রিনির ছোটবেলায় একটা বদঅভ্যাস ছিল, যা’ই পছন্দের তাই সে প্যান্টের রাবারে কোচা বানিয়ে গুঁজে রাখে। সবসময় সঙ্গে সঙ্গে।
মা মালা কিনে দিলো, লাল নীল ক্রিস্টালের লম্বা মালা। কি সুন্দর! গলায় দিলেই তার মনে হয় সে বিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। আহা! সেই মালা সারাক্ষণ রিনি প্যান্টের রাবারের কোচায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কেউ দেখতে চাইলে কোচা থেকে বের করে মালা দেখায়।
একসময় খেলতে গিয়ে রিনির মুতু পেলো, রিনি দৌড়ে গিয়ে টয়লেটে বসলো। প্যান্টের রাবার টানতেই মালা পুচ্চুর করে কমোডের ভেতর। রিনি কাঁদতে কাঁদতে মরে যায় এমন অবস্থা তখন৷
মালার কষ্টে রিনির নাওয়া খাওয়া বন্ধ থাকলো কয়েকদিন।
আরেকবার রিনির ছোট মামা রিনি'কে দারুন একটা কলম কিনে দিলো। ক্যাপ খুলে লিখতে নিলেই আলো জ্বলে উঠে কলমে।
রিনি চব্বিশ ঘণ্টা সেই কলম জামার বুকে ক্যাপের ক্লিপ গুঁজে ঝুলিয়ে রাখে। ঘুমোতে গেলেও কলম সাথে।
একদিন সে রাতে ঘুমিয়েছে। সকালে জেগে দেখে, কলমের খাপটা জামায়ই আটকে আছে অথচ কলমটা কোথাও নেই। হারিয়ে গেছে।তারপর তো জন্মদিনে বাবা সোনালী ডায়ালের কি সুন্দর হাতঘড়ি দিলো। সেটাও রিনি হারিয়ে ফেললো। হাত থেকেই খুলে পড়ে গেলো কোথাও।
ফাইভে বৃত্তি পাবার পর, মা কিনে দিলো। মিউজিক্যাল কফিমগ। হাতে নিলেই মগের ভেতরে মিউজিক বাজে। ইশ্। সেই মগ দিনে রাতে বুকের পাশে। সেই মগও একদিন ভেঙ্গে গুঁড়ো।
রিনির তখনই বদ্ধমূল ধারণা হলো, সে তার পছন্দের জিনিসগুলো নিজের কাছে রেখে সামলাতে পারে না। অথচ যে জিনিসগুলো তার সঙ্গে রাখে না ওগুলো কখনোই হারায় না।
সেই থেকে রিনি নিজের জীবনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো। নিজের জীবনের পছন্দের কিছু আর তার কাছে রাখবে না, সঙ্গে রাখবে না। সঙ্গে রাখলে সেটা যদি মালা, কলম, ঘড়ির মতই ফসকে যায়!
এরপর থেকে রিনি তার পছন্দের জিনিসগুলো তার থেকে দূরে রাখে। যত্ন করে গুছিয়ে রাখে। এমন কি মনের ভেতরে প্রচন্ড পছন্দের আর ভালোলাগার কথাগুলোকেও সে মনে থাকতে দেয় না, কাগজে লিখে ফেলে। কাগজে লিখে সে নিশ্চিন্ত। যাক্ বাবা নিজের সঙ্গে তো রইল না।
মনের ভেতর থেকে যদি কখনো হারিয়ে যায়! রিনির তো নিজের উপর একদমই বিশ্বাস নেই।
ব্যস... এরকম ভালোবাসার জিনিস নিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তিত কিছু রিনি'র গল্প নিয়েই কুন্দনিকা।প্রচ্ছদটা দেখুন তো?
ইজ ইট ওকে?ও আরেকটা কথা, ভালোবাসার জিনিস কিন্তু আমিও ঠিকঠাক সামলাতে পারি না। এখন সবাই ভাববে এটা রিনি'র কথা নয়।
রিনি'র গল্পটা *****!
ছিঃ!#তৃধা_আনিকা