লেখা- পাগলির পাগল
- এই শোনো ,
- জি ম্যাডাম বলেন ।
- অফিসে গিয়ে ফোন করবে কিন্তুু।
- আচ্ছা ঠিক আছে যাই ।
- এই শোনো !
- আবার !
- যাই না বলো আসি ।
- আচ্ছা আসি ।
- শোনো !!!
- উফফ তোমাকে নিয়ে আর পারলাম
না ।
- সাবধানে যাবে কিন্তুু... রাস্তা দিয়ে
হাঁটার সময় ফোনে কথা বলবা না
একদম ।।
- আচ্ছা ।
- তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু !
- আচ্ছা , মিরা একটা কথা বলি ???
- হুম বলো ।
- আমাকে ছাড়া দু ঘন্টা থাকতে
পারো না , যদি হঠাৎ মারা যাই
তাহলে...
আর বলতে দিবে না মিরা । রাফসানের
মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিল মিরা ।।।
___ মিরা কাঁদছে । আজ নতুন নয় ।
প্রতিদিন সকালের চিত্র ।।।
রাফসানের অফিস যেতে প্রায়ই লেট
হয় । এজন্য অবশ্য প্রতিদিনই
অনেকের কটু কথা শুনতে হয় তাকে ।
কিন্তু তাতে কি ??? একশ জনের
মুখের কটু কথা শোনার চেয়ে যে
একজনের মুখে ভালবাসার ডাকটা
অনেক মধুর...
...
রাফসান ও মিরার টুনা টুনির সংসার ।
সারাদিন দুজনের মাঝে তর্কাতর্কি
লেগেই থাকে কিন্তু এক জায়গায়
এসে দুজনই সমান্তরাল । তা হলো ,
কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহুর্ত্বও
থাকতে পারে না । তাদের বিয়ের প্রায়
তিনমাস হতে চললো , কিন্তু এখন
পর্যন্ত এখনও দুজন আলাদা রাত
কাটায় নি । কাটায় নি বললে ভুল হবে ।
কাটাতে পারি নি । মাঝে মাঝে ঝগড়ার
পর দুজন দুরুমে ঘুমাতো । কিন্তু
মধ্যরাতে দেখা যেত এক খাটেই শুয়ে
আছে তারা...
- ঐ তুমি এখানে কেন ?
- আমি জানি না তো ? তুমি এখানে
কেন ?
- আমিও তো জানি না ।
___তারপর দুজন দুজনের দিকে
তাকিয়ে একটু হাসি । এরপর মিরার
অভিমানি কান্না । শেষে রাফসান
যখন চোখটা মুছে বুকে জড়িয়ে
ধরতো তখন মিরা তার সমস্ত দুঃখ
ভুলে যেত ।।
- এই
- ঊ
- ঘুমিয়ে পড়েছ ?
- হু
- চলো না ছাদে যাই ।
- উহু
- দেখ কত সুন্দর চাঁদ উঠেছে ।। চল
না যাই...
...
মিরার অনিচ্ছাসত্ত্বেওতখন ছাদে
যেতে হত । দুজন মিলে বসে বসে
জোৎসাস্নান করতো । মিরা গুনগুন
করে গান করতো আর রাফসানের
মাথায় হাত বুলিয়ে দিত ।।
- ঐ মিরা শোন
- হুম বলো ,
- দেখ চাঁদটা কত সুন্দর ।।
- হ্যা অনেক সুন্দর ।
- জানো মিরা আমার না খুব গর্ব
হচ্ছে ।
- কেন ??
- কেন আবার ! চাঁদের খুব অহংকার ।
সে নিজেকে খুব সুন্দর ভাবে । কিন্তু
আমি এখন জিতে গিয়েছি । চাঁদের
চেয়ে সুন্দর আমার বউ আছে ।।।
___"এই চাঁদ দেখ । তোর না খুব
অহংকার । দেখ তোর চেয়ে সুন্দর
আমার মিরা । দেখ তুই..."
রাফসানের পাগলামি দেখে হাসতো
মিরা । রাতের অন্ধকারে খিলখিল সে
হাসির শব্দে হারিয়ে যেত রাফসান
কোন এক অজানা জগতে । মিরা হাসি
থামিয়ে এই যে ডাকতো তাকে তাও
সে মিরার থেকে চোখ সড়াতো না ।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো সে
তার দিকে...
তারপর যখন তার কপালে মিরার উষ্ণ
ঠোটজোড়ার স্বর্শ করতো তখন
মতিভ্রম ভাঙ্গতো রাফসানের...
এরপর অনেক কিছুই হত । তা দেখে
লজ্জায় চাঁদটাও মেঘের আড়ালে
চলে যেত । দূরের ঝিঝি পোকারাও
ঝিঝি শব্দ থামিয়ে দিত , কোন
নিশাচরী পাখিও তখন টু শব্দ করতো
না । প্রকৃতিও তাদের ভালবাসায় সায়
দিত । দখিনা হাওয়ায় তাদের
ভালবাসাকে শীতল স্পর্শে রাঙিয়ে
দিয়ে আস্তে আস্তে পুব আকাশে
ভোরের লাল আলো ফুটে উঠতো ।।
...
