নীল সমুদ্রে এক সারিতে দাঁড়িয়ে সেই ফটোতোলা, কেটে গেছে চার বছর। আমি ঘুরতে ভালো বাসি বলে, যে গ্রুপ এর সাথে পারি বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু এদের রাজি করতে লেগে গেলো চার বছর। এদের সাথেই প্রথম বাইরে বেরোনোর স্বাদ পাওয়া, স্বাদ মানে ঐ বাঙালির ফেভারিট প্লেসে, দীঘা। এবার আর সমুদ্র নয়, এবার অদম্য পাহাড়।
গ্যাংটক এর সাথে পরিচয়টা অনেক পুরানো, গ্যাংটক এ গন্ডগোল হয়তো পড়েছি পঞ্চাশ বার। এবার জায়গা গুলো সশরীরে অনুভব করবো। হুমমম অনুভব, দু চোখ ভোরে দেখা আর ছবি ও লেখায় তাকে বন্দি করে রাখা।
সকলের রাজি হওয়াটা ছিল অপেক্ষা মাত্র, কারণ চার বছর এই চার জনের একসাথে কোথায় যাওয়া হয়নি। তাই ১লা জানুয়ারি ডায়মন্ড এর মিট টাতেই টিকিট কেটে ফেলা হলো। কনফার্ম টিকিট পেলাম না, তাই আর এ সি টিকেট এই সন্তুষ্ট হতে হলো, আসার টা যদিও কনফার্ম টিকিট। যাবো দার্জিলিং মেলে ফিরবো কাঞ্চনকন্যাতে। অনেক দিন পর আমি প্ল্যানইং এ নেই, মানে মাথা ব্যাথা ছাড়া ঘোরা, পুরো দায়িত্ব সৌম্যর। হোটেল, গাড়ি আর খাওয়া দাওয়া কোনো কিছুই আমার হেডএক নেই। শুরু করলাম শিয়ালদহ স্টেশন থেকে, রাত্রি ১০টায়। আর এ সি টিকিট হওয়ায় যেতে হলো সিট নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে। যাচ্ছি ৬ জন। আমি, বাপ্পা , সৌম্য, সৌম্যর দুই ভাই আর তারাশঙ্কর ইন শট তনু। ট্রেন আধ ঘন্টা লেট করে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলো। গাড়ি সেখানেই অপেক্ষা করছিল, ব্রেকফাস্টটা সেরে বেরিয়ে পড়া।
প্রথমে দুধারে মিলিটারির ক্যাম্প পেলাম সেবক অবধি, তার পর আর দুধার বলে কিছুই নেই, আছে শুধু একধার ঘেঁষা পাহাড় আর একধারে গভীর তিস্তা। মহানন্দা আর তিস্তার সবুজ জলের বাঁকে বাঁকে ড্রাইভারের স্টিয়ারিং ঘোরানো, আর আমার চোখ উপরের মেঘে। কিভাবে এক পাহাড় হয়ে অন্য পাহাড়ে রাস্তা মিলিয়েছে মেঘের মধ্যে। ৫ ঘন্টার জার্নিতে লাঞ্চ সারলাম রাস্তার এক হোটেলে, কাঁসার থালা বাটি তে বাঙালি খাবারের মজা সিকিমএও পাবো তা ভাবিনি, এখুন আমরা কালিম্পঙ ছেড়ে রংপোয়। গ্যাংটক যেতে লাগলো আর ও দু ঘন্টার কাছা কাছি।
পৌঁছে গেছি বুঝতে সময় লাগলনা, কারণ ইতি মধ্যেই সবাই গায়ে পরে নিয়েছে সোয়েটার। ঠান্ডায় পারদ ছুয়েছে ১৫℃। উঠে ছিলাম দা কিংস রেসিডেন্সি, দেওরালিতে। মনেস্ট্রি থেকে ৫ মিনিটের দূরত্ব। তাই প্রথম কাজটাই ছিল ফ্রেশ হয়ে মনেস্ট্রি যাওয়া। সাদা হলুদ নীল লাল সবুজ পতাকা গুলো পাহাড়ি হাওয়ায় উড়তে উড়তে বলছে এটা সিকিম। মনেস্ট্রিতে কিছু সময় কাটিয়ে ভাবলাম রোপয়ে চাপবো, যদিও তা হলোনা খুব বেশি হাওয়া থাকায়। রোপওয়ের পাশেই রয়েছে একটা পার্কিং লট, গ্যাংটক শহরটাকে এক ফ্রেমে বাঁধতে হলে একবার এই খানে আসা আবস্সিক। কিছুখুন ক্যামেরা নিয়ে বিসি সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এম জি মার্গ মার্কেটের উদ্দেশ্যে, ভারতএ এরম মার্কেট খুবই কম আছে, যাকে বলে নীট এন্ড ক্লীন। কোনো অংশে বিদেশি মার্কেটের চেয়ে কম নয়। টুকিটাকি মার্কেটিং আর হোটেলে ফেরা। হোটেলের কাছে একটা কাফেটেরিয়া তে সন্ধ্যা বেলায় গরম কফির আমেজ আর জমিয়ে আড্ডা। রাতের ডিনারটা হোটেলেই। কাল আর্লি মর্নিং বেরোনো, ডেটিনাশন লাচুং।