বাস থেকে নেমে শোভা দেখতে পেল একটি ছেলে তাদের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে।কেন জানি ছেলেটাকে তার খুব চেনা চেনা মনে হল কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না।তাই আর কিছু না ভেবেই বাসায় ঢুকে গোসল করতে ঢুকলো।ঘামে তার গা পুরো চিট চিট করছে।রান্না করতে হবে একটু পরেই বাবা অফিস থেকে আসবে।তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হতে বাসার কলিং বেল বিকট ভাবে বাজতে থাকল।কোনরকমে চুলটা মুছে দরজা খুলতে গেল হয়ত বাবা চলে এসেছে।দরজা খুলে দেখল সেই ছেলেটা দেখতে কালো হলে মুখে একটা অন্য রকমের স্নিগ্ধতা যা সচরাচর দেখা যায় না।শুভ্রার চুল থেকে তখনো টপটপ করে পানি পরছে শাহরিয়ার সে দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।ছেলেটাকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভ্রা জিজ্ঞেস করল , "কার কাছে এসেছেন?"ছেলেটা জবাব দিলো,"আমি শাহরিয়ার এটাকি মাসুদ সাহেবের বাসা?" "না আপনি বোধহয় ভুল বাসায় এসেছেন" এই কথা শুনে শাহরিয়ার কিছু একটা বলার জন্য ইতস্ততঃ করা শুরু করল।কেন শুভ্রতাকে চিনতে পারছেনা হয়তোবা তাদের কয়েক বছর আগে দেখা হয়েছিল কিন্তু তাই বলে কি তার চেহারার ও মনে থাকবেনা!কই শাহরিয়ার তো শুভ্রার ব্যাপার কিছু বলেনি শুভ্রার চোখ থেকে শুরু করে তার গালের টোলটা সবকিছু তার মনে আছে।শাহরিয়ারের ঘোর ভাঙলো শুভ্রার কথায়,"আর কি কিছু বলার ছিল?" শাহরিয়ার বলল," না আমি তাহলে যাই।" শুভ্রা সাথে সাথেই বললো, "আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে আগে কি আমাদের কখনো দেখা হয়েছিল?" শাহরিয়ার বলল ," সেসব কথা নয় থাক।"এটা বলেই শাহরিয়ার বাসা থেকে বের হয়ে আসলো।শুভ্রা অবাক হয়ে গেল তাহলে সত্যিই কি ছেলেটা তার পরিচিত? কেন এসেছিল ছেলেটা?এসব ভাবতে ভাবতেই চালে দুইটা আলু দিয়ে বসিয়ে দিলো চুলায় সাথে ডাল ও সিদ্ধ করতে দিল।তখনি তার মনে পড়ল তাদের আগের বাসার ভাড়াটের ছেলে ছিল শাহরিয়ার।কলেজ থেকে আসার সময় প্রায়ই দেখা হতো। শাহরিয়ার খুবই লাজুক ছেলে ছিল।তাই দেখা হলেও তাদের কখনো কথা হয়নি কিন্তু এতো বছর পর ও ওর কাছে কি চায়!চাল ফুটতে শুরু করেছে তখনই কলিং বেল আবার বাজল।
দরজা খুলে দিতেই দেখল মাসুদ সাহেব বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।হাত থেকে বাজারের ব্যাগ গুলো নিতে নিতে শুভ্রা বললো," বাবা আজকে একটু নীতু আন্টির বাসায় যেতে হবে" "কেন ওরা কি তোকে ডেকেছে?"খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল।ওদের বাসায় গিয়ে দেখল নীরা তখনো তৈরি হয়নি।বাসার সবাই কাজে ব্যস্ত। কারো যেন দু'দণ্ড বসে থাকার সুযোগ নেই।হঠাৎ দেখতে পেল শাহরিয়ার খুব মনোযোগ দিয়ে টেলিভিশন দেখছে।শুভ্রা ভয়ানকভাবে চমকে উঠল শাহরিয়ার এখানে থাকবে কেন!ওকি ওর পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছে!নাহ ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্ত করা উচিত।শুভ্রা শাহরিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ,"এইযে শাহরিয়ার সাহেব।আপনি এখানে?"