ডিমপোড়া গন্ধ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে আর রান্নাঘরে বসে থেকেও আমার কোন খবর নেই। আমার ক্যাবলাকান্ত বরমশাই সেই পোড়া গন্ধে ঘর থেকে ছুটে এসে যখন রান্নাঘরে হাজির হলেন, ঠিক তখন আমার টনক নড়ল। ভাবছেন বরকে এই নামে কেন ডাকছি? কি করি বলেন, বাসর রাতে আংটির বক্সটা সামনে বাড়িয়ে যখন সে তার স্পেশাল ক্যাবলামার্কা হাসিটা উপহার দিয়েছিল, সেই মুহূর্তে এর থেকে ভালো নাম আমার মাথায় আসেনি। তারপর থেকে মনে মনে আমি ওকে ক্যাবলাকান্ত বলেই ডাকি।
“হুরু! আন্ডা!” হাড়ির মধ্যে পানি শুকিয়ে পুড়ে খোসার গায়ে কালো দাগ পড়ে যাওয়া ডিমগুলোর দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো আমার সর্বসময়ের প্রিয় শব্দ, মুদ্রাদোষ বলা যেতে পারে। তবে এর আগে মনে হয় শব্দটার এত যথার্থ ব্যবহার কখনো হয়নি।
'আন্ডা' শব্দটা আমার কাছে ঠিক ততটাই প্রিয় যতটা প্রিয় 'আন্ডা' নিজে। আন্ডা মানে ডিম হচ্ছে আমার সবথেকে প্রিয় খাবার। আর ঠিক সেই কারণেই চার ভাইয়ের এক বোন আদরের দুলালি আমি ডিম ভুনা ছাড়া আর কোন রান্না জানিনা। সেটাই আজকে আমার নতুন শশুরবাড়ির লোকজনকে বানিয়ে খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পোড়া ডিম তো মান ইজ্জতের পুরো কাস্টার্ড বানিয়ে দিল। কোন কুক্ষণে যে ডিম সেদ্ধ বসিয়ে ফেসবুকে ঢুকেছিলাম! এত বছরের অভ্যাস, সময়-জ্ঞান ভুলে ঘন্টার ঘন্টা ফেসবুকে পড়ে থাকা, সে কি আর সহজে যায়? ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাপের বাড়িতে ড্রয়িংরুমের সোফায় না, শশুরবাড়িতে রান্নাঘরে তরকারি কাটার পিঁড়িতে বসে আছি।
বরের প্রায় পেছন পেছন উঁকি দিলেন শাশুড়ী মা, “কি পুড়ল মা গো, হাত পাও পুড়ায় লাও নাই তো!” উদ্বিগ্ন কণ্ঠ তাঁর।
আমি ইতস্তত করলাম, কি বলব বুঝতে পারছিনা। রান্নাবান্নার ব্যাপারে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায় হতে পারে, কিন্তু এটা অন্তত এটা জানি যে ডিম সেদ্ধ পোড়ানোর কথা মানুষ কস্মিনকালেও শোনেনি। আর সেই অবিস্মরণীয় কাজ আমি করে ফেলেছি। তাও আবার এক সপ্তাহ পুরনো শশুরবাড়িতে প্রথম রান্না করতে গিয়ে। কোন মানে হয়?
YOU ARE READING
ছোট গল্প ও অণুগল্প
Short Storyব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সাহিত্যের গদ্য ধারাগুলোর মধ্যে ছোটগল্প লেখা সবথেকে কঠিন। অল্প পরিসরে দারুণ কিছু করে ফেলেন একজন দক্ষ গল্পকার। সেখানে আমার মত নিতান্তই অপটু এবং শিক্ষানবিশ লেখক পুরোই অকেজো। তারপরও হয়ত কখনো মন চাইলে কিছুমিছু লিখে ফেলতে পারি। স...