পৃথিবীর সকল মানুষই কাউকে না
কাউকে ভালবাসে । এটা আর নতুন
কিছু নয় । কিন্তু ভালবাসাটাই যখন
একজন মানুষকে ভালবাসতে শুরু করে
তখনই শুরু হয় বিপত্তি ।। মানুষ
ভালবাসা হারালেও তখন ভালবাসা
মানুষকে ছাড়ে না ।। ভালবাসা
হারানোর বেদনায় মানুষ তখন মুষড়ে
পড়ে...
...
মিরার বাবা মিরাকে তাদের বাসায়
নিতে এসেছে । এদিকে রাফসানেরও
অফিস থেকে ছুটি দিতে চাচ্ছিল না ।
তাই বাধ্য হয়েই মিরাকে তার বাবার
সাথে পাঠাতে হলো ।।।
___বাবার সাথে যাওয়ার সময় মিরার
সে কি কান্না...
...
আজ বিয়ের পর প্রথম রাফসান একা
রাত কাটাচ্ছে । অসহ্য মনে হচ্ছে
সবকিছু । যে চাঁদের আলো সে এতটা
ভালবাসতো সেই চাঁদের আলোকে
সে আজ সহ্য করতে পারছে না ।
জানালা বন্ধ করে বসে আছে ।।
___মানুষের মন হচ্ছে পৃথিবীর
সবচাইতে বড় আশ্চর্য । যখন
আপনার মন ভাল থাকবে তখন
আপনার সব কিছু ভাল লাগবে । একটা
তেলাপোকা উড়ে যাবে আপনার
সামনে দিয়ে তখন আপনার মনে হবে ,
আহ ! কি সুন্দর তেলাপোকা । কত
সুন্দর করে উড়ে যাচ্ছে !! আবার
যখন মন খারাপ থাকবে তখন
ঐশ্ব্যরিয়াকে দেখেও আপনার
অসহ্য লাগবে... মনে হবে , ধুর সে
কোন সুন্দরী হল ! কিভাবে যে
বিশ্বসুন্দরী হল , যত্তসব !
...
- হ্যালো ,
- কাঁদছো কেন তুমি মিরা ?
- আমার ভাল লাগছে না কিছু দম বন্ধ
হয়ে আসছে ।
- আরে পাগলী মেয়ে মাত্র তো দুটা
দিন ।
- আমি পারছি না রাফসান । প্লিজ
তুমি আসো...
- ঢঙ রেখে তুমি ঘুমাও তো । আমার
অনেক ঘুম পেয়েছে...
___সে চায় না মিরা বুঝুক সেও কষ্ট
পাচ্ছে । তাহলে হয়তো মিরার
কষ্টের পরিমাণটা আরও বাড়বে...
...
দুপুরবেলা মিরা বসে আছে তার
মায়ের সাথে । এমন সময় তার
ফোনটা বেজে উঠলো ,
- হ্যালো
- জি বলুন ,
- আপনি রাফসান সাহেবের কে
হোন ?
- জি আমি তার স্ত্রী ।।
- এক্ষুণি একটু জেলা হাসপাতালে
আসুন তো , কিছুক্ষণ আগে
ময়মনসিংহ থেকে আসা একটি বাস
এক্সিডেন্ট করেছে , আপনার
স্বামীর অবস্থা ভাল নয়...
___ মিরা তার নিজের কানকে বিশ্বাস
করতে পারছে না । এ কি করে
সম্ভব !
"মাআআআ..." বলে চিৎকার করেই
অজ্ঞান হয়ে গেল মিরা...
...
হাসপাতালে আঠারোটা লাশ
সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে । খুব
বাজে এক্সিডেন্ট হয়েছে ।
প্রত্যেকটা লাশের অবস্থা খুব
খারাপ । কাউকে দেখে চেনার উপায়
নেই...
___ রাফসান তার বুকে লেখেছিল
মীরার নাম । একটা লাশের বুকে MIRA
এর শুধু শেষ দুটো অক্ষর দেখা গেল
RA...
তা দেখে মিরা এই যে চুপ হল ।
এখনও পর্যন্ত কোন কথা বলে না ।
সারাদিন চুপ করে বসে থাকে । কারও
সাথে কথা বলে না । অনেক ডাক্তার
দেখানো হয়েছে কিন্তু মিরার মুখ
কেউ খুলতে পারে নি । মিরা প্রতিদিন
পথ চেয়ে বসে থাকে তার রাফসান
আসবে । ফিরে আসবে আবার । কিন্তু
রাফসান আসে না । আসবেও না ।
মিরার নির্বাক প্রতীক্ষাও শেষ হয়
না । হবেও না । এভাবেই সে নিশ্চুপ
পাথরের মত তাকিয়ে থাকে পথের
দিকে , সে ভাবে একটু পরেই রাফসান
একটা গোলাপ হাত দৌড়ে আসবে...
কিন্তু এ যে হবে না । হবার নয়..