মোবাইল ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল বিল্টুর, ঘুমের চোখে ফোনটা রিসিভ করতে করতে কেটে গেলো। সবে ঘুমটা এসেছিল বিল্টুর অনেক ক্ষন ধরে এদিক ওদিক করার পর। মোবাইলটা হাতে নিয়ে লকস্ক্রীন খুলতেই দেখে অংশুর ফোন, মোবাইলের ঘড়িতে তখন তিনটে বাজে। বিল্টু মনে মনে ভাবছে এত রাতে অংশু কেন ফোন করলো , কোনো বিপদে হল নাকি ? ভাবতে ভাবতে আবার ফোন বেজে উঠলো বিল্টু দেখলো আবার অংশুর ফোন আসছে; এবার বিল্টু প্রথম রিং এর সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো অংশুর কান্নার শব্দ। বিল্টু এপাস থেকে প্রশ্ন করলো কী হয়েছে ? তুমি এই ভাবে কাঁদছো কেন? ওপাশ থেকে অংশুর হাঁপানোর শব্দের সাথে কান্নার শব্দ আসছিল, এপাশে বিল্টু মনে মনে ভাবছে নিশ্চয়ই অংশুর সাথে বড়ো কিছু ঘটে গেছে কারণ বিল্টু যতটুকু অংশুর সমন্ধে জানে যে অংশু সহজেই ভেঙ্গে পরার মেয়ে না। বিল্টু প্রথমে অংশু কে শান্ত করানোর চেষ্টা করলো কিন্তু অংশুর কান্না থামাতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বললো 'তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আশো' ! এটা বলে ফোনটা রেখে দিল।
বিল্টু আর অংশু দুজন দুজনকে দুই - আড়াই বছর ধরে চেনে, দুজনে খুব ভাল বন্ধু, যদিও বিল্টু অংশু কে শুধু ভালো বন্ধু ভাবে না, তার থেকেও বেশি কিছু ভাবে কিন্তু অংশু তাকে শুধু বন্ধু ভাবে, বিল্টুর এটা মনে হয় অংশুর কথাবার্তা, আচার - আচরন দেখে। তাই বিল্টু প্রোপোজ করে বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে চায় না। বিল্টু অংশু কে অনেকে আগের থেকেই চিনতো; যখন বিল্টু দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো তখন থেকেই চিনতো অংশুকে, অংশু সেই সময় পড়তো একাদশ শ্রেণীতে । বিল্টু'র একটা ভালো লাগা প্রথম থেকেই ছিল অংশুর প্রতি, পড়াশুনা ও অন্যান্য সমন্ধে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভালো লাগার কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘ দশ বছর পর বিল্টু ও অংশুর বন্ধুত্ব হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সময়ের সাথে সাথে দুজনে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। এতটাই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে যে তারা দুজনে মিলে একটি প্রাইভেট কোম্পানি চালায় , এতটাই ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে যে বিল্টুর এক কথায় দিল্লি চলে আসে অংশু। আজ দুপুরে তারা দিল্লি এসেছে একটি কনফারেন্স ও একটি মিউজিক কনসার্ট এ যোগ দিতে । তারা উঠেছিল একটি বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলে। দুজনের আলাদা আলাদা রুম বুক করা হয়েছিল। রাতের ভোজন করে দুজন দুজনের রুমে শুতে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে বেজে উঠলো বিল্টুর ফোন; অংশুর হাঁপানো আর কান্না শুনে বিল্টু ভাবতে লাগল কী হল অংশুর? এই তো শুতে গেল ! অংশু শুধু ফোনে বললো -' তুমি প্লিজ করে তাড়াতাড়ি আসো'!
এক লাফে বিছানা থেকে উঠে টি শার্ট পরতে পরতে বিল্টু বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির কথা ভাবতে লাগলো ; কি হল অংশুর? এত রাতে কী হতে পারে ? কয়েক ঘন্টা আগে দুজনে একসাথে রাতের ভোজন করে রুমে এলাম, তারপর ওকে ওর রুমে রেখে শুভঃ রাত্রি বলে আমি আমার রুমে এসে শুয়েছি ! এর মধ্যে কি হল?
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার রুম লক করে পাশের রুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলাম। কয়েক সেকন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে অংশু আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আমি ওকে রুমের ভিতরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে, তুমি কাঁদছো কেন? কিছু হয়েছে না কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ ?
