আবার দেখা

16 0 0
                                    

গ্রীষ্মকালের কড়া রোদ একেবারে মাথার উপর উঠে রয়েছে। আমি আর আমার বন্ধুরা রাহাত একই সাথে বসে রয়েছি একটা চায়ের দোকানে। দুজন একসাথে নিজেদের গল্প করছি। হঠাৎ দেখিয়ে রাস্তার থেকে একটা যুবক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। চেহারাটা বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে। একটু কাছে এসে দেখতে পাই ওমা এটা তো আমাদেরই ছোটবেলার বন্ধু। এতো হামজা। একই সাথে স্কুল লাইফ শেষ করেছি আমরা সবাই। তবে এসএসসি পাশ করার পর আহাদ নটরডেম তারপরে বুয়েটে চান্স পেয়ে চলে যায় সেই থেকে আর কোনদিনও দেখা হয়নি আমার সাথে। দীর্ঘ আট বছর কেটে গেছে। আমি আর রাহাত ভেবে পাইনা যে ছেলেটা আমাদের ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতো না সে একটানা আট বছর কিভাবে আমাদের ছাড়া থাকতে পারল।
হামজাএসেই আমাদের দুজনকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ওর চোখ দুটো ভিজে গেছে সাথে আমাদেরও চোখ ভিজে গেছে।
শালা তুই এত বছর কোথায় ছিলি শুধু কি মেসেঞ্জারে কথা বললেই হয়। কথা বলেছি তুই একটু এদিকে আয় চলে আয় এখানে একবার তো দেখা করতে পারতি। রাহাত আবেগে বলে ফেলল।
নারে বন্ধু মা মারা যাওয়ার পর আমি আর এদিকে আসি নাই,,, হামজা বলল।
আন্টি ইন্তেকালের আট বছর হয়ে গেল তাই না,, আমি বললাম।
হ্যাঁ,, আজও মনে পড়ে সেই দিনটার কথা,, হামজার চোখে পানি এখনো রয়েছে।
তুই জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছিস আবার অনেক কিছু হারাইছি বন্ধু,, রাহাত বলে উঠলো।
তা ঠিক বলেছিস যে বছরে আমি নটরডেমে চান্স পাই ওই বছরই আমার মা মারা যায় তারপর আর কোনদিনও এই শহরে আসিনি আমি।,,হামজা বল্ল।
তো রাহাত বল তোর মেডিকেলের পড়াশোনা কেমন চলছে এখনো তো শেষ হয়নি না??
এইতো এবছর ইন্টার্ন এ প্রবেশ করব।
হামজা তোর পড়াশোনা তো শেষ তাই না,,, আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
হ্যাঁ, বন্ধু শেষ আর এই বছর একটা অনেক বড় সুযোগ পেয়েছি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার। তাই জন্য তোদের সবার সাথে দেখা করতে আসলাম।
তুই চলে যাবি? রাহত জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ কি আর করার এখানে থেকে কিবা করব কে বা আছে আমার এখানে!!
দেখ না আমরা তিনজন তিন জায়গায় চলে গেলাম কেউ কি মনে করেছিল যে আমাদের তিনজনের কেউ এটি পর্বে কেউ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পড়বেন আবার কেউ মেডিকেলের পড়বে হাহাহা।,, হামজা বলে হাসল।
রাহাত; কিন্তু আমাদের বিষয়টা আলাদা আমরা দুজন তো প্রায়ই আমাদের বাসায় আসি। এসে দেখা হয় কিন্তু তোর সাথে তো কোন সময় দেখা হয় না।
আমি ;এসব কথা বাদ দে তো এখন। তা বল দিনকাল কেমন চলছে। বিয়ে-শাদীর চিন্তা করছিস নাকি তুই তুইতো আবার চাকরি পেয়ে গেলি হাহাহা।
হামজার মুখ গম্ভীর হয়ে গেলাম এই কথাটা হয়তো সে শুনতে চাইনি। মাথা নিচ করে থাকলেও কিছুক্ষণ তারপর একটা ভারী গলায় বলল,,,, সাবিহার খবর জানিস কিছু?
