-এটা কি আপনার প্রথম বিয়ে?
-মানে কি? বুঝলাম না।
-আমিতো হিব্রু ভাষায় বলিনি। বাংলা বলেছি। নাকি ১০ বছরেই বাংলা ভুলে গেছেন?
-না, তা না। আসলে এ ধরনের প্রশ্ন আশা করিনি।
-আপনি কি আশা করেছেন, সেটা আপনার ব্যাপার। আজ আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। আমার সব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে কোনো প্রশ্ন না করে।
হে আল্লাহ এত দেখি ধাইন্না মরিচ। আমি তো ভেবেছিলাম পুকুরের পানির মতো শান্ত একটা মেয়ে।
আমি মেঘ। বাবা-মার একমাত্র সন্তান। দশ বছর আগে আমি বাবা-মার সঙ্গে ইমিগ্রান্ট হয়ে আমেরিকা যাই। ছোট খালা আমাদের নিয়ে যান। আমেরিকা যাওয়ার কিছুদিনের পরেই বাবা-মা হাঁপিয়ে ওঠেন। যার কারণে কিছুদিন পর ছোট খালার জিম্মায় আমাকে রেখে তাঁরা বাংলাদেশে চলে যান। আমার লেখাপড়া শেষ। ভালো বেতনের একটা জব করছি। গত কয়েক মাস থেকে আত্মীয়স্বজন সবাই উঠে পড়ে লেগেছেন, আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মা আমাকে বিভিন্ন মেয়েদের ছবি অনবরত পাঠিয়ে যাচ্ছেন। আর আমি সে সব ছবি না দেখেই অনবরত না বলে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে মা আলটিমেটাম দিয়েছেন, এ পর্যন্ত যে সব ছবি পাঠিয়েছে তার মধ্যে থেকেই আমাকে বিয়ে করতে হবে। আমি বলেছিলাম আমার পছন্দের দরকার নেই। তোমরাই একজন কে ঠিক করো, আমি চোখ বন্ধ করে তাকে বিয়ে করব। আমার প্রস্তাবে মা-বাবা কেউ রাজি নন। তাদের বক্তব্য তোমার জীবন তুমি সিদ্ধান্ত নেবে। আর চোখ বন্ধ করে বিয়ে করা চলবে না। চোখ খুলেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে।
একদিন সব ছবি নিয়ে বসলাম। কিন্তু এত এত ছবি দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর তা ছাড়া কেন জানি বিষয়টি রুচিহীন ও মেয়েদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বলে মনে হলো। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর প্রতিটা মেয়েই সুন্দরী। ছবি থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সৌন্দর্য দেখে যদি একজনকে পছন্দ করি, তাহলে অন্য মেয়েগুলোকে ছোট করা হবে। তাই সব ছবি থেকে চোখ বন্ধ করে লটারির মাধ্যমে একজনকে বাছাই করলাম। জীবনবৃত্তান্ত পড়ে যা জানলাম তা হলো, মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ছে। বোরকা-হিজাব ছাড়া বের হয় না। নামাজি, কথা কম বলে এবং খুবই নরম স্বভাবের। লটারি করার আগে ঠিক করেছিলাম, লটারিতে যার ছবি উঠবে তাকেই বিয়ে করব। সে মেয়ে যেমনই হোক। বাংলাদেশে আসার আগেই জানিয়ে দিলাম এই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে ফাইনাল আলোচনা করতে। আমার মেয়ে দেখতে হবে না। তবে মেয়ে যদি আমায় দেখতে চায়, আমার কোনো আপত্তি নাই।