে প্রশ্ন।
-কোথায়? রোমানের তড়িৎ পাল্টা জিজ্ঞাসা। যদিও জানে প্রশ্নটা কোন প্রসঙ্গে। কিন্তু সীমার তো.....
-আমাকে লুকোতে চান?
-না, তোকে আবার কি লুকাব?
-তাহলে যে বললেন কোথায়।
এইরে, সীমা কি জেনে ফেলেছে। কিন্তু তার এখন তো জানার কথা না‍‍!
-কি, তাহলে যাচ্ছেন?
কিছুটা আমতা আমতা করে মাথা নাড়ে রোমান।
-আসলে কি, মাত্র কাগজ পত্র জমা দিচ্ছি, দেখি কি হয়। টাকা পয়সারও কিছু সমস্যা আছে।
-তাই বাবার কাছে টাকা ধার চেয়েছেন?
এবার রোমানের আর বুজতে কষ্ট হলনা সীমা কিভাবে তার বিদেশ যাবার কথা জেনেছে। রোমান ইংরেজি অনার্সের ৩য় বর্ষে। ইচ্ছে অনার্সটা কম্প্লিট করা। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না। পারিবারিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। চাষের কিছু জমি জমা আছে, সেগুলো দিয়ে বাবা বেঁচে থাকতে কোনভাবে পরিবার চললেও বাবার মৃত্যুর পর আর সম্ভব হচ্ছে না। রোমানের ছোট এক ভাই, এবার এস,এস,সি দিবে ও এক বোন ক্লাস নাইনে। বড় ভাই হিসেবে তাদের পরাশুনা চালিয়ে নিতে হলে তাকে এখনই কিছু করতে হবে। কিছুদিন পর বোনটার বিয়ে দিতে হবে। তাই অনেক ভেবে রোমান মালেশিয়া যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যেতে চাইলেইতো আর যাওয়া যায়না। টাকা পয়সার ব্যাপার। এছাড়া দালালকে অর্ধেক টাকা এখন দেয়া এবং বাকি টাকা মালেশিয়া গিয়ে দিবে এই শর্তে রাজি করিয়েছে। কিন্তু বাকী টাকার জন্য কাউকে তো 'যাবিন' নিতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই রোমান ইরফান চাচা মানে সীমার বাবাকে ব্যাপারটা বলেছে। সীমার বাবা যেমন মানুষ ভাল তেমনি তিনি রোমানদেরকে সকল প্রকার সাহায্য করে আসছেন অনেকদিন থেকে। তিনি রোমানের বিদেশ যাওয়ার জন্য সব ধনের সাহায্য করবেন বলেছেনও। অবশ্য রোমান এর বিনিময়ে তাদের কিছু ধানি জমি ইরফান চাচার কাছে বন্ধক রাখবে। চাচা প্রথমে জমি বন্ধক নিতে না চইলেও শেষে রাজি হয়েছেন। সম্ভবত চাচীর পরামর্শে।
'আজ আমার বিয়ে'- জানেন?
সীমার হঠাৎ কাঁপা স্বরের উচ্চারন। রোমান হতবুদ্ধি হয়ে যায়। বলে কি মেয়ে!
