Part 0

3.1K 141 18
                                    


অামার কাছের দূরের সব কাজিনদের মধ্যে পপুলার হলেন, মাহবুব ভাই। ফ্যামিলি অকেশান ছাড়া তাঁর সাথে খুব অল্প দেখা হয়।
কলেজিয়েটে পড়েন।ভীষণ ভীষণ মেধাবী।সবথেকে বুদ্ধি বেশি উনার!
শুধু অামায় দেখতে পারেন না।
ছোটবেলায় অামি নানুবাড়িতে একবার বিছানায় পেশাব করে দিলাম।বিছানার কাঁথার নিচে ছোট মামানির টাকা ছিলো।সব টাকা ভিজে গেলো।
সবাই ছড়িয়ে দিলো, "নিতু টাকায় মুতে দিসে"।
মাহবুব ভাই তারপর থেকে দেখা হলেই,
--, তোর খবর কি??টাকায় মুতামুতি কেমন চলছে??মুততে থাক, সারা বাংলাদেশের সব টাকা ডুবিয়ে ফেল!!তোর মুতে টাকা হবে মুত্রময়!!হা হা হা
অামি কান্না কান্না মুখ করে তাকাতাম।
মনে মনে বলতাম, সবাই বলুক মাহবুব ভাই অাপনি কেনো বলবেন?অাপনি অামার কত প্রিয় জানেন??
কিশোর বয়সে,
পৃথিবীর সব নিষিদ্ধ বিষয়, তাঁর অালোচনার বস্তু।যখনি সবাই একসাথে হতো; রাতে সবাইকে গোল করে বসিয়ে নিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাবে চাপা গলায় গল্প করেন, যেমন,
---বুঝলি,ছেলেদের সবথেকে সেনসিটিভ বিষয় হলো......
এই নিতু, তুই এখানে কেনো?? তুই বাদ।এই গল্প শোনার বয়স তোর হয়নি!!যা ভাগ...তুই গিয়ে তোর মুতামুতি কর!!
অামি যাবার ভংগি করেও যেতাম না।মাহবুব ভাই'র গল্প শুনতাম।ইস মানুষটা কত কিছু যে জানে...
মাহবুব ভাইরা শহরে থাকেন।অামরা মফস্বলে! তাঁর সাথে দেখা হবার জন্য মুখিয়ে থাকতাম।অার তিনি
কদাচিৎ দেখা হলেই,
---মুত্রকন্যা, কেমন অাছিস?? প্রতি বছর একটা টার্গেট রাখবি, বুঝলি?ঠিক কত টাকা তুই মুতে ভেজাবি।টার্গেট ফিলাপ করতে হবে। তা এখনও কি এমন করিস??
অামার ভীষণ কষ্ট হতো..লজ্জায় উনার সামনে থেকে ভেনিশ হয়ে যেতো মন চাইতো।
অামার এস.এস.সি পর মেজো অান্টির বিয়েতে দেখা হলো,
উনি তখন বিমানবাহিনীতে সবে ঢুকেছেন।টগবগে তরুণ! উনাকে দেখতে যে তখন কি ভালো দেখায়। ভীষণ লম্বা, গভীর চোখ, অার সবথেকে সুন্দর উনার হাসি।শুধু মাথাভর্তি ঝাকরা চুলটাই ছোট করে ছাটা।
ইস! এমন হ্যান্ডসাম ছেলে সারা পৃথিবীতেই বুঝি অার একটাও নেই।পৃথিবীতে কেনো, অাশে পাশের কোনো গ্রহেও নেই।
মানুষ কাউকে পছন্দ করলে হৃদয় হারিয়ে ফেলে, মাহবুব ভাই'র জন্য অামি তখন সমস্ত হৃদয়ের অস্থিরতা টুকুও হারালাম।
একটু অাধটু গান গাই তখন।হলুদ রাতে তাঁকে মুগ্ধ করার জন্য গান করলাম।
গান শুনে উনি খুব গম্ভীরভাবে বললেন,
--- সবই ঠিকাছে মুতুকন্যা, শুধু গান থেকে হালকা মুতের গন্ধ বের হয়েছে।
