(এক)
মিঠু নিজের ক্লাসে একা বসে আছে।বাংলা অনার্সের ক্লাস।কেউ আসেনি।আকাশের যা অবস্থা কেউ আসবেও না।ও আজ কলেজ আসত না কিন্তু আকাশের অবস্থা দেখেই এসেছে।কাছেই একটা টিউশন ছিল।বেরিয়ে এমন আকাশ দেখে ভাবল বাড়ি যেতে যেতে ভিজে যাব।তার থেকে কলেজেই ক্লাসে বসে বসে কোনো বই পড়া যাবে।
ও ওর বাংলা বিভাগের ক্লাসে ঢুকল আর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।যেহেতু কেউ আসেনি তাই ক্লাস হবে না। আজ আর কেউ আসবেও না।বৃষ্টি ছাড়ালে চলে যাবে।কিন্তু এতক্ষণ কী করা যায়?
কারণ চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে থাকার চেয়ে ওর কাছে বাঘের পিঠে চাপা সোজা।
কিন্তু ফাঁকা ক্লাসে গল্পটা করবে তো করবে কার সাথে? সাথে ফোন নেই যে যা মন একটা বই পড়বে।খালি মনে হচ্ছিল- ইস্! কেন যে নিয়ে এলাম না।পড়তে পড়তেই সময় কেটে যেত।এখন কী করব?
ব্যাগে প্রাইভেটের নোট্স্ আর খাতা আছে কিন্তু এত সুন্দর বৃষ্টিমাখা মেঘলা দিনে ওসব পড়া উচিত নয়।
বাইরে ছাতিম আর দেবদারু গাছ ভিজছে।খুব কমজন ক্লাসে এসেছে।যারা এসে আটকে গেছে তারা নিজের নিজের রুমে।এখানে কেউ আসবে না।আড্ডা আর গল্পের ভালই শব্দ আসছে।ওর-ও যেতে মন করছে কোনো একটা রুমে গল্প করতে।কিন্তু যেচে আলাপ ওর দ্বারা হবে না। ও যেচে কথা বলতে কেমন সংকোচ বোধ করে।
বৃষ্টিটা বড় সুন্দর হচ্ছিল।মনটা ভালো হয়ে গেল।বৃষ্টি দেখেও তো বেশ কাটানো যায়।
বৃষ্টি দেখতে দেখতেই ও নিজের মত গান গাইতে লাগল।অনেকে বলে ও নিশ্চয়ই গায়িকা হবে।জ্ঞান হওয়া অব্দি ও গান শিখে আসছে।স্কুলেও অফ পিরিয়ডে ওকে গান শোনাতে হত ।
ও নিজের অজান্তেই গানে ডুবে গাইতে লাগল।"রুম ঝুম ঝুম ঝুম রুম ঝুম ঝুম
খেজুর পাতার নূপুর বাজায়ে কে যায় ।
ওড়না তাহার ঘূর্ণী হাওয়ায় দোলে
কুসুম ছড়ায় পথের বালুকায় ।।তার ভুরুর ধনুক বেঁকে ওঠে তনুর তলোয়ার
সে যেতে যেতে ছড়ায় পথে পাথর কুচির হার ।
তার ডালিম ফুলের ডালি
গোলাপ গালের লালি
ঈদের চাঁদ – ও চায় ।।আরবী ঘোড়ার সওয়ার বাদশাজাদা বুঝি
সাহারাতে ফেরে কোন মরীচিকায় খুঁজি ।
কত তরুণ মুসাফির পথ হারালো হায় !
কত বনের হরিণ মরে তারি রূপ তৃষায় ।"