আমি বাসায় গিয়ে আম্মুকে কি বলবো?
আম্মু যখন জিজ্ঞেস করবে,
(নীলা তোর ঠোঁটে কি হয়েছে?)এ কথা ভেবেই চোখের জল গুলো মুছে কোন রকম গায়ের ওড়না টা দিয়ে মুখ ঢেকে চলে গেলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে।
একটা রিক্সা ডেকে তাড়াতাড়ি করে চলে এলাম বাসায়।
বাসার গেইটে ঢুকতে যাবো আর বান্ধবীর সাথে দেখা।-কিরে তোর ঠোঁটে কি হয়েছে?
আমি চুপ করে ছিলাম। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
-এক্সিডেন্ট করেছিস সোনা?ব্যথা পেয়েছিস খুব?
আমি সীমুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। ও বুঝে নিয়েছে আমি এক্সিডেন্ট করেছি। আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো ও।
-কাকী কাকী, নীলা এক্সিডেন্ট করেছে।(সীমু)
আম্মু দ্রুত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার হাত পা দেখা শুরু করলো,কোথায় কোথায় লেগেছে। আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। আম্মুর আর সীমুর ভালবাসা দেখে।
মানুষ গুলো আমার আঘাতে কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আর ওইদিকে আরাফ, যাকে কিনা আমি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসি। সেও নাকি আমাকে ভালবাসে। তাহলে সে কিভাবে আমাকে এত টা আঘাত করলো? এসব ভাবছি আর কান্না বেড়েই চলেছে আমার।-শুধু ঠোঁটেই আঘাত পেয়েছিস মা?রিক্সা থেকে পড়ে গিয়েছিলি, না? কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদেনা মা আমার।
সীমু আর আম্মু আমার পাশে বসে আছে। আর আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
-কাকী আপনি রান্না করুন গিয়ে,আমি আছি নীলার কাছে।
-আম্মু যাও তুমি।কিছু হইনি আমার। ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা,আমি তাহলে রান্না ঘরে যাই। তোরা বস।
-কিভাবে এক্সিডেন্ট করলিরে সোনা?
-আমি কোন এক্সিডেন্ট করিনি।
-তাহলে?
-আরাফ,
-আরাফ কি?
-আরাফ আমাকে (কান্না করে)
-আরাফ কি মানুষ নাকি পশু?
-ছিঃ ওকে দেখেতো মনে হয়না ও এমন।
-শুধু তাই না ও এ ও বলেছে,আজ থেকে যা খুশি তাই করবো,কার বাপের কি? এখন আমি কি করবো বলতো?
যাকে এত ভালোবাসি,সে ই কিনা আজ আমার সাথে এমন করলো। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে জানিস?
-আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা কি বলবো তোকে।
-ফিরে যে আসবো তাও তো পারবোনা,কারণ আমি যে ওকে খুব ভালোবাসি।
-এটাই তো সমস্যারে।
-জানিস,আজ অবধি ও আমার সাথে এমন কোন দিনও করেনি। আজ কেন এমন করলো,কিছুই মাথায় আসছেনা।
-রাগ করিস না দোস্ত!আমি বলি কারণ টা?
-হুম বল।
-কারণ ও আজই সুযোগ টা পেয়েছে। এর আগে কখনো একা পায়নি তোকে। সেই জন্য এমন করেনি। কেননা,সব সময় তুই কাউকে সাথে করে নিয়ে গিয়েই ওর সাথে মিট করিস। ঠিক বলেছি?
-তা ঠিক।তবে এত দিন যাবত যাকে ভালবাসি,তাকে চিনতে পারবোনা?
-আর সবাই তোকে সাপোর্ট করলেও আমি তোকে কখনো আরাফের বিষয়ে সাপোর্ট করেছি?
-না।
-বলিনি বার বার,ফিরে আয় ওই পথ থেকে।ফিরে আয়।
-বলেছিস।
-কেন বলেছি?তোর ভালোর জন্য বলেছি। কারণ আমি যেদিন প্রথম দেখেছি ও তোর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নিজের মানি ব্যাগ ভরাট করে, সেদিনই আমি বুঝে গিয়েছি।ও তোর যোগ্য না। আর ও তোকে ভালোবাসে কিনা ঠিক তা জানিনা। তবে তোর বাবার সম্পত্তির দিকে খুব লোভ তার এবং টাকা পয়সার দিকেও।
-ধুর কি যা তা বলিস?
-আর যেই প্রেমিক কিনা বিয়ের আগেই মোবাইল ঘেটে দেখে কার সাথে কথা হলো, কি হলো।বান্ধবী,আত্মীয় স্বজনদের সাথে পর্যন্ত মোবাইলে কথা বলতে দেয়না,নাম্বার দিতে দেয়না। তার হুকুম ছাড়া এক পা বেরুতে দেয়না।
সে বিয়ের পর কি করবে ভেবে দেখ। সুখী হবি তুই এমন মানুষকে বিয়ে করে? ও তোর স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ করছে।
যা তুই ভালোবাসার মোহে পড়ে বুঝতে পারছিস না।আমি তোকে দোষ দেবোনা কারণ,ভালোবাসা জিনিষটাই এমন।ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা হারাতে হয় ভালোবাসলে কাউকে।
আমরা কাউকে ভালোবাসলে ঠিক ভুল কিছুই বুঝতে পারিনা। মনে হয়,ভালোবাসার মানুষটা যা বলছে,যা করছে সবই ঠিক। আমরা ভালোবেসে যা করছি সব ঠিক।
আসলেই কি সব ঠিক?একটু একা একা চিন্তা করে দেখিস।
ভালোবাসা মানে পরাধীনতা না নীলা। ও তোকে নিজের জালে আটকে ফেলছে দিন দিন,যা তুই বুঝতেই পারছিস না। আর এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
-কি বলছিস তুই এসব?
-আমি যা বলছি ঠিকই বলছি।ও ভেবেছে তুই তোর মা বাবার এক মাত্র সন্তান। আর তোর বাবার টাকা পয়সা,ধন সম্পদ সব কিছুর মালিক তুই। আর তুই মালিক মানেই সে মালিক। সেই জন্য তোকে ভালোবেসেছে।
-তুই পাগল হয়ে গেছিস সীমু। যা মুখে আসছে বলে যাচ্ছিস।
-আমি যা তা বলছিনা। আমি যা বলছি ঠিক বলছি। ও একদিন তোর রক্ত চুষে খাবে দেখে নিস। টাকা পয়সা সব লুটে খাবে দেখিস। তারপর বুঝবি তুই, আমি ঠিক নাকি তুই ঠিক।
-সীমু প্লিজ যা তো এখান থেকে। আমাকে একটু একা থাকতে দে।
ESTÁS LEYENDO
অচেনা মানুষ - Strangers | (Complete)
Ficción GeneralRead first to find something special😊❤