কষ্টে অামার চোখে পানি এসে গেলো।লজ্জায় পাথর হয়ে অামি যেনো দাঁড়াতেই পারছিলাম না।
উনার অবহেলায়,
বুক ফেটে যেতো, মনে মনে বলতাম,
অাপনি কেনো এরকম করেন মাহবুব ভাই?অাপনি অামাকে নিয়ে ঠাট্টা করলে অামার মরে যেতে ইচ্ছা করে।অাপনি কি জানেন, প্রতিরাতে অামি যখন অাপনার ছবির দিকে তাকাই, অামার বুক কাঁপে, লক্ষকোটি গুণ গতিতে হৃদয় ধুকপুক করে।অানন্দে কাঁদতে ইচ্ছা করে।
অামার একটু, সাজগোছ, শাড়ি পড়া সব অাপনার জন্য।
অামার ইন্টারমিডিয়েটের সময় দাদুবাড়ির এক ফাংশানে উনার কলজিয়েটে পড়াকালীন স্কুলের অনেক বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে এলেন।সেখানে তিনটা অাপু এত স্মার্ট! চুল স্ট্রেইট, জিন্স টপস পড়নে ;কড়া লিপস্টিক, হাতে দামী ফোন, গুছিয়ে কথা বলেন।কি যে সুন্দরী!!
এত স্মার্ট বান্ধবীদের দেখার পর অামার মন ছোট হয়ে গেলো।
অামি মফস্বলের মেয়ে, দেখতে অাহামরি রূপবতী ও নই, কথা বলতে গেলে অাঞ্চলিক টান চলে অাসে, ছাত্রী হিসেবে মিডিয়াম, কমনটাইপের সালোয়ারকামিজ অার শাড়ির বাইরে অন্য পোশাক ভাবতেই পারিনা, ভীতুর চূড়ান্ত।
যার এত হাই প্রোফাইলের বান্ধবী অাছে, সে নিশ্চয় অামাতে মুগ্ধ হবেনা।
তাঁকে মুগ্ধ করবার কোনো সাধ্যি অামার নেই।কনফার্ম!
জীবনে অনেক প্রিয় জিনিস অন্যের জন্য সহজেই ছেড়ে দিয়েছি অামি, এই প্রথম নিজের অযোগ্যতার জন্য মাহবুব ভাইকে ভাবা ছেড়ে দিলাম।
সিরিয়াস হয়ে গেলাম, অার কখনো মাহবুব ভাই'র সামনে পড়বো না ঠিক করলাম।কষ্ট হলো খুববববব!তাঁকে ভুলবার জন্য পড়াশোনায় ডুবে গেলাম।সব ধরনের ফ্যামিলি ফাংশানে যাওয়া অফ করে দিলাম।কখনো সখনো উনি ফোন করলে, অামি ধরতাম না।ছোটবেলাকার দীর্ঘদিনের এই অাবেগ থেকে মুক্তির ব্যাপারটা অামার জন্য অত সহজ ছিলোনা।
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর, অাত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে সম্বন্ধ অাসতে থাকলো, বাড়িতে স্পেসিফিক করে জানিয়ে দিলাম,
---অাত্মীয় অার ক্লাসমেট অামি বিয়ে করবোনা।মান্যিগণ্যি থাকেনা তাতে।
সো এই দুই ক্যাটাগরির কোনো সম্বন্ধ এলে, স্ট্রেট নো।
মনে মনে ঠিক করলাম, বিয়েই করবোনা জীবনে।
তাঁর প্রায় ২বছর পর, একদিন অামার
ভার্সিটিতে মাহবুব ভাই এসে হাজির।চোখ লাল, বিষন্ন মুখ,
রাগে প্রায় চিৎকার করে বললেন,
--অনেক বেশি বুঝিস তুই; তাইনা?তোর কিছু জানিনা মনে করিস!
অামি বিস্ময়ে হতভম্ব!!

মাহবুব ভাইWhere stories live. Discover now