কুলকুল করে ঘামতে শুরু করেছে মেসবাহ। রাগের মাথায় সত্যিটা এভাবে বলে দিল সে? একবারো ভাবলো না পরবর্তীতে এটি কতবড় আকার ধারণ করবে? সাথে ফলস্বরূপ বাঁশ বাগান তো রয়েছেই। কপালের ঘাম মুছে সোফায় বসে পড়লো সে। করুণ দৃষ্টিতে তাকালো মুন্নি সরকারের দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যে তাকিয়ে রয়েছে তারই দিকে।
-"উল্লাসী তোমার বউ?"
মুন্নি সরকারের কথার পিঠে কোনো জবাব দিল না মেসবাহ। ভাবতে লাগলো ভয়ংকর এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটি উপায়...
-"কথা বলছো না কেনো? উল্লাসী তোমার বউ?"
-"জ্বি.."
-"তাহলে এতদিন বউকে বোন বলেছো কেনো?"
ঢোক গিলে পরিস্থিতি সামলাতে আবারও উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। গলা খাকড়ি দিয়ে সামান্য এগিয়ে এল মুন্নি সরকারের দিকে। তারপর স্থির গলায় বললো,
-"বোন বলিনি। দুঃসম্পর্কের বোন বলেছি। দুঃসম্পর্কের বোনও তো মাঝেমাঝে বউ হয়। তাই না?"
-"হলে হয়। তবে তুমি মিথ্যে বলেছো। সকলের কাছে নিজের বউকে বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছো।"
-"আলাদা করে আমি কারো সাথেই উল্লাসীকে দুঃসম্পর্কের বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেইনি আপনি ছাড়া। আপনার জোরাজুরির সাথে না পেরে উঠে আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। আর বাদবাকি ছড়ানোর কাজটা আপনি করেছেন। তাহলে এখানে মিথ্যে কে বলেছে.. বলুন?"
ফুসে উঠলো মুন্নি সরকার,
-"একদম কনফিউজড করো না আমাকে। একদম না। এই আম্মা ওঠো তো। এসবের শেষ আজ আমিই দেখেই ছাড়বো।"
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে শায়লা বেগম বললেন,
-"তুই চুপ করতো। তোরে বারবার আমি কইছি, আগে ভালো করে খোঁজ খবর নে। কিন্তু তুই শুনলে তো! প্রত্যেক বিষয়েই এত নাচানাচি করলে চলে?"
-"না চললে নাই। মেসবাহর মনের ভেতর কি আমি বসে রইছিলাম যে ওর মিথ্যে কথা আমি ধরতে পারবো?"
পাশ থেকে মেসবাহ বললো,
-"আমি তো মিথ্যে বলিনি।"
-"আবারও বলছো মিথ্যা বলোনি?"
-"হ্যাঁ.. উল্লাসী আমার দুঃসম্পর্কের বোনও হয়।"
-"তো? বিয়ের পর বউকে তুমি বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবা?"
আবারও কপালের ঘাম মুছলো মেসবাহ। এ কেমন অবস্থায় পড়লো সে! কী দরকার ছিল উল্লাসীকে দুঃসম্পর্কের বোন হিসেবে পরিচয় করে দেয়ার? সত্যিটা বললে আর যাই হোক আজকের মতো পরিস্থিতিতে তো পড়তে হতো না!
-"বিয়েই তো আমাদের হয়নি। না মানে গ্রামে হয়েছে। এখানে তো হয়নি। তাই গ্রামে উল্লাসী আমার বউ। আর এখানে দুঃসম্পর্কের বোন।"
-"মানে? তুমি আবারও আমাকে কনফিউজড করছো!"
-"মোটেও না, ভাবি। এই যেমন ধরেন আপনি হাসান ভাইয়ের ওয়াইফ। কিন্তু আপনারা বিয়ের আগে একে অপরকে চিনতেন না। তাই বিয়ের পর আগের সেই পরিচয় নিজেদের মাঝে বাঁচিয়েও রাখতে পারলেন না। কিন্তু এদিকে আমি আর উল্লাসী তো দুঃসম্পর্কের ভাইবোন। তাই না? তাই আমরা সেই সম্পর্কের ছিটেফোঁটা নতুন জীবনে হালকার উপর ঝাপসা হলেও রাখার চেষ্টায় আছি। বলুন, ঠিক করছি না?"
বিষয়টি বোধগম্য হলো না মুন্নি সরকারের। চিন্তিত মুখে সে বললো,
-"হ্যাঁ.. তবে বউকে বোন?"
-"বোন না বোন না। দুঃসম্পর্কের বোন।"
-"ওই হলো! উহু.. কোথাও ঘাপলা আছে। অবশ্যই আছে। সত্যিটা বলো মেসবাহ। আসল কাহিনী কী?"
মুন্নি সরকারকে ভুলিয়ে ভালিয়ে চুপ করানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিপাকে পড়লো মেসবাহ। আকাশ পাতাল ভেবেও এর জবাব না পেয়ে সে ধীর গলায় বললো,
-"এক সেকেন্ড! একটু ওয়াশরুমে যাবো আর আসবো। আপনি যাবেন না। বসুন। আমি আসছি।"
কোনোরকম দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে লিমনের নাম্বারে ডায়াল করলো মেসবাহ। দুইবারের মতো রিং বাজতেই ওপাশ থেকে লিমন ফোন ধরতেই তাকে সংক্ষেপে সবটা খুলে বললো সে। তারপর অস্থির গলায় বললো,
-"কী করবো এখন?"
-"আমি আগেই বলছিলাম তোরে! কী দরকার ছিল এসব বলার?"
-"এখন ওসব ভেবে হবে টা কী? এই মহিলাকে কিভাবে চুপ রাখবো সেটা বল। নয়তো এই মহিলা আমার মানসম্মান আর কিছু রাখবে না। পুরো সোসাইটিতে ব্যাপারটি নানানভাবে ছড়িয়ে দেবে।"
-"সময় দে একটু.."
-"সেই সময়টাই তো নেই।"
একদন্ড ভেবে লিমন ফোনের ওপাশ থেকে শীতল কন্ঠে বললো,
-"সময় যেহেতু নেই সেহেতু কমন কাহিনীই শুনিয়ে দে। সময় থাকলে না হয় আনকমন কিছে ভেবে দিতাম!"
-"কমন কাহিনীটাই কী?"
-"তুই উল্লাসী একে অপরকে পছন্দ করিস। কিন্তু উল্লাসীর বাবা ছোট মেয়ে বিয়ে দেবে না। প্লাস ওর বাবা গ্রামের সনামধন্য একজন ব্যক্তি। অনেক পাওয়ার আছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে তুই উল্লাসীরে নিয়ে ভাগছিস।"
লিমনের কথা শুনে বিস্ময়ের শেখরে পৌঁছে গেল মেসবাহ।
-"অসম্ভব!"
-"সম্ভব।"
-"মোটেও আমি এই কাজ করবো না। এতে আমার মানসম্মান যা আছে তার কাণিকোণাও আর থাকবে না।"
-"আরে শালা! প্রেম পিরিত খারাপ জিনিস না। বউকে বোন বানানোর তোমার এই অপকর্মের কথা ঢাকতে আপাতত একটা টপিক দরকার। আর আমার মনে হয়না এরচেয়ে বেটার অপশন পাবি।"
-"আমি পারবো না।"
-"না পারলে যা! পুরো সোসাইটির কাছ থেকে লুচ্চা উপাধি নিয়ে অন্য কোথাও চলে যা।"