১.
কোলাব্যাঙের মত উবু হয়ে বসে আছে মেটমোটা মেঘের দল, তাদের নীচে একটুখানি ফাঁক দিয়ে সুজ্জিমামা আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে দূরের ধানক্ষেতের দিকে। একটু পরে ডুবে যাবে, তারপর মেঘগুলো লাফাতে লাফাতে এসে বৃষ্টি ঢালতে শুরু করবে। সেলিমচাচার টিনের চালে খড়মড় ঠকঠক শব্দ হবে, সোনাদিদার টালির চালে টুক টুক টোকা পড়বে, আর ওদের খড়ের চালে ফিসফিস করে গল্প শোনাবে বৃষ্টি। রোজ ঘুমোনোর আগে চোখ বুঁজে শুয়ে গল্পটা বোঝার অনেক চেষ্টা করে সুনু, কিন্তু বুঝতে শুরু করা মাত্রই ঘুমিয়ে পড়ে। বিরক্তির চোটে একটা খোলামকুচি কুড়িয়ে পুকুরে ছুঁড়লো, টুপুস করে ডুবে গেল সেটা।
পাশ থেকে নুরু বলে - ঐভাবে ছুঁড়লে ব্যাংবাজী হয় না, এই দ্যাখ।
নুরুর ছোঁড়া খোলামকুচি পুকুরের জলে তিরিক তিরিক লাফ দিতে দিতে প্রায় মাঝবরাবর পৌঁছে যায়। সুনুর দিকে ফিরে একগাল হাসে নুরু - এবার তুই ছোঁড় দেখি।
- না রে, এবার বাড়ি যাই। কাল দাদা বকেছিলো।
- সে তো আজান শুরু হয়ে গিয়েছিলো বলে।
- বলছিলো সন্ধের সময়ে ছোটদের বাইরে থাকতে নেই।
- আব্বুও তাই বলে।
- চ' তাইলে, বাড়ি যাই।
যেতে যেতে অন্ধকার হয়ে আসে। নুরু বাড়িতে ঢুকে যায়, সোনাদিদার ঘর পেরিয়ে সুনু নিজেদের দাওয়ায় ওঠে। দাদা লন্ঠন জ্বেলে চালের বাতায় টাঙিয়ে দিয়েছেন, হলদে আলোর আসেপাশে নরম অন্ধকার জমে ঊঠছে।
ওকে দেখে দাদা বলেন - পড়াশোনা নেই? সারাদিন মাঠঘাট চষে বেড়ালে চলবে? তোর শ্লেট-পেন্সিল কোথায়?
- খাটের নিচে, দাদা।
- নিয়ে এসে হাতের লেখা কর।
- কি লিখবো?
- সুন্দর করে নিজের নামটাই লেখ না।
মুখ বেজার করে শ্লেট নিয়ে বসে সুনু। একটু পরে হাট সেরে বাবা ফেরেন - তোর উন্নতি হয়েছে দেখছি, শ্লেট নিয়ে বসেছিস।
- কালকে বকা খেয়েছে তো, আজকে আর বেশি বলতে হয়নি।
- গোপাল মাস্টারের সঙ্গে হাটে দেখা হলো, সুনুকে পড়াতে বললাম।