স্মৃতিমেদুর

179 22 64
                                    

বিকালে ঘুম ভাঙতে, ইমন চোখ মুছে উঠে দেখে, ও বসে আছে ওর স্টাডির জানলার কাছের আরামকেদারাটায়। দুপুরবেলা লাঞ্চের পর এখানে বসেই বই পড়তে পড়তে তন্দ্রা এসে গিয়েছিল ওর। সামনেই পুজো... বেশ কয়েকটা পত্রিকার পুজো সংখ্যার জন্য সম্পাদকদের অফিসে গল্প-উপন্যাসের পান্ডুলিপি ওর জমা দেওয়া হয়ে গেছে সময়ের আগেই। ইমন এখন বেশ ঝাড়া হাত পা।

পিয়াস ক'টা দিনের জন্য স্টুডিওর কাজ মিটিয়ে, বেহালায় ওর মায়ের কাছে গেছে। ওদের এই অ্যাপার্টমেন্টটায় ইমন আপাতত একা।

ওরা দুজনেই বেশিরভাগ সময় কাজে ব্যস্ত থাকলেও, একে অপরের ওই চরম ব্যস্ত উপস্থিতিটাও ওদের কাছে একটা অভ্যাস এর মতো। সারাদিন লেখালেখিতে ডুবে থাকলেও, দিনের শেষে পিয়াসের গায়ের স্যান্ডেলউড বডিওয়াশের গন্ধটা না পেলে, মনের মধ্যে কিসের যেন একটা অভাব বোধ হয় ইমনের। আবার, স্টুডিও থেকে ফেরার পর স্টাডি থেকে ইমনের স্বভাবগত লিখতে লিখতে গুনগুন করে গান গাওয়ার শব্দটা কানে না এলে, ঘরটাকে যেন অসম্পূর্ণ মনে হয় পিয়াসের।

তাই যথারীতি ইমনের এখন এই আটতলার ফ্ল্যাটটায় থাকতে একদম ভালো লাগছে না। তার ওপর আবার নিজেকে ব্যস্ত রাখার মতো এখন হাতে তেমন কোনো কাজও নেই। পিয়াসকে ফোন করতে পারে যদিও... কিন্তু, পিয়াস ওর মায়ের কাছে গেলে, ওকে আর ফোন করে বিরক্ত করতে ভালো লাগেনা ইমনের। সেই ছোটোবেলা থেকে পরিবার বলতে ইমনের নিজের ওই দায়সারা মামারবাড়ি ছাড়া আর কিছুই না থাকায়, মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর মর্মটা খুব ভালো করেই বোঝে ইমন। তাই পিয়াসের এই সময়টায় আর ভাগ বসাতে চায় না ও।

কি একটা মনে হতে, তাড়াহুড়ো করে টেবিলে থাকা ল্যাপটপটা খুলে বসে ও। খোলে পুরোনো ছবির একটা ফোল্ডার। স্ক্রিনে একের পর এক ফুটে উঠতে থাকে, ওর আর পিয়াসের পুরোনো ছবিগুলো। এগুলোর মধ্যে কোনোটা হাই স্কুলে পড়ার সময়কার। আবার, কোনোটা নিজেদের আলাদা আলাদা কলেজের ক্লাস বাঙ্ক করে বিবেকানন্দ পার্কের কাছে দেখা করার সময়ের। কোনোটাতে ওরা দুজন স্কুল উনিফর্ম পড়ে কাঠি আইসক্রিম খাচ্ছে। কোনোটাতে পিয়াস ইমনের বাই-সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে আছে। কোনোটা আবার দু'জনে কোনো এক পাইস হোটেলে খেতে গিয়ে তোলা।

3. স্মৃতিমেদুরWhere stories live. Discover now