রাতের আকাশে তারারা দল বেধে ছোটাছুটি করছে। যেনো নিকষ কালো আঁধার আকাশে তাদের মেলা বসেছে। বাড়ি থাকতে এমন তারাভরা রাতের আকাশ সুহাকে নিয়ে প্রায়ই উপভোগ করা হতো। তবে আজ পাশে নেই সুহা। একাকী বসে তারার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা কামড়ে ধরছে কেউ৷ কী করছে সুহা? ছোটমা খোকনের মতোই আদর করে কি সুহাকে? হয়তো না। তবে যে কথা দিয়েছিল ছোটমা!
-"কী করছো একা বসে বসে?"
মেসবাহর গলার স্বরে ঘোর কাটলো উল্লাসীর৷ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেসবাহকে বসার জায়গা করে দিতেই বাধা দিল সে। নরম গলায় বললো,
-"তুমি বসো.. আমি আরেকটা চেয়ার আনছি ভেতর থেকে।"
তবুও বসলো না উল্লাসী। ঠাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো মেসবাহর জন্য। লোকটি মাঝেমাঝে খুব বকে তাকে, আবার মাঝেমাঝে খুবই ভালোবাসে। যেমনটা তার মা বেঁচে থাকতে তার মাকে ভালোবাসতো তার বাবা...
ব্যালকনিতে চেয়ার এনে তাতে বসলো মেসবাহ। তারপর উল্লাসীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
-"বসে পড়ো.. এত সম্মান দেখাতে হবে না।"
দু'কদম এগিয়ে চেয়ারে বসলো উল্লাসী। তারপর উদাস গলায় বললো,
-"বাবা মাকে যতটা ভালোবাসতো আপনিও কি আমায় ততোটাই ভালোবাসেন?"
বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে উঠলো মেসবাহর। বাতাসে সজোরে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাঙ্গা গলায় সে বললো,
-"ভালোবাসার মানে বোঝো?"
-"উহু.. তবে এটুকু জানি বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতে হয়।"
-"কে বলেছে এসব?"
-"ছোটমা বলেছে। আপনাদের বাড়িতে আসার পর অর্পা আপাও বলেছে।"
-"আর কী বলেছে?"
-"ছোটমা না অর্পা আপা?"
-"বড় আপা.."
-"উনি তো অনেক কথাই বলেছেন। এই যেমন আপনার সামনে সবসময় সেজেগুজে থাকতে বলেছে, আপনার সামনে শাড়ি আঁচল ঠিকঠাক ভাবে নিতে নিষেধ করেছেন। এমন ভাবে নিতে বলেছেন যাতে কোমর এবং বুক দুই-ই দেখা যায়।"
হালকা কেশে উঠলো মেসবাহ। প্রসঙ্গ পালটাতে বললো,
-"তুমি আজ মুন্নি ভাবিকে উলোটপালোট কিছু বলো নি তো? ভাবি আজ আমায় কিছু একটা বলতে চাইছিল।"
-"উহু.. তেমন কোনো কথাই আমি বলিনি। তাছাড়া উনি কালকের মতো তেমন কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। করলে আবারও জানিনা জানিনা বলে কাটিয়ে দিতাম।"
মৃদু হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। বললো,
-"চলো, শুয়ে পড়ি। রাত অনেক হয়েছে।"
-"আরেকটু থাকি?"
-"না.. চলো চলো।"
একরকম জোর করেই উল্লাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে এল মেসবাহ। তারপর উল্লাসীকে বিছানা গোছাতে বলে সে এগুলো ওয়াশরুমের দিকে। বড় আপা বাচ্চা এক মেয়েকে এসব অশ্লীলতা কিভাবে শেখায় তা মোটেও মাথায় আসছে না তার।