আমি আর রাহাত দুজনই চুপ মুখে আমাদের কোন কথা নাই। এইসা ভি আইসিএমএ যার পেছনে হামজা ক্লাস সিক্স থেকে পরেছিল।
ক্লাস নাইনের সর্বপ্রথম হামজা ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলে। হামজা আসলে মেয়েটাকে খুব ভালবেসে ফেলেছিল। মেয়েটা যে আমার সুন্দরী তাও না কিন্তু তার আচার-আচরণ সবচাইতে বেশি হামজাকে আকৃষ্ট করেছিল। এমনকি আমি আর রাহাত ওকে ব্যঙ্গ করে কোন কথা বললেন হামজা আমাদের ওপর খুবই রেগে যেত। এমনকি একবার কয়েকটা বাজে ছেলে সাদিয়াকে উত্যক্ত করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। হামজা তাদের সব কটাকে থ্রেট দিয়ে এসেছিল একাই। অবশ্য তখন হামজার কাছে কিছু ক্ষমতা ছিল ওই কারণে থ্রেট দিতে পেরেছিল ও।
তুই এখনো সাদিয়াকে মনে রেখেছিস,, রাহাত জিজ্ঞাসা করল।
হ্যাঁ, এখনো রেখেছে ভাই ভোলা অতটা সহজ নয়।
ওর সব কথা কি মনে আছে তোর,, আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
হ্যা প্রত্যেকটা কথা এখনো মনে আছে,, ও প্রথমে কি বলেছিল আর শেষ দিন কি বলেছিল সেটা মনে আছে আমার।
হামজার মুখে একটা মিথ্যা হাসির চিহ্ন।
আচ্ছা আমি যে তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। কিছু মনে করবি না।,, রাহাত জিজ্ঞাসা করল।
আচ্ছা ঠিক আছে কর।
রাহাত; সেদিনকে কি হয়েছিল একটু খুলে বলবি। আমাদেরকে তুই কিন্তু কিছুই না বলে চলে গিয়েছিলি। আমাদের থেকেও লুকিয়ে ছিলে ওই বিষয়টা।
হামজা হাসতে হাসতে উত্তর দিল,, ওর সাথে আমি কোনদিন কোন রিলেশনে আবদ্ধ হই নি আমি কথা দিয়ে ছিলাম যে আমি যদি ভালো ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেয়েছে ওই বছরই ওকে বিয়ে করে নেব কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। যেদিন তোর সাথে আমার শেষ কথা হয় তার কয়েকদিন আগে থেকেই আমার মা অনেক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল এই কারণে আমি আর ওর সাথে ঠিকমত কথা বলতে পারিনি। কিন্তু সেদিনকে আমি কথা বলতে গেলাম সেদিনকে ওর আইডি ডিএকটিভেট দেখালো। প্রথমে তো আমি কিছুই বুঝতে পারিনি কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম যে ও আর আমার সাথে কোন কথা বলতে চায় না। ঐদিন আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম এমনকি তার কয়েকদিন পর পর্যন্ত আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। রাজাবাজার শুয়ে শুয়ে পড়ো কথাবার্তা আমার খুবই কষ্ট পেতাম তোদেরকে এগুলা বলতে পারিনি আমি।
একটা বিষয় জানিস তো আমি নটরডেমে চান্স পাওয়ার পরেই সিগারেটে আসক্ত হয়ে গেছিলাম এমনকি অভ্যাস এখন আমার যায়নি।
আমি ;তারপর আর ওর কোন খবর পেয়েছিস তুই?
আর কোন খবরই পাইনি বন্ধু কিন্তু অনেক চেষ্টা করেছিলাম কন্টাক্ট করতে কিন্তু প্রতিকূলতায় আর সেটা সম্ভব হয় না।
রাহাত; তুই একটা মেয়ের জন্য কতগুলা মেয়েকে ছেড়ে ছিলি মনে আছে?
হামজা; সেই কথা কি আর মনে না থাকার বিষয়ে বন্ধু। আমি ওয়াদা করেছিলাম যে ওর জন্য আমি সব কটা মেয়েকে ছাড়বো। এখন পর্যন্ত কিন্তু কোন রিলেশনে জড়ায়নি আমি হাহাহাহা।
হামজার কথাগুলোতে কেন জানিনা আমার নিজেরও কষ্ট হচ্ছিল বেচারা অনেক সাফার করেছে নিজের জীবনে।
আমাদের নিজেদের ভিতরকার গল্প করতে করতে বিকাল হয়ে আসলো রোদ এখন আর তেমন নাই।
রাহাত ;চলনা একটু বাইরে বেরিয়ে এসে কতদিন পর আমরা বন্ধুরা একত্রিত হলাম।
আচ্ছা আচ্ছা সাবিহার বাসাটার কথা কি তোদের মনে আছে? আমি তো জিজ্ঞাসা করল।
আমি আর রাহাত দুজনে চুপ করে রয়েছি। কারণ ওর বাসাটা আমাদের পাড়ার ভিতর। হামজা অনেক জোরাজুরি করতে লাগলো একবার শুধুমাত্র বাসার সামনে যেয়ে দেখবে। ঈদের পরে ও বাসায় থাকতেও পারে। এই আশায় রয়েছে।
আমি আর রাহাত মোটামুটি রাজি হয়ে গেলাম।
তিনজনে একটা রিক্সায় উঠে বসলাম সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে পরে গেল। আমি আর হামজা নিচে অন্য দিকে রাহাত উপরে একটাই মাত্র রিক্সা।
রিকশা থেকে নামলাম আমরা সবাই। হামজা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমিও রিক্সার টাকা দিয়ে ওর দিকে ফিরতেই দেখলাম একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগল। লোকটি নম্র ভদ্র মানুষ সরাসরি সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিল। লোকের মুখে হালকা হাসি ও ছিল। আমরা তিনজন খুব ধীরগতিতে ওই গলির ভিতরে হাটতে থাকলাম যার ভিতরে সাবিহার বাসা ছিল। আমি আর রাত শুধু হামজাদ দিকে তাকিয়ে ছিলাম ওর মুখ গম্ভীর ছিল চিন্তায় ছিল যে যদি আর না দেখতে পাই সাবিহা কে।
যে লোকটির সাথে হামজার ধাক্কা লেগেছিল সেই লোকটি আবার গলির ভেতর থেকে ফিরে আসছেন সাথে 5-6 বছরের একটি বাচ্চাও আছে। লোক্টি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। তবে লোকটি যেতেই হামজা চুপ করে রইলাম তাকিয়ে রইল তার সামনের দিকে। সাবিহা তার সামনে দাঁড়িয়ে।
দুজন দুজনের দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে রয়েছেন কেউই কোনো কথা বলছে না।
লোকটি বলে উঠল,,, এই সাবিহা দ্রুত চলো আমাদের বাস চলে যাবে কিন্তু।
লোকটির কথা শুনে মনে হলো লোকটি সাবিহার বর। আমিতো সাবি আগে না চেনার ভান করে সামনের দিকে তাকাল আর সাবিহা চোখ নিচু করে তার স্বামীর সাথে চলে গেল। আমি হামজার ঘাড়ে হাত দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকাতে দেখলাম ওর চোখ পানিতে ভিজে গেছে।
আমরা তিন জন রাহাতদের বাসায় বসে আছি।রাহাতের বাবা আর সাবিহার বাবার অনেক ভাল সম্পর্ক ছিলো। তাই রাহাতের বাবার কাছ থেকে কিছু জানা সম্ভব সাবিহার বিয়ের ব্যাপারে। কাকু একটার পর একটা সিগারেট টান্তেই আছেন। আমাদের দিকে যেনো তার কোনো খেয়াল ই নাই।
কাকু একটা কথা ছিলো,, হামজা বলল।
হা,, তো কী বলবে বলো।
এই যে আপনার পারার রহমত সাহেবএর মেয়ের বিয়েটা কিভাবে হলো?
তুমি বাবা এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো?
এমনই কাকু,,, কিন্তু বললে ভাল হয়।
তাহলে শুনো,, ওর দাদি এই তো ৮ বসর আগে মারা যায়। তখন ওদের এক পারিবারিক বন্ধুর ছেলের সাথে সাবিহার বিয়ে ঠিক করে রেখে যান তিনি। তাই ওর দাদি মারা যাবার ১.৫ বসর এর মদ্ধে সাবিহার বিয়ে দিয়ে দেই ওর পরিবারের লোকজন।
রাহাত;কিন্তু বাবা তুমি আমাকে কিছু বলনি ত এই ব্যাপারে?
তোকে বলে কি করব?,,আর ও কাজের চাপ ছিল তাই আমি নিজেও যাই নাই।
আমারা তিনজন চুপচাপ বসে রইলাম। রাতের খাবার শেষ করে বাইরে বার হলাম।
হামজা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শাস ফেল্ল। সে হাসতে হাসতে বল্ল,, জানিস তোরা আমি আগের থেকেই জানতাম যে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
আমরা হামজার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
হামজা; ওর বান্ধুবির সাথে কথা বলে ৪ বসর আগেই জান্তে পারি যে ওর একটা মেয়ে হয়েছে। আর এখানে আসার কারন একমাত্র ছিলো তোদের সাথে দেখা করা। আর অকে একবার দেখা। জানিনা আবার কবে দেখা হবে।
রাহাত হেসে জিজ্ঞেস করল এইবার কি হামজা বিয়ে করবে। হামজা মুচকি হাসি দিয়ে বল্ল হ্যাঁ এইবার আমিও লাইফ এ আগিয়ে যাব।
এইসময় এ আমার মনে হল আবার যেন আমরা আমাদের ছোটবেলাই ফিরে এসেছি।

আবার দেখাWhere stories live. Discover now