অংশু জানলার দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো ওখানে কেউ দাড়িয়ে আমাকে দেখছিল। আমার উপর নজর রাখছিল। আমি বললাম কে নজর রাখবে, তুমি ভুল দেখেছো ঘুমের চোখে। তখন অংশু রেগে বলতে লাগল আমি তোমার সাথে এত রাতে মজা করার জন্য ফোন করে ডেকে নিয়ে এলাম, তুমি যাও এখন থেকে। তখন বিল্টু অংশুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আমি জানি তুমি ভয় পেয়েছ তোমার অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পারছি তুমি খুব বড় মাপের ভয় পেয়েছো, তুমি যাতে আর ভয় না পাও তাই বললাম কেউ নজর রাখছে না। আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দাও, বলো তুমি কি দেখেছো? কে জানলা দিয়ে দেখছে? কখন থেকে দেখছে? তখন অংশু আমাকে পাশে পেয়ে একটু শান্ত হয়েছে , ২-৩ মিনিট চুপ করে বসে থাকার পর অংশু বিছানার পাশে রাখা একটা জলের বোতল থেকে একটু জল পান করে বলতে লাগল - আমি ফোন লক করে ঘুমোতে যাবার সময় জানালার দিকে চোখ পরে মনে হল কে একটা সরে গেল। আমি ভাবলাম আমি ভুল দেখেছি, আমার কল্পনা অথবা সারাদিন এর ক্লান্তি কিন্তু না আমি এদিক থেকে ওইদিক করতে করতে আবার চোখ পরে জানলার দিকে দেখি কে দাড়িয়ে আছে, আমাকে দেখছে বড় বড় চোখ করে। রুমের নাইট লাইটে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছিল কেউ দাড়িয়ে আছে জানলার বাইরে। আসতে করে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই লোকটা জানলার বাইরে থেকে সরে গেছে,লোকটা ওখানে আর ছিল না। তৃতীয় বার আমি সজাগ ছিলাম যেই দেখলাম সাথে সাথে মোবাইলের ফ্ল্যাশটা জানলার দিকে করতেই তার বড় বড় চোখ জ্বলে উঠল। মোবাইলের আলোয় দেখলাম গভীর কৃষ্ণবর্ণের , কদাচিৎ মুখর্শ্রি যুক্ত এক ব্যক্তি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওই ব্যক্তি কে দেখতে পেড়েছি এটা যখন সে বুঝতে পারল তখন তার মুখমণ্ডলে ভেসে উঠলো এক কুৎসিত হাসি। যতটা কুৎসিৎ ছিল তার হাসি ততটাই ভয়ানোক তার মুখর্শ্রি । মাঝরাতে এই দৃশ্য দেখে কাঁপতে কাঁপতে তোমাকে ফোন লাগতে যাচ্ছিলাম সেই সময় আমার ফোনের নেটওয়ার্ক আউট হয়ে যায়। আমি দেখি ওই ব্যক্তি তখনও হেঁসে যাচ্ছিল ওই দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। এতটাই ভয় পেয়েছি যে আমি ভয়ে দরজা খুলে তোমার রুমে এসে তোমাকে ডাকবো, আমার ওইটুকু সাহসে কুলালো না। এতটাই ভয় পেয়েছি যে ভয়ে কেঁদে ফেলেছি । বিল্টু তখন অংশু কে বললো তুমি ফোন কি করে করলে আমাকে ? অংশু বললো তাড়াতাড়ি করে ফোন বন্ধ করে চালু করলাম , দেখালাম নেটওয়ার্ক এসেছে তবে খুবই ক্ষীণ । সাথে সাথে কল করলাম তোমাকে কিন্তু রিং হল না। দ্বিতীয়বার রিং হল, তুমি তুললে না। তিনবারের বার তুমি ফোনটা ধরলে , তখন আমার প্রাণে প্রাণ এলো। বিল্টু তখন অংশুর দু-হাত ধরে বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি রাতে তোমার সাথে তোমার রুমে থেকে যাচ্ছি, আমিও দেখতে চাই কে তোমাকে কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল এবং তার উদ্দেশ্য কী? আমি এই ঘরে তোমার সাথেই