-"কথা বলবি না আমার সাথে? সত্যিই কথা বলবি না?"
অপরপাশ থেকে অনার কোনো জবাব না পেয়ে উদ্বিগ্ন হলো চৈতালি। অনা তার উপর রাগ করেছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে ঠিক কী কারণে? গতকাল মুবিন যাবার পর মন ভালো না থাকায় আজ সারাদিন এবাড়িতে আসাও হয় নি তার। এরমাঝে কী এমন হলো যে একদম কথাবার্তায় বন্ধ করে দিল অনা? বোধগম্য হলো না চৈতালির। নিজের দু'হাতে দু'কান ধরলো সে। তারপর আবারও অসহায় গলায় বললো,
-"আমি কী করেছি এটা তো আমায় বল! না বললে বুঝবো কী করে? এই অনা? এদিকে একটু তাকা। দেখ তোর রাগ ভাঙ্গাতে তোর চিতৈই পিঠা কান পর্যন্ত ধরেছে।"
একনজর চৈতালিকে দেখে আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিল অনা। তারপর তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
-"আমি কারোর উপর কোনো রাগ করিনি।"
-"তাহলে কথা বলছিস না কেন?"
-"কথা বলতে ইচ্ছে না করলেও কথা বলতে হবে কেন?"
-"তো কথা বলতে ইচ্ছে করবে না কেন?"
-"নাই করতে পারে। তুই যা তো এখন।"
-"কেনো যাবো? আমি আজ আরও আসলাম তোর সাথে রাতে থাকবো বলে!"
-"যা তো তুই। বিরক্ত করিস না।!"
হঠাৎ অনার চিৎকারে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো চৈতালি। মন অসম্ভব খারাপ হয়ে এল তার। এরকম কেনো করছে অনা ভেবে পেল না সে। অনা খানিকটা জেদি স্বভাবের। তবে কখনোই সে নিজের জেদ বন্ধুত্বের মাঝে আনেনি। মনোমালিন্য হওয়া তো দূরের কথা। তাহলে আজ হঠাৎ করেই কী এমন হলো যে তার সঙ্গে এতটা দুর্ব্যবহার করছে অনা! খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো চৈতালি। তবে মাঝপথে এসেই থেমে আরও একবার ধরা গলায় বললো,
-"সত্যিই চলে যাবো?"
-"হ্যাঁ, যা..."
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটি বলে চোখ জোড়া বন্ধ করলো অনা। চৈতালি তার ছোটবেলার বন্ধু। সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ তার জীবনের এতবড় একটি সত্য কী করে লুকিয়ে রাখলো সে? তাও তার ভাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে! কী দুর্দান্ত অভিনয় তাদের! যেনো একে অপরকে চেনে জানেই না! নাম মনে রাখা তো দূরের কথা। কিভাবে পারলো তারা এসব করতে? এভাবে কয় বছর যাবৎ তারা এ অভিনয় অভিনয় খেলছে কে জানে! কী এমন হতো তাকে সবটা জানালে? সে কী চৈতালির শুভাকাঙ্ক্ষী নয়? তারপরও কেনো চৈতালি জানালো না তাকে? লম্বা করে দম ছেড়ে বিছানা ছেড়ে নেমে আলমারি খুলে ছবির একটি অ্যালবাম বের করলো অনা। তারপর তার এবং চৈতালির সকল ছবি বেছে আলাদা করে একটি মোম জ্বালিয়ে পোড়াতে শুরু করলো ছবিগুলোর একপাশ থেকে চৈতালিকে।