একটি ছেলে, একটি মেয়ে - বন্ধুও হয় -লিখছে পরমা।

2 0 0
                                    


                                                                                          ।। এক ।।

সকাল সাতটার সময় এতবার কলিং বেলের আওয়াজে কিছুটা চমকেই গেল অরূপের মা। এই সাত সকালে তো কাজের মাসীর আসার কথা নয়।

"যাই, যাই! একি তুলি, তুই এত সকালে এখা..."

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলি হন্‌হন্‌ করে ঢুকেই চিৎকার জুড়লো, "এই গাধা বেরিয়ে আয় বলছি! বাঁদর, অসভ্য, আমার প্র্যাক্টিক্যাল পেজ নিয়ে পালিয়েছিস! আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন!"

এক নিঃশ্বাসে বলেই দোতলায় যাওয়ার জন্য রওনা হতেই অরূপের মা বললেন, "আরে দেখো মেয়ের কাণ্ড, এই ফাঁকা বাড়িতে কার ওপর এত হম্বিতম্বি করছিস ? বাবান তো কখন টিউশন চলে গেছে, আর বলে গেছে যে তুই যেন ওর টিফিনটা যাওয়ার সময় নিয়ে যাস, স্কুল ঢোকার আগে ও নিয়ে নেবে।"

"নেব না ওর জন্য টিফিন, রাগে মাথাটা ফেটে যাবে আমার, জানো কাকীমা, আজ আমার প্র্যাক্টিক্যাল কপি জমা করার কথা ছিল, কিছু লেখা আর আঁকা বাকি, পেজগুলো কালই কিনে আনলাম, আজ সকালে উঠে দেখি পেজগুলো নেই! ওই বাঁদরটারও আজ জমা দেওয়ার দিন, ওই নিয়েছে!"

বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল তুলি। অরূপের মা কি বলবেন খুঁজে না পেয়ে মেয়েটাকে সান্ত্বনাই দিলেন, আর মনে মনে ভাবলেন সত্যি বাঁদরই হয়েছে ছেলেটা।

সকাল ৯টা নাগাদ অরূপের মা ভাবলেন আজ বুঝি ছেলে টা না খেয়েই থাক্‌লো, তুলির রাগটাও স্বাভাবিক। বেচারির পেজগুলো যে তার ছেলে লোপাট করেছে, টিফিন কেনই বা নিয়ে যাবে। হঠাৎ সম্বিত ফেরে তুলির ডাকে, "কাকিমা টিফিনটা দাও।"

"ওমা লক্ষী মেয়ে আমার, আমি ভাবলাম তুই আসবি না। যাক গে, এই নে, দেখা হলে আচ্ছা করে বকে দিস, সত্যিই বাবান অন্যায় করেছে।"

"আসলাম গো..."

মুখে একটা হাসি দিয়ে তুলি বেরিয়ে যেতেই অরূপের মা আনমনে হেসে উঠলেন এই দুটোর পাগলামি দেখে। সেই ছোট্টবেলা থেকে একসাথে আড়ি-ভাব, ঝগড়া-মারামারি কত কী না দেখে আসছেন এতগুলো বছর ধরে। মেয়েটা সত্যিই খুব মিষ্টি, শুধু শুধুই বাবান ওকে এতো জ্বালায়। আজ বাড়ি ফিরলে একটু কড়া ভাবে বোঝাতেই হবে – এই কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ির কাজে মনোনিবেশ করলেন।

একটি ছেলে, একটি মেয়ে - বন্ধুও হয়Where stories live. Discover now