আজকে আকাশ যেন মন খারাপের ঝুলি খুলে দিয়েছে। নিরানন্দ ভাদ্র মাসটা যেখানে রোদের ছটায় মোহময় হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে প্রবল বর্ষণের পাশাপাশি মেঘমল্লারের গান খানিকটা বিস্ময়কর বটে। রাত্রি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে মুচকি হাসলো। সে ধীরপায়ে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তার বাবার কাছে চললো, খানিকটা কাঁপা গলায় বলল"বাবা,তোমার চা"। আফজাল সাহেব পত্রিকা থেকে মুখ তুলে সরাসরি তাকালো রাত্রির দিকে।তিনি খানিকটা চমকিত হয়েছেন। রাত্রি কথা খুব কম বলে। প্রয়োজনবোধে দু-একটি কথা বলে সে। কিন্তু যখনই সে কথা বলে আফজাল সাহেবের মনে হয় যেন জলতরঙ্গ বাজছে। ছোটবেলায় দাদাকে জলতরঙ্গ বাঁজাতে দেখেছে সে।কি অপূর্ব সুন্দর সেই শব্দ!সেই শব্দ-ই যেন প্রতিধ্বনিত হয় রাত্রির কন্ঠে।তাই যতবারই সে রাত্রিকে দেখে, তার কন্ঠ শোনে, তার এমনটাই মনে হয়। " ধন্যবাদ,মা।" কোমল কন্ঠে বলল সে। ছোটবেলা থেকে এই এক মেয়েই তার পরিবার। স্ত্রীর কথা ভাবতে গিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তার। রাত্রি বাবার পাশে বসতে বসতে বললো,"বাবা আমার ভর্তির ব্যাপারে কিছু ভাবলে?" আফজাল সাহেব মেয়ের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলেন।গলা খাঁকারি দিয়ে তিনি বললেন,"হ্যাঁ মা ভাবছি। তোমার কলেজ পরিবর্তন করা লাগবে না। এখানেই থাকো।" রাত্রি প্রবল খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। বাবার দিকে মিনিট খানেক সময় তাকিয়ে থেকে বললো, "ধন্যবাদ বাবা" আফজাল সাহেব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন মেয়ের চোখে জল।মেয়ে এত অল্পতেই খুশি! তিনি ঘাড় দুলিয়ে কিসে যেন সায় দিলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে দেখলেন চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তিনি চোখ বন্ধ করে সেই বিস্বাদ চা-টুকুই গিললেন।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলেন রাত্রি চলে গেছে।তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কিজানি কার প্রতি তীব্র অভিমানে তার মন বিষিয়ে উঠলো।তিনি তীব্র বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাটির গন্ধ ভেসে আসছে। তিনি বুক ভরে শ্বাস নিলেন।
YOU ARE READING
পৌষের রোববার
Romanceভীষণ রৌদ্রতপ্ত দুপুরে, ক্ষুধায়, ক্লান্তিতে রাত্রির বিরক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে।সে ভাবছে জীবন এতো বিতৃষ্ণাময় কেনো? বাস্তবতা তাকে অল্পবয়সে এতোকিছু কেনো শেখালো? জীবন কি তার জন্য খানিকটা সহজ হতে পারতো না? সমরেশের দীপাবলি কি কখনো সে হয়ে উঠতে পারবে? নাহ...