অনেক অনেক আগে বানর ছিল বনের রাজা। তাদের উৎকৃষ্ট শাসনব্যাবস্থায় বনের পশুরা ছিল নিরাপদ, তারা সুখে শান্তিতে দিন কাটাত। কিন্তু বাঘের ব্যাপারটি সহ্য হলনা। তার চিন্তা হচ্ছে,
'বানর কেন বন শাসন করবে? যে শক্তিশালী, শাসন করার অধিকার কেবল তারই'।
তাই সে কর্তৃত্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে বনের পশুদের উপর হামলা করা শুরু করল। বুদ্ধিদীপ্ত বানর, অত্যন্ত কৌশলের সাথে বাঘকে পরাজিত করল এবং বাঘের বিরুদ্ধে ব্যাপক পশুমত সৃষ্টিতে সফল হল। বাঘকে 'একগুহা' (একঘরে) করে রাখল, বাঘ, বনের এক নিদৃষ্ট গণ্ডীতে আবদ্ধ হয়ে পড়ল।
সময় গড়িয়ে চলল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার হয়ে চলল.....নতুন প্রজন্মের বানর শাসকরা পুরোনোদের আভিজাত্য, ন্যায়পরায়ণতা ভুলে আমোদ ফূর্তিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, তবে এই অনাচার পশু সমাজে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। বানর প্রজন্ম ভুলে গেল যে, তাদের বুদ্ধিদীপ্ততা এবং বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই তারা শ্রেষ্ঠ হতে পেরেছিল। তারা তাতে অবহেলা করা শুরু করল। ফলে তাদের চিন্তা এবং ধ্যানধারণায়ও অধ:পতন ঘটতে লাগল।
ঐদিকে গুহার অভ্যন্তরে বাঘ প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজতে লাগল। গুহার ভেতরে কাঠ কয়লার সাথে ঘষা লেগে লেগে হলুদ বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগের সৃষ্টি হল (উল্লেখ্য, সেই সময় বাঘের গায়ের রং ছিল হলুদ)। নতুন এই সাজে বাঘ বুঝতে পারল, তাকে আগের চেয়ে আরও রাজসিক লাগছে। সে এক নতুন ফন্দি আঁটল। এই কাঠ কয়লার সহায়তায় সে এক ফেয়ারনেস ক্রীম তৈরি করল। তারপর তার শুভাকাংক্ষীদের মাধ্যমে নতুন এই ফেয়ারনেস ক্রীমের প্রচারণা চালাতে লাগল।
প্রথম প্রথম বাঘের নতুন রূপে আবির্ভূত হওয়া এবং ফেয়ারনেস ক্রীমের বিষয়টি কানাঘুঁষা হিসেবে চলতে থাকলেও, ধবধবে সাদা জেব্রার গায়ে যখন ডোরাকাটা দাগের সৃষ্টি হল, তখন তা বনের মাঝে এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করল। প্রথমদিকে ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলেও, শাসক বানরশ্রেণী এবার আর ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে পারলনা। এইদিকে বাঘের ফেয়ারনেস ক্রীমের ব্যাবহারে হরিণের গায়ে ফুটকির সৃষ্টি হল। জিরাফও আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে উঠল। অনেকদিন পর্দার আড়ালে থাকা বাঘ হয়ে উঠল, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ব্যাপক পশুমতের কল্যাণে গুহাবন্দী বাঘ বনে বিচরণ করার সুযোগ পেয়ে গেল।