অনার্স ৩য় বর্ষ ❤️
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রাধা চরিত্র ❤️
বড়ুচণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যটির মধ্যমণি হলো রাধা চরিত্র। কবি শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য কীর্তনের উদ্দেশ্যে হয়তো কাব্য রচনা করেছিলেন। কারণ কাব্যের নাম হিসেবে আমরা 'শ্রীকৃষ্ণসন্দর্বঃ' (শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ) লেখা চিরকুটটির কথা স্মরণ করতে পারি। তথাপি এ কাব্যের সকল গৌরব আত্মসাৎ করেছে রাধা চরিত্রটি। মনস্তত্ত্ব সম্মত উপায়ে রাধা চরিত্রটি বিকশিত হয়ে উঠেছে কবির সুনিপুণ লেখনী-স্পর্শে। পূর্ণাঙ্গ নারী চরিত্ররূপে রাধাকে চিত্রিত করার মধ্যে কবি তাঁর অতুলনীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। এগারো বছরের বালিকা ধীরে ধীরে দেহচেতনা ও প্রেমচেতনায় পরিপূর্ণ মানবীরূপে উপস্থিত হয়েছে এ কাব্যে—"বংশীখণ্ড" সেই পরিণত নারীর পরিণত প্রণয়ের চিহ্ন বহন করছে। কৃষ্ণ বীতরাগিনী রাধাকে কৃষ্ণ-অনুরাগিনীতে রূপান্তরিত করার মনস্তত্ত্বসম্মত পন্থাটি বড়ু চণ্ডীদাসের চরিত্র চিত্রণে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়বাহী।
'তাম্বুলখণ্ডে' কৃষ্ণ-প্রেরিত কর্পূর তাম্বুল রাধা পদদলিত করেন। কারণ তাঁর কাছে সমাজজীবন ও পরিবারজীবনই সবচেয়ে বড়। তাঁর মনে আছে আজন্ম লালিত সতীত্বের সংস্কার, স্বামী-প্রীতি অথবা স্বামীভীতি। আর আছে কুল, শীল, মান, মর্যাদা ও আপনরূপ-যৌবন সম্পর্কে সচেতনতা ও করলো অহংবোধ। তাই বড়ায়িকে রাধা বলেছেন,
"ঘরের সামী মোর সর্বাঙ্গে সুন্দর আছে সুলক্ষণ দেহা। নান্দের ঘরের গরু রাখোয়াল তা সমে কি মোর নেহা।।"
বড়ায়ি কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার প্রণয় সম্পর্কের সুফল হিসেবে বিষ্ণুপুরে স্থিতির কথা বললে রাধা স্পষ্টভাবে বড়ায়িকে জানান—
“ধিক জাউ নারীর জীবন দহেঁ পসু তার পতী।
পর পুরুষের নেহাএঁ যাহার বিষ্ণুপুরে স্থিতী।।”সুতরাং রাধার মনে পাপ-পুণ্য, নৈতিকতা ও অনৈতিকতার প্রশ্নটি বেশ প্রবল। তথাপি এই নারীকে পাশবপ্রবৃত্তির কামনালোলুপ স্বেচ্ছাচারী কৃষ্ণের কাছে দেহসমর্পণ করতে হয়। 'দানখণ্ডে' বড়ায়ির সঙ্গে পরামর্শ করে কৃষ্ণ দানী সেজে অপেক্ষা করেন এবং রাধার কাছে বারো বছরের দান চান। রাধার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণও করেন তিনি যা এযুগের বিচারে অশ্লীল বলে মনে হতেই পারে। লজ্জিত রাধা আত্মরক্ষার তাগিদে কাহাঞিকে নানা ভাবে বোঝাতে সচেষ্ট হন। নিজের স্বামী, শ্বশুরঘর, এমনকি কংসের কথাও বলেন। সেই সঙ্গে বারবার কৃষ্ণকে তাদের সম্পর্কর কথা স্মরণ করান—“তোহ্মার মাউলানী আহ্মো শুন দেবরাজ।।”