প্ল্যাটফর্ম নম্বর একেই দাঁড়াল ট্রেনটা। ছোট স্যুটকেসটা হাতে নিয়ে বগি থেকে নেমে পড়লাম 'মৌলিগ্রাম হল্ট' স্টেশনের নিঝুম প্ল্যাটফর্মে। হাতঘড়ির দিকে চাইলাম, রাত একটা। গাড়ি পাক্কা ছয় ঘণ্টা লেট, নইলে আমার এইখানে নামার কথা সন্ধ্যা সাতটার সময়। একেই জানুয়ারি মাসের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তার উপর আবার চারিদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। নিজের থেকে দু'হাত দূরে কী আছে, তাই ভাল করে ঠাহর করা কঠিন। আমার গরম স্যুটের ভিতরেও বেশ খানিকটা শিহরণ অনুভব করলাম।
উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট স্টেশনে আমি একাই নামলাম ট্রেন থেকে। কাউকে গাড়িতে উঠতেও দেখলাম না; প্ল্যাটফর্ম এক্কেবারেই জনমানবশূন্য। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলাম, মৌলিগ্রাম স্টেশনে মাত্র দুটো প্ল্যাটফর্ম। একটা ছোট ওভারব্রিজ সেই দুটিকে সংযুক্ত করেছে। লম্বা প্ল্যাটফর্মের পাশে লাগানো কাঠের ব্যারিকেডের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অনেক নাম না জানা পাহাড়ি গাছগাছালি। কিছুটা দূরত্বে পর-পর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্প-পোস্টগুলো নীরবে জ্বলজ্বল করছিল।
এইখানে ট্রেন দাঁড়ায় মাত্র দু'মিনিট। সেই ক্ষণিক সময় অতিক্রম হওয়া মাত্রই গার্ড হুইসল্ বাজিয়ে সবুজ আলো দেখালেন। তিন বার হর্ন দিয়ে ট্রেন ঝিক্-ঝিক্ শব্দ তুলে এগিয়ে চলল তার পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। ট্রেনের অন্তিম কোচের পিছনের লাল আলোটা কুয়াশার পুরু চাদর ফুঁড়ে অনেক দূর অবধি চোখে পড়ছিল। ওটা রাত্রির তমসায় সম্পূর্ণ ভাবে বিলীন না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেদিকেই নির্নিমেষে তাকিয়ে ছিলাম। ট্রেনটা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আবার গোটা স্টেশন জুড়ে নেমে এল নিশীথের গাঢ় আঁধার এবং শ্মশানের নীরবতা।
ও....কথায়-কথায় তো আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। আমি ডঃ গৌরব চট্টোপাধ্যায়। বয়স ঊনত্রিশ। থাকি কলকাতায়। এই প্রথমবার মৌলিগ্রামে এসেছি বন্ধু সরোজের নিমন্ত্রণ পেয়ে। আমি আর সরোজ দীর্ঘ দশ বছর ধরে একসাথে পড়েছি কলকাতার এক নামজাদা স্কুলে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে আমি যদিও ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নিই, কিন্তু সরোজ ঠিক করে যে সে ইন্টারমিডিয়েট অবধি পড়ে দেশে ফিরে যাবে ওর পৈতৃক ব্যবসা সামলাতে। উত্তরবঙ্গের এই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলই হল ওর তিন পুরুষের ভিটেমাটি। বিধবা মা আর ছোট বোন কে নিয়ে ওদের সুখের সংসার। বহুদিন থেকে পীড়াপীড়ি করছিল, যাতে আমি অন্তত কিছুদিন ওর কাছে কাটিয়ে যাই। তাই এইবার ওর চিঠি পেয়ে, বেশি সাত-পাঁচ না ভেবেই বেরিয়ে পড়লাম।
YOU ARE READING
উপকার
Horrorগভীর রাতে উত্তর বঙ্গের ছোট্ট, কুয়াশাচ্ছন্ন একটা পাহাড়ি স্টেশনে নামল গৌরব। কলকাতার ছেলে সে; পেশায় একজন ডাক্তার। বাল্যবন্ধু সরোজের নিমন্ত্রণেই এই পাণ্ডববর্জিত অঞ্চলে তার ঘুরতে আসা। কিন্তু ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে নামার পর গৌরবের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়...