স্মৃতিটূকু থাক

37 0 0
                                    

আগের বছর তিন বছরের বহু সাধ্যসাধনার পর দুই দিনের জন্য মা মামা বাড়ি যেতে রাজি হয়েছিল। পূর্বকথা বলা প্রয়োজন। আমি আট বছরে মাতামহীকে আর দশ বছরে মাতামহ- আমার দাদুকে চিরদিনের মত হারিয়েছি।তারপর থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে মায়ের মামাবাড়ি যাওয়া কমতে থাকল।একরাত কি তাও না।

এবারও দুরাত দুদিন।অমৃত একবিন্দুও অমৃত।আমি রাজি।এক দুপুরের পর না না পুরো বিকেলে আমরা মানে মা, আমি ,আমার দুই বোন, দশ মাসের ভাইটা, ছোটো মামু, ছোটো মামীমা আর ড্রাইভার কাকু মিলে চললাম - আমার স্বপ্নপুরী-মামাবাড়ি.......।

ভাই এই দ্বিতীয়বার গাড়ি চাপল।হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে।ও অবাক হয়ে কী জানি দেখবে।চোখাচোখি হলেই মুখ লুকিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মিষ্টি কিনতে নামা হল।অনেকদিন পর যাওয়া হচ্ছে।তাই সবাইকার জন্য মিষ্টি নিতে হবে।মা আর মামু নামল।দ্য গ্রেট আমিও নামলাম।

এরপর মা আর মামুর মিষ্টি ঝগড়া।তিন বছরের ছোটো বড়।তাই আঁচল ধরা বয়স থেকে একে অপরের ছায়া- আজও।

- এটা নে।

- এটা বেশিদিন থাকবে না।

- এটা আর এটা আর এটা নিচ্ছি ওদের জন্য।

- ভাইফোঁটার জন্য কিছু নে।

- পরশু পর্যন্ত টকে যাবে।মেজদাকে ধবনী থেকে আনা করাব।

- ঠিক আছে।এটাও নে।

ড্রাইভার কাকু দুবার বিরক্ত হয়ে বলে গেছে।তবুও।এবার আমি হেসে ফেললাম। বোন বলল- মা ! তাড়াতাড়ি কর।

কেনা শুরু হলে আমি গাড়ির কাছে গেলাম।"কি দেখিলাম!জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না"। না, জন্মজন্মান্তর না হোক।অনেক দিন ভুলব না।ভাই গাড়ির খোলা জানালার কাছে এসেছে।মামীমা ধরে রেখেছে।ও নিজের মত ঝাঁপাচ্ছে আর কী সব -' ইইইইইইইইই- তা তা তাতাততাতাতা' করে যাচ্ছে।ওদের ঐ জগতে আমার কোনো প্রবেশাধিকার নেই।তাই ভাবার্থ করা গেল না। পড়ন্ত বিকেলের হঠাৎ দেখা এই দৃশ্যটা আমি অনেকদিন ভুলব না।খুব মিষ্টি দৃশ্যটা ।

একটা কথা খুব মনে হয়।এটা ভগবানের একচোখামি।সমস্ত সৌন্দর্য, মাধুর্য, স্নিগ্ধতা, পবিত্রতা শুধু বাচ্চাদের কেন দেবে।এটা অন্যায়।ওরা বিন্দুমাত্র মেকাপ, দামী চাকচিক্যময় পোশাক, উগ্রতার লেশমাত্র না রেখেও এত সুন্দর কেন।যেখানে বাকি সবাই এত পরিশ্রম করে সাজে, যত্ন করে।পোশাকে, প্রোডাক্টে তবুও ওদের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারে না।ওদের তো সব দাঁত থাকে না, হাঁটতে পারে না তাও। বন্ধু নেই, আড্ডা নেই, লেখাপড়ার ল জানে না, টিভি বোঝে না, গল্প পড়ে না,কেউ করলে বুঝতেও পারে না,গান বোঝে না, ফোন - সোশ্যাল মিডিয়া জানে না,বোধশক্তিও তো নেই, ফুচকা-ফাস্ট ফুড খেতে গল্প করা বোঝে না।তাও এত খুশি থাকে কেন।শুধু নিজে কেন চারপাশে ওদের এত স্ট্রং অরা কাজ করে যে ওদের কাছাকাছি কোনো নেগেটিভ এনার্জি আসতে পারে না।খুব দুঃখিও কিছুক্ষণের জন্য হালকা হেসে ফেলে।সদাব্যস্ত,সদাআনন্দময়।উকিল হলে এর বিরুদ্ধে একটা কেস লড়ব।যাইহোক এর বিহিত পরে করা যাবে আপাতত জার্নি।

স্মৃতিটুকু থাকWhere stories live. Discover now