- ধ্যাত, এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস? আর এসব নিয়ে তর আমার সাথে ফাজলামো কি মানাচ্ছে? রোমান বলে।
- ফাজলামো নয়, সত্যি। সীমার নিচু স্বরে জবাব।
-সত্যি বললেই কি আমি বিশ্বাস করব। আর সেরকম কিছু হলে চাচ-চাচী নিশ্চই আমাকে বলতেন। গত দুদিন আগেই তো চাচার সাথে দেখা করে আসলাম।
- টেলিফোনে বিয়ে হবে, আজ সন্ধ্যায়। সীমার গলায় কিছু আটকে যাওয়া স্বর, অনেক কিছু বলতে গিয়েও শুধু যে কথাগুলো না বললেই নয়, সেই কথাগুলো বলেই থেমে যাওয়া।
- আমার কিন্তু এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
যদিও রোমান মুখে এ কথা বলছে কিন্তু সীমার গলার স্বর তাকে সেটি বিশ্বাস করতেই বাধ্য করছে।
-বিয়ের কথা কি আগ থেকেই চলছিল না হঠাৎ। রোমান জিজ্ঞেস করে।
কোনো উত্তর আসেনা সীমার দিক থেকে।
রোমান তাকায় সীমার দিকে। রোমান যেন ইলেক্ট্রিক শ্‌ক খায়। সীমা কাঁদছে, তার ছোখ দিয়ে পানির একটি রেখা এসে তার চিবুকে এক অবোধ্য ভাষায় কিছু বলছে। রোমান সেটি পড়তে পারছে না। রোমান কি করবে বা কি বলবে বুজে উঠতে পারেনা। ছোখের পানির কোন এক অজ্ঞাত শক্তি আছে যা যে কাউকে দুর্বল করে দিতে পারে যেকোন সময়। রোমানকেও করে দিচ্ছে সে তা বুঝতে পারছে। কিন্তু সেটা এখন এই মুহুর্তে প্রকাশ করা যাবেনা। আগে ব্যাপারটা ভাল করে বুঝতে হবে। সীমার এভাবে কাঁন্নার কারন।
- কিরে তুই কাঁদছিস কেন? রোমান সরাসরি প্রশ্ন করে।
- কই, নাতো, হাতের টিস্যু দিয়ে ছোখ মুছতে মুছতে বলে সীমা।
-আমি অবশ্য এখনো দ্বিধায় আছি, হঠাৎ তোকে বিয়ে দেবার কি হল, মাত্র অনার্সে ভর্তি হলি। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে রোমান
- লন্ডনি বর। সীমা বলে যথেষ্ট হালকাভাবে।
রোমানের বুজতে আর বাকি থাকলনা ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে।
- তোদের ঐ মামতো ভাইটার সাথে? রোমান প্রশ্ন করে। সীমা মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ল।
একটু সময় নিয়ে তারপর বলে রোমান,
- তাহলে তো বেশ ভালই হল, চেনা পরিচয়ের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে।
আমারতো প্রথমে তোর কথা বেশ খারাপ লেগেছিল।
-শুধু আত্বীয় হলেই কি চেনা জানা হয়ে যায়? সীমার অষ্পস্ট প্রশ্ন।
- তা হয়না আবার হয়ও। রোমানও কিছুটা নিচু স্বরে জবাব দেয়।
-আচ্ছা রুমান ভাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? উত্তর দেয়া না দেয়া আপনার ইচ্ছা। সীমার গলায় যথেষ্ট গম্ভিরতা।
রুমান থাকায় সীমার ছোখের দিকে। কি একটা ভাষা যেন সেখানে, আপন করে নেয়ার, কাছে টেনে নেয়ার। কি বললেন না যে? রোমান কে কিছু না বলতে দেখে সীমা আবার বলে।
-কি?
- আমার উত্তর পাব কিনা?
- ও' হ্যাঁ কর। জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন। একটু হাসে রোমান। পরিবেশটাকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রান চেষ্টা ভিতরে ভিতরে।
নিরবতা উভয়দিকে। সীমা গুছিয়ে নিচ্ছে তার কথা গুলো হয়ত। আর রোমান ভাবছে কি এমন কথা সীমা আজ থাকে বলতে চায়। আজ কেনইবা তাকে সীমা এখানে এনেছে। বই কেনা ব্যাপারটা কি শুধুই বাহানা। যে মেয়ের আজ রাতে বিয়ে, তার পাঠ্যবই আজকেই কেনার জন্য এত ব্যাকুল হওয়াটা কি স্বাভাবিক? আর কিইবা বলতে চায়। বিশেষ কিছু বলার কোন সম্পর্ক কি তাদের মধ্যে হয়েছে? না, তাওতো না, তবে কি বলতে চায় সীমা?
-আর কিছু কি খাবি? নিরবতা ভাংগার জন্যই বলে রোমান।
মুখ তোলে থাকায় সীমা। রোমান আটকে যায় সীমার ছোখের দৃষ্টির জালে। এই মেয়েতো তাকে আজ উলট পালট করে দিচ্ছে।
- আপনি কি কখনই আমাকে ভালোবাসেন নি?
দৃঢ় আর স্পষ্ট শব্দে সীমা ছুড়ে দেয় তার হাজার ভল্টের প্রশ্ন। অন্তত রুমানের কাছে তাই অনুভুত হয়েছে। রোমান কেঁপে উঠে। আজ এই মুহুর্তে সীমা একি প্রশ্ন করল তাকে!
