একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে যে ইতিহাস পড়ানো হয় তাতে মূল কথা বাