সোনারপুর গ্রামে ঢোকার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই আকাশটা কেমন যেন থমথমে লাগছিল। গন্তব্যের কাছাকাছি আসতেই আবহাওয়ার অবনতি ঘটতে আরম্ভ করল। আমি বাসের উইন্ডো সিট্ দখল করে বাইরে প্রকৃতির ক্রুদ্ধ রূপের দিকে অপলক চেয়ে ছিলাম। গাঢ় কালো মেঘরাশি তার বৃহৎ সৈন্যবাহিনী নিয়ে ধেয়ে আসছিল আকাশের পশ্চিম দিগন্ত জুড়ে। তাদের সম্মিলিত আর্তনাদ আর চাপা গর্জনে কানে তালা লাগার মতো অবস্থা। সড়কের দু'ধার জুড়ে শুধুই ধানক্ষেত। সেই ক্ষেতের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের শিষগুলি মত্ত বাতাসের পরশ পেয়ে উত্তাল নৃত্যে মেতে উঠেছিল। মুহুর্মুহু বজ্রপাতের শব্দ আর তার তীব্র ঝলকানিতে চতুর্দিক ক্ষণিকের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল দিবালোকের মতো। এই চরম দুর্যোগের মধ্যে আমাদের বাস ছুটে চলেছে সোনারপুরের উদ্দেশ্যে।
সোনারপুর বাস স্ট্যান্ডে ঢুকতেই বড়-বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল। অতি কষ্টে স্যুটকেসটা দিয়ে মাথা আড়াল করে ছুটলাম কোনও নিরাপদ আস্তানার খোঁজে। একটা বড় গাছের তলায় আশ্রয় নিয়ে, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কল করলাম আমার জ্যাঠতুতো দাদার ফোনে।
"হ্যালো, দাদাভাই?"
"হ্যাঁ রে দেবু, এখন কোথায় পৌঁছলি বল।"
"আরে আমি তো বাস স্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে আছি গো। তোমার তো আমায় নিতে আসার কথা ছিল, তুমি এলে না?"
"উফ্! আমি তো আধঘণ্টা আগেই পৌঁছে গেছি রে আহাম্মক। এখন হারু দা'র দোকানে বসে আছি। দৌড়ে চলে আয়।"
"তুমি মাঝেমধ্যে এমন সব কথা বলো না!" একটু রেগেই বললাম, "আমি কি আগে কখনও সোনারপুরে এসেছি যে তোমার ওই হারু দা'র দোকান চিনব?"
"হাহাহা!" দাদাভাই সশব্দে হেসে উঠলেন, "কাউকে জিজ্ঞেস করে নে না। এখানে হারু দা'র চপ-মুড়ির দোকান অনেক ফেমাস, বুঝলি? সবাই এক ডাকে চেনে।"একে-ওকে জিজ্ঞেস করে হারু দা'র দোকান খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হল না। দাদাভাই ছুটে এসে আমাকে বুকে চেপে ধরল।
"কী রে দেবু, আসতে কোনও কষ্ট হয়নি তো?"
"না না দাদাভাই," আমি ঢিপ করে একখানা প্রণাম সেরে ফেললাম, "শুধু এই বৃষ্টির জন্য...."
"ও কিছু না। আয় আয়....এত দূর থেকে বাস জার্নি করে এলি, একটু বসবি চল।"
আমরা হারু দা'র দোকানের ভিতরে একটি বেঞ্চ দখল করে বেশ জমিয়ে বসলাম। ধবধবে সাদা ফতুয়া আর লুঙ্গি পরিহিত এই ভদ্রলোকটিই সম্ভবতঃ সেই স্বনামধন্য হারু দা। মুখে একটা পান আর ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি নিয়ে বেগুনি ভেজে চলেছেন। দাদাভাই কে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন-
"আপনার কী লাগবে ছোট ঠাকুর? আর আপনার সাথে এই ছেলেটি কে গো? আপনার ভাই বুঝি?"
"ঠিকই ধরেছ। এ হল দেবাঞ্জন, আমার খুড়তুতো ভাই। কলকাতায় থাকে; এই বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। তুমি এক কাজ করো, গরম-গরম বেগুনি আর দু'ভাঁড় চা এদিকে দাও দেখি।"
YOU ARE READING
নির্দোষ
Horrorপ্রায় একযুগ পর নিজের পৈতৃক গ্রাম সোনারপুরে পা রাখে দেবাঞ্জন। শহরের ছেলে সে, গ্রামে সচরাচর আসা হয়না তার। নিজের জ্যাঠতুতো দাদার সঙ্গে একদিন গ্রামের বিখ্যাত "শাওন মেলা" দেখতে যায় দেবাঞ্জন। কিন্তু সেখানে ওর জন্য ওৎ পেতে রয়েছে এক অশুভ শক্তি। চণ্ডেশ্ব...