বেলিফুলের মালা

65 4 10
                                    

সকাল ছয়টা।হাঁটতে বেরিয়েছে শুভ্র।হাতে তার ১৩ টা বেলিফুল।আজ হিয়া তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।সময়মত পৌছাতে হবে তাকে।দেরি হলে হিয়া অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এরপর হিয়া তার কাঁধে মাথা দিয়ে বলবে,"ভালোবাসি"।কিন্তু এই পৃথিবীতে সুন্দর কিছুই বেশিক্ষণ থাকে না।এই স্বপ্নটাও বেশিক্ষণ টিকবে না।।।

বেলিফুল খুব ভালোবাসে হিয়া।এজন্য শুভ্র রোজ সকালে বেলিফুলের মালা হিয়ার কাছে দিয়ে আসে।এই এক বছরে শুভ্র নিজেকে ঠিক তেমন করে গড়ে তুলেছে যেমনটা হিয়া চেয়েছিল।একদিন তার জীবনে হিয়া ছাড়া কিছুই ছিল না।আজ পার্থক্য শুধু এটাই যে,আজ তার জীবনে সব থাকলেও হিয়া তার পাশে নেই।

হিয়া ছিল শুভ্রর স্ত্রী।না---ছিল না,আছে এবং সারাজীবন থাকবে।হিয়ার সাথে শুভ্রর প্রথম দেখা কলেজ ক্যাম্পাসে।ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বাউন্ডুলে ছেলে ছিল শুভ্র।লম্বা লম্বা চুল,দাঁড়ি,কবি কবি ভাব-চোখে হাই পাওয়ারের চশমা,শ্যামলা চেহারা,চোখ দুটো যেন স্বপ্নে ভরপুর-এই ছিল শুভ্র।শুভ্রর শখ ছিল কবিতা লিখা।এই কাজে সে বড়ই বিখ্যাত ছিল ক্যাম্পাসে।সন্ধ্যায় সবাই যখন ইয়ার ফাইনালের পড়ায় মগ্ন,বন্ধুবান্ধবের নোট তুলতে ব্যস্ত,অ্যাসাইনমেন্টের চাপে যখন পুরো ক্যাম্পাস শুনশান,তখন দেখা যেত শুভ্র ক্যাম্পাসের বটতলায় যেয়ে মনের আনন্দে কবিতা লিখছে।অদ্ভুত মানুষ সে।জীবনকে সে দেখে অন্যভাবে,নিজের আঙ্গিকে।শুভ্র পাখি ভালোবাসে।মনে মনে সে বলতো, "আহা,যদি কোনদিন পাখির মত উড়তে পারতাম,কি ভালোই না হতো!" কিন্তু কল্পনা তো কল্পনাই হয়।তার এই অপূর্ণ বাসনার কারণে সে বরাবরই সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ জানাতো।ছাত্র হিসেবে শুভ্র ছিল প্রখর মেধাবী।কিন্তু সমস্যা একটাই সে আজ পর্যন্ত একটাও ইয়ার ফাইনাল দেয়নি।তাই প্রতিবছর ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেপেলেদের সাথে ক্লাস করতে হয়। তার একটাই যুক্তি,ক্যাম্পাসকে ভালোবাসি বলেই ইচ্ছা করে ইয়ার ফাইনাল দেই না।যাতে এই ক্যাম্পাসে আরও কয়েক বছর থাকতে পারি।স্যার-ম্যাডামরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে তার সামনে সংশয় প্রকাশ করলেও,শুভ্র ছিল নির্বিকার।

বেলিফুলের মালাOù les histoires vivent. Découvrez maintenant