-"আমার জিনিস কইরে?"
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বোনের দিকে একনজর তাকিয়ে মুবিন বললো,
-"প্রতিবারই তোর জন্য কিছু না কিছু আনতেই হবে?"
-"তা আনতে হবে না? দুটো নয় তিনটে নয় তোমাদের একমাত্র আদরের ছোট বোন আমি।"
-"আহারে! তাতে যেন উনি সব উদ্ধার করে ফেলেছে!"
-"এমন করলে কিন্তু হবে না। ভালোই ভালোই কী এনেছো দেখিয়ে দাও।"
ক্লান্ত শরীর বিছানায় মেলে ঠোঁট ভর্তি হাসির ফোয়াড়া ছেড়ে বোনের দিকে তাকালো মুবিন। ভার্সিটি থেকে সকাল সকাল রওনা হলেও গ্রামে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়ে গেছে। ভাইয়ের বিয়ের খবর হঠাৎ করে পাবার ফলে টিকেট কাটার মতো সময় না পাওয়াতে অর্ধেক পথ দাঁড়িয়েই আসতে হয়েছে তাকে। যার ফলে কোমরটা ব্যথায় চিনচিন করছে। তবুও এসবের মাঝে ছোট্ট বোনটির একেকটি কর্মকাণ্ড যেন শান্তির অপর নাম। হাজারো ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার পর বোনের প্রতিটি মুখের ধ্বনি নতুন উদ্যমে চলার শক্তি বয়ে আনে। এরই নাম বুঝি ভাইবোনের ভালোবাসা!
-"তুমি কী সত্যিই আমার জন্য কিছু আনো নি?"
বোনের অসহায় মাখা মুখের দিকে চেয়ে এপর্যায়ে মুবিন বললো,
-"ব্যাগ খুলে দেখ..."
ভাইয়ের অনুমতি পাওয়া মাত্র ব্যাগ খুলে একেএকে সব বের করতে শুরু করলো অনা। কিছু চকলেটসহ একটি বই হাতে নিয়ে সে এগিয়ে এল মুবিনের দিকে। মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে বললো,
-"আমার সাজগোজের জিনিস কই? তাছাড়া বই এনেছো কেনো? আমি কী এসব পড়ি?"
-"পড়িস না?"
-"উহু.. তবে থাক! চৈতালি বই পড়তে ভালোবাসে। ওকেই না হয় বইটি দিয়ে দিব।"
-"চৈতালি টা কে?"
-"আরে.. চৈতালি আমার বান্ধবী। তুমি কেনো যে ওর নাম মনে রাখতে পারো না!"
-"অহ.. হ্যাঁ। মনে পড়েছে।"
-"বেশ হয়েছে। এবার চলো। নিচে হলুদ নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। মেজভাইকে এক চিমটি হলুদ লাগিয়ে দিয়ে এসো তো!"
শরীর সায় না দিলেও বোনের কথামতো বিছানা ছেড়ে উঠে একটি টিশার্ট পড়ে নিল মুবিন। তারপর আয়নায় একবার নিজের চেহারা দেখে চোখে চশমা চাপিয়ে এগুলো বোনের পিছুপিছু। আজকাল পড়াশোনার চাপ খুব বেড়ে গেছে। রাত জেগে পড়লেই মাথার যন্ত্রনায় ছটফট করতে হয় সারাদিন। এমবিএটা কোনোমতে শেষ করলেই এসবের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভেবে নিজেকে বুঝ দিয়ে আসলেও আজকাল বুঝেও শরীর টিকছে না। পড়াশোনার সকল অধ্যায় কবে চুকবে কে জানে!
-"মুবিন ভাই না? কেমন আছেন?"
একপলক পাশ ফিরেই চোখ সরিয়ে নিল মুবিন। অস্পষ্ট গলায় জবাব দিল,
-"ভালো.."
-"ভালো থাকলেই ভালো। তা দিনকাল ভালো যাচ্ছে তো? শুনলাম আপনার নাকি ভার্সিটির কোন মেয়েকে মনে ধরেছে!"
চৈতালির কথা শেষ হতেই মুবিনের ফর্সা টসটসে মুখ নিমেষেই কুচকে লাল হয়ে এল। কঠিন কিছু কথা চৈতালির উদ্দেশ্যে শোনাতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল সে। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ের মুখে হলুদের ছোঁয়া লাগিয়ে তার পাশে বসলো মুবিন। উদাস মনে আশেপাশের পরিবেশের দিকে দৃষ্টি দিতেই মাথা বেয়ে শরীরে পানির উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অনা এবং চৈতালি। কী হলো এটা? তাকে ছাড়া আর কেউ কী নজরে আসেনি তাদের?