রাতটা কাটছি তাই তুমি ভয় পেওনা, এটা বলে বিল্টু অংশুকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করল। অংশু কিছুটা আশ্বস্থ হলেও পুরোপুরি হল না । তারপর বিল্টু জানলা খুলে বাইরে দেখতেই চোখে পড়লো উল্টো দিকের বাড়ির ছাঁদ । বিল্টু মনে মনে ভাবলো ওই ছাঁদ থেকে কেউ হয়তো নজর রাখছিল অংশুর উপর কিন্তু তার উদ্দেশ্য কী হতে পারে বিল্টু খোঁজার চেষ্টা করছিল। কিছুক্ষন পর বিল্টু জানলা টা বন্ধ করে আংশুর কাছে গিয়ে বলল কাল সকালে হোটেল কতৃপক্ষকে ব্যাপার টা জানাতে হবে । এটা শুনে অংশুও তাতে সহমত প্রকাশ করল। তারপর বিল্টু অংশু কে বললো রাত অনেক হল শুয়ে পরো আমি নজর রাখছি কেউ জানলায় উকি দেয় কিনা। এটা শুনে অংশু বললো আমি এখানে ঘুমোবো আর তুমি সারা রাত পাহারা দেবে এটা হয় তুমিও শুয়ে পরো।
তখন বিল্টু মনে মনে ভাবছে = রুমে তো বিছানা একটা সেখানে কি করে শুতে পারে ; যতই হোক অংশু বিল্টুর ভালো বন্ধু ; তাদের সম্পর্ক টা বন্ধুত্বের একসাথে এক বিছানায় কী করে শুতে পারে? কয়েক সেকেন্ড পর বিল্টু বললো আচ্ছা ঠিক আছে তুমি শুয়ে পরো; আমি আমার রুমের থেকে মাথার বালিশ টা নিয়ে আসি, বলে বিল্টু ওর রুমে দিকে গেল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই বিল্টু তার রুম থেকে বালিশ ও চাঁদর নিয়ে আসলো। তারপর যখন চাঁদর নিচে পাতলো তখন অংশু বলে উঠলো এটা কি করছো? তোমাকে নীচে কে শুতে বলেছে, আমি বলেছি নীচে শুতে? তখন বিল্টু বললো না বলিশ নি ঠিকই কিন্তু এক খাটে শুয়া টা ভালো দেখায়, আমরা তো আর প্রেমিক যুগল নই! তখন অংশু বললো প্রেমিক যুগল হলেই এক বিছানায় শুয়া যায় আর বন্ধু হলে বা অন্য সম্বন্ধের কেউ শুতে পারে না ? তুমি আমাকে এতো টা ক্ষীণ মানসিকতার মেয়ে ভাবো? এতো দিন মিশে তোমার এটা মনে হল?
তখন বিল্টু বললো - দেখ অংশু আমি জানি তুমি কত খোলা মনের, তোমার কাছে কোন ব্যাপার না এবং তুমি আমাকেও ভালো করে চেনো আমার কাছেও এটা কোনো ব্যাপার না । তোমার জায়গায় আমি হলেও একই কথা বলতাম। আমি নীচে শুতে যাচ্ছিলাম কারণ আমি তোমার নির্দেশ ছাড়া তোমার বিছানায় কি করে শুই ? আমি তোমার কাছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারিনা ; সরাসরি জিজ্ঞাসা করলে সেটা খারাপ দেখায়, তাই আমি নীচে শুতে যাচ্ছিলাম। অংশু তখন জোরে নিশ্বাস নিয়ে হুমম করে হাসতে হাসতে বললো এটা আমারও বিছানা না; এটা হোটেলের বিছানা সুতরাং বলিশ নিয়ে বিছানায় চলে আসো। এটা শুনে বিল্টু হাসতে লাগলো, তারপর বিল্টু বালিশ নিয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দিল। বিল্টু কে পাশে পেয়ে অংশু এখন একটু শান্ত হয়েছে। শুয়ে শুয়ে একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে দুজন কখন ঘুমিয়ে পড়েছে, দুজনের কেউ বুঝতে পারে নি।
YOU ARE READING
দেওয়ালের অদৃশ্য চোখ
Mystery / Thrillerবিল্টু ও অংশু কর্ম সূত্রে বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলের উঠেছে। সেই হোটেলের কিছু গুপ্ত ক্যামেরা তাদের চোঁখে পড়ে, সেই গুপ্ত ক্যামেরার পিছনের রহস্য উন্মোচন করে বিল্টু ও অংশু।