- আমার প্রতি আপনার কি একটুও দুর্বলতা ছিলনা। রোমান স্তব্ধ হয়ে যায়। এ মেয়ে এসব কি প্রশ্ন করছে আজ থাকে। এই মেয়েটি আসলেই কি রোমানের চেনা সীমা নাকি অন্য কেউ? তাই রোমান কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। হঠাৎ একটা শুন্যতা ঘিরে ফেলে থাকে। সে জানে না এ শুন্যতার জন্ম কোথায়।
না, অনেক হয়েছে, আর না। এই মেয়েকে আর এগুতে দেয়া যাবেনা। আজ রাতে যার বিয়ে, তার সাথে এসব প্রসংগে কথা বলাটাও অনৈতিক। রোমান নিজের সাথে চট করে একটা উপসংহারে যেন চলে আসে। কিন্তু কিভাবে সেটা প্রাকাশ করবে সেটা বুজতে গিয়ে দেখে কোন কথাই আর আসছে না তার মুখ থেকে।
-আপনি কি কখনই বুজতে পারেন নি, আপনাকে একটি মেয়ে ভালোবাসে? শুধু একবার দেখার জন্য বারান্দায় এসে দাড়াত কতবার দিনে ও রাতে কতবার সে নিজেও জানে না। সীমা তার আগের কথার রেশ টেনে নিজেই আবার বলে।
-আচ্ছা থাক না এইসব। রোমান এত নিচু শব্দে কথাগুলো বলল যে সে নিজে শুনেছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু কথাটি যে সে ভাল করে শুনেছে তার সীমার পাল্টা দৃঢ় না ঠিক কিন্তু শীতল বরফের মত জবাব শুনে বুজতে পারল
- ইস! কি সহজে বলে দিলেন- থাক না! এতই যদি আপনি বুজেন তবে কেন আরো আগে আমাকে বললেন না- 'থাক না এইসব'
আপনিতো নির্বোধ ছিলেন না যে একটা মেয়ের ভালোবাসা বুজতে পারবেন না। কথাগুলো সীমা একনাগারে বলে গেল।
কিন্তু রোমানের কাছে মনে হল- এক একটা বাক্য যেন তার পৌরুষত্বের গালে এক একটা চপেটাগাত। আর সবচেয়ে আশ্চর্য্য রোমান এই ভেবে যে সীমা তো এইভাবে কখনই কথা বলেনা। এই মেয়ে এত কথা শিখল কোথায় থেকে? নাকি ভালোবাস শিখিয়ে দিয়ে যায়?
-তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন? রোমান এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে।
- কারন আপনি বাধ্য করেছেন।
-আমি! কিভাবে? রোমান ততাধিক আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করে।
-সেটা আপনি না জানলেও হবে। শুধু জেনে রাখুন, বাবা যে আপনাকে বিদেশ যেতে সাহায্য করছেন, তার একটা কারন আপনাকে আমি ভালোবাসি। সীমা কথাগুলো বলল বেশ স্পষ্ট করে।
-মানে!
বলেই আর কিছু বলতে পারলনা রোমান। হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরল। একি সর্বনাশ করল সীমা। চাচা চাচী এখন কি ভাববেন তাকে। সীমা তাকে তাদের কাছে ছোট করে দিল।
- কি মিষ্টার, মাথায় হাত দিয়ে কি ভাবছেন?
রোমান তাকায় সীমার দিকে। এই কি সেই সীমা যাকে সে জানে। তাকিয়েই তাকে রোমান সীমার চোখের দিকে। - কি, এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? এখন লজ্জা পাচ্ছেন না। আচ্ছা তাকান, আজকের পরতো আর তাকাতে পারবেন না। দেখতেও পাবেন না কিছুদিন পর, চলে যাব সেই সূদুর রানীর দেশে। আচ্ছা আপনাকে আর এভাবে আমার দিকে তাকাতে হবে না। শুধু আপনার সান্তনার কন্য এ তূকু বলতেই পার যে আমি যা বলেছি তাতে আপনার কোন কথা আসেনি বা আপনি আমার বাবা মা'র কাছে যহোত হোন সেরকম কিছুই বলিনি। তাইতো ঝড়টা শুধু আমার উপর দিয়েই আজ রাতে যাবে। ভিনদেশী এক পুরুষের সাথে সংসার করতে হবে। সীমা তার কথাগুলো শেষ করতেই বলে
-আচ্ছা তুই কি এসব বলবি বলেই আমাকে এখানে এনেছিস?
- যদি বলি হ্যা।
- তার কি কোনো দরকার ছিল?
- অন্যকারো না থাকতে পারে কিন্তু আমার ছিল। কিছুক্ষন থেমে সীমা আবার বলল,
- যে মানুষটাকে আমি দিনের পর দিন ভালোবেসে গেলাম, আমার কি ইচ্ছা হয়না জানতে সেই মানুষটা আমাকে বাসে কিনা?
কিন্তু এবার স্বরটা ছিল অন্যরকম, খাদ বেয়ে নামার মত। যেখানে কান্নার জল বয়ে যেতে পারে, ভাসিয়ে নিয়েও যেতে পারে। রোমান কি ভেসে যাচ্ছে?
- তো কি বুজলি? রোমান অন্যদিকে তাকিয়ে বলে।
- রোমান ভাই, আপনি যদি জানতেন একটা মেয়ের কাছে 'ভালোবাসা' কি, তবে আপনি এই কথাটা আর বলতে পারতেন না। সীমা বলে।
আবার সেই শুন্যতা। কিন্তু এবার রোমান বুজতে পারল, কোথায় সেই শুন্যতা। তার ঠোট কাঁপছে, কিছু বলার জন্য। কিন্তু কি? জীবনের এই মানুষিক দন্ধে কোনোদিন সে হতে চায়নি, আজও না। কিন্তু! সীমা আজ যে পরিস্থিতিতে তাকে টেনে এনেছে, এর মুখোমুখি দাড়ানোতো রীতিমত কঠিন। অনেক, অনেক নিজের সাথে বুজাপরার পর সে সরিয়ে রেখেছে নিজেকে। সে তো জানতই, মুখে কোনো দিন না বললেও তার প্রতি সীমার দূর্বলতা। কিন্তু সে তো সেই দূর্বলতাকে স্রেপ 'কিশোরীর অপরিপক্ক মুগ্ধতা' বলেই জানত। কে জানত সেই মুগ্ধতা আজ থাকে 'মেয়েদের ভালোবাসা' শিখাবে।
- তুই একটু বস, আমি একটু আসছি। রোমান বলে।
-জানি কোথায় যাবেন! সিগারেট খেতে। সেটা আর নাইবা গেলেন। আমার কাছে আছে, বলে সীমা তার সাইড ব্যাগ খুলতে হাত দেয়।
রোমানের যে সামান্য কিছু বিস্ময় বাকী ছিল সেটাও দুল খায় সীমা এই কথাগুলো শুনে। আসলেই কি সে আজ সীমা নামক মেয়েটির সাথে এই জায়গায় বসা।
রোমানের মুখে কোন কথা আসতে চায়না। তারপরও বলে,
-আমি সিগারেট খেতে যাচ্ছি সেটা বুজলি কি করে?
- সেটা আপনার না জানলেও চলবে। এই নিন, আপনার ব্রান্ডটা দিলে ভালোলাগত কিন্তু ভাবলাম দিচ্ছি যখন ভালো ব্রান্ডেরটাই দেই। কি ধরেন! একটু শাসন যেন ছিল শেষ কথায়।
রোমান হাত বাড়ায়, কিন্তু মনে হল সে হাত তার না, অন্য কারো, যেন এই হাত অনেকদিন থেকেই এভাবে দেয়া নেয়া করে আসছে।
- এখানে কি সিগারেট খাওয়া যায়? রোমা কিছুটা দ্বীধা নিয়েই বলে।
-জানি না, তবে মাজে মধ্যে গন্ধ পেতাম। জিগ্গেস করব। সীমা জটপট উত্তর দেয়।
- ধ্যাৎ তুই কি জিজ্ঞেস করবি। আমি বরং বাহিরেই গিয়ে গেয়ে আসি।
রোমান কে উঠতে হলনা, ওয়েটার একজন সামনে টেবিলের উপর এসট্রে দিয়ে গেল।
- নিন এবার ধরান! সীমার টুঠে হাসির একটা রেখা এসে মিলিয়ে যায়।
রোমান ইত্যস্ত করে, সেটি দেখে সীমা বলে,
-কি আমার সামনে খেতে লজ্জা করছে। আপনি আমার বড়, আমাকে লজ্জা করার কি, আপনার সিগারেট খাওয়া দেখি।
- পাগল, সিগারেট খায়ার মধ্যে দেখার কি!
- তারপরও, এই সুযোগে তো আর কোনদিন আসবেনা। আপনার সামনে বসে আপনার সিগেরেট খাওয়া দেখার আমার একটা বিশেষ চাওয়া ছিল, আজ আমাকে সেই ইচ্ছাটা পুর্ন হওয়ার সুযোগ দিন। প্লিজ!
সীমার শেষের কথাগুলো শুনে রোমান আর আগ পিছ ভাবেনা, সিগারেট ধরায়, কিন্তু ছোখ তার সীমার ছোখে। সীমাও তাকিয়ে তাকে, নিস্পলক। সময় যেন থেমে যায়। সিগারেটের নীল ধুয়ায়, পুড়ছে চারটি ছোখ! এই পুড়াই যেন শেষ, হয়ত এর ক্ষতটাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে অনেক অনেক দিন।
সীমার ছোখ ভিজে উঠে। রোমান কে সেটা দেখাতে চায়না বলে উঠে দাড়ায়।
- আমি আসছি, আপনার জন্য চায়ের অর্ডার দিয়ে আসি। চায়ের দোকানেতো প্রায়ই দেখি চা- আর সিগারেট একসাথে খাচ্ছেন।
সীমা রোমান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কাউন্টারের দিকে চলে যায়।
রোমান একা। তার চারপাশে অসহ্য নিরবতা, শুধু কল্পনায় একটা অনুররন শুনতে পায়। সীমার কান্নার। সীমা চায়ের অর্ডার দিয়ে এখনো আসেনি। ওয়াশরুমের দিকে চলে গেছে। রোমানের বুজে উঠতে কষ্ট হয়না, সীমা সেখেনে কাঁদবে। হঠাৎ এত্ব শুন্যতা কেন চারপাশে। রোমানের ইচ্ছে হচ্ছে উঠে গিয়ে সীমার হাতটা ধরে। ইচ্ছে করছে বলতে 'তুমি কেঁদনা, এইতো আছি পাশে তোমার, আজীবন থাকব।'
অজান্তেই ভিজে উঠে ছোখ রোমানের। ছোখের কোন, চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসায় সম্বিত ফিরে পায় সে। না, তা আর সম্ভব নয়। ক্ষুদ্র জীবনে সব নিজের চাওয়ার মত হয়ে আসেনা। অনেক না পাওয়াকে 'পাওয়া' করে নিতে হয়। এই যে সীমাকে সে পাচ্ছেনা, অন্যের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে সীমাকে সে পেয়েছে। মানুষের মন বিচিত্র, তাই নির্দিষ্ট আবেগে সব সময় বাধা পড়েনা।
-কি চা দিয়েছে? কখন সীমা পাশে এসে দাড়িয়েছে রোমান বুজতেই পারেনি।
-হ্যাঁ, এইতো শেষ করলাম। বস।
রোমান তাকায় সীমার ছোখের দিকে তাকায়। নাক দুটি কিছুটা ফোলা, ছোখের পাপড়িগুলো ভেঁজা। কিছু
জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা ভাবছিল রোমান। না, থাক। এ মূহুর্তে এই বিষয়ে কথা না বলাই ভাল।
-এত সময় নিলি আমার সিগারেটতো শেষ।
সীমা কিছু না বলে একটু শুধু হাসল।
তুইতো চা খেলিনা, বলব চা দিতে।
- আপনার সাথে খেলে ভালো লাগত, কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করছে না।
রোমান সীমার মধ্যে একটা পরিবর্তন খেয়াল করল। কিছুক্ষন আগের সীমা যেন এই মিনিট কয়েকের ব্যবধানে আর সেই সীমা নেই।
- আপনি আসবেন আজ রাতে, আমাদের বাসায়? সীমা খুভ স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করে।
দেখি, চাচা বা চাচী কেউতো এখনো কিছু বলেননি। শুধু তোর কথায় কি যাওয়া ঠিক হবে?
সীমা কিছু না বলে আবার তার হাতের নখ পালিশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
- কি, আর কিছুক্ষন বসবি? রোমান বলে।
কি যেন ভাবল সীমা তারপর বলল-
- না, চলুন, অনেক্ষন হয়েছে, বাসায় চিন্তা করবে।
সীমার এই কথায় রোমানের মনে হল সীমার বাসা থেকে বের হয়েছে অনেক আগে, সম্ভবত সকালে।
- তুই বাসা থেকে বের হয়েছিলি কখন?
কোন উত্তর নাই।
-চল উঠি তাহলে;
-হ্যাঁ, চলুন। ।
দাড়া, বিলটা দিয়ে আসি।
লাগবেনা।
মানে?
-আমি দিয়ে এসেছি।
তুই? কেন! এটা কিন্তু তুই একটুও ভালো কাজ করিস নি।
-ছোট বোন হিসেবে দু চারটা 'মন্দ' কাজ করা যায়, বলে একটু হাসল সীমা।
রোমান তার রাগ প্রকাশ করতে গিয়েও আর করতে পারলনা।
-তুই কিন্তু আসলেই অনেক পাজি হইছিস।
-তাই!
-কোন সন্দেহ নাই। রোমান বলে।
- কি শাস্তি দিবেন নাকি?
-অন্য সময় হলে হয়তো দিতাম।
-অন্য সময় মানে?
-মানে হচ্ছে আজতো তর বিয়ে,তাই।
আবারো হাসল সীমা। হাসলে সীমাকে এত সুন্দর লাগে, এটা আগেতো কখনো লক্ষ্য করেনি।
হঠাৎ রোমান নিজের ভিতর একধরনের হাহাকার অনুভব করল। ইশ্‌! এই মেয়ে কি তার পাশে সারা জীবন থাকতে পারেনা? খুভ সুন্দরী নয় কিন্তু অতি মায়াময়
ছোখ আর মুখের এই মেয়ে কি পারত না তার পাশে বসে সারা রাত জোছনা দেখতে। হঠাৎ মাঝরাতে উঠে তাকে এক কাপ চা বানিয়ে চমকে দিতে পারত না? রোমান নিজের হাহাকারের ভিতরের শব্দগুলোকে সাজাতে থাকে।
- রোমান ভাই এটা আপনার।
একটা প্যাকেট বের করে সামনে রাখে সীমা।
-আমার? কি এর মধ্যে?
- খুলে দেখুন।
রোমান প্যাকেট হাতে নিয়ে খুলে।
একটা নীল শার্ট। রোমান কথা না বলে সীমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
রোমানকে বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে সীমা জিজ্ঞেস করে।
- তাকাব না?! আজ সেই প্রথম থেকেই তুই একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিস।
অদ্ভুত ঘটনা! সীমা অবাক হয়ে বলে।
- তা নয়ত কি?
-আচ্ছা এই শেষ। কি পছন্দ হয়েছে? সীমা জানতে চায়।
- পছন্দ হওয়া না হওয়াতো বিষয় না, আগে বল তুই আমাকে এই শার্ট দিলি কেন?
- এটা কি ধরনের কথা রোমান ভাই, একজন একটা গিফট দিল আর আপনি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। আর যদি পছন্দ না হয়, বাসায় নিয়ে ফেলে দিবেন। কিচ্ছা শেষ!
- সেটাই করতে হয়, আমার বয়সের কাউকে এই কালারের শার্ট পরতে দেখেছিস? এটাতো হাইস্কুলে পড়ুয়া ছেলেদের শার্ট।
সীমা মাথা নিছু করে বসে থাকে। কিন্তু ওর ঠোট কাঁপছে। কি যেন বলছে।
- রোমান ভাই, চলুন উঠি, আমার প্রচন্ড মাথা ধরেছে।
রোমান তাকিয়েই থাকে সীমার দিকে। কতক্ষন? জানে না। হঠাৎ উপলব্ধী করে তার সামনে বসা সীমা আবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
উঠে দাঁড়ায় রোমান।
সীমার ঠোটে একটা বিজয়ের হাসি।
- রোমান ভাই, দেখলেন তো পারলেন না। আর আমি আমার উত্তর পেয়ে গেলাম। চলুন যাই।
রোমান কোন উত্তর দেয় না।
একসাথে অথচ সারাজীবনের দুরত্ব নিয়ে বের হয়ে গেল তারা দু জন।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Dec 06, 2013 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

একটি নীল শার্ট ও তার গল্প    ~~  সৈ য় দ কা ম রা ন আ হ মে দWhere stories live. Discover now