শাহরিয়ার এতই অবাক হল যে ওর হাত থেকে টিভি রিমোট পড়ে গেল জান ভূত দেখে ফেলেছে।কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো," আপনি এখানে কিভাবে!" "আমি তো আমার বান্ধবীর সাথে এক জায়গায় যাব বলে এখানে এসেছি", শুভ্রা বললো।" "সত্যি করে বলেন তো আপনি কি আমার পিছু নিয়েছেন।"কথাটা একটু জোরেই বলল শুভ্রা।আশেপাশে যারা কাজে মশগুল ছিল তারা সবাই ফিরে তাকালো।শাহরিয়ার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল।সে বলল,"আপনি যেমনটা ভাবছেন ব্যাপারটা মোটেও এমন না আমিও এখানে আমার আত্মীয়র বাড়িতে এসেছি।" "আচ্ছা তাহলে আমাদের বাসায় এসেছিলেন কেন?"এবার আর শাহরিয়ার নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা শুভ্রাকে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো,"আপনি এভাবে সবার সামনে কথাটা না বললেও পারতেন।" "আর কী করবো আমার তো আপনাকে দেখে ভাল ছেলেই মনে হচ্ছে কিন্তু আপনি ভাবে আমার পিছু নিয়েছেন কেন?" "আচ্ছা আমি বলি কেন আপনাদের বাসায় গিয়েছিলাম তাহলে হয়তো আপনি আমাকে ভুল বোঝা বন্ধ করবেন!" "হ্যাঁ বলেন সেটাইতো আমি তখন থেকে জানতে চাচ্ছি।"শাহরিয়ার কিছুক্ষণ ধরে নিজেকে প্রস্তুত করল তারপর একটু কেশে নিয়ে বলল,"আসলে কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না আমি যখন ভার্সিটিতে পড়তাম তখন তুমি প্রথম আমাদের বাসায় এলে।বেশি কোন সাজ ছিল না তুমি স্কুলের মেয়েদের মত দুই বেনী করে হালকা বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা ছেলে কিন্তু দেখতে এতটা মায়াবী লাগছিল যে আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।সেই তখন থেকে তোমার জন্য আমার পাগলামি শুরু।মনে আছে একদিন ঝুম বৃষ্টিতে তুমি ছাদে ভিজছিলে?আমি আসলাম তাই তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছিলে কিন্তু সেদিনের শোনা তোমার খিলখিল হাসির আওয়াজ আজও আমার কানে বাজে।"এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে শাহরিয়ার থামল।আবার বলা শুরু করলো,"এই কথাগুলো আমি নিজের মনের ভেতরে রাখতে চেয়েছিলাম কারণ কথাগুলো বলার সাহস আমার তখন ছিল না।একদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখলাম তোমরা মালামাল গুছিয়ে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ।আমার তখন মনে হল ছুটে গিয়ে তোমাকে আমার মনের সব কথা বলে দেই কিন্তু পারলাম না।এরপরে তোমাদের নতুন বাসা খোঁজে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু খুঁজে পায়নি পরে তোমাদের কলেজের সামনে আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম একবার তোমাকে দেখবো বলে।ছেলেটা গলার স্বরেই তার এত বছরের আকুলতা বুঝা যাচ্ছিল।কিন্তু শুভ্রার ব্যাপারটা ভাল লাগলো না।ছেলেদের গভীর আবেগের কথা তার কখনোই ভালো লাগেনা আগে হয়তো ভালো লাগতো।
YOU ARE READING
Shupto Valobasha
Romanceঅনেক বছর ধরে খোঁজার পর যদি প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হয় কার না ভালো লাগে। কিন্তু যদি সে আপনাকে চিনতেই না পারে? এমনই এক গল্প শাহরিয়ার আর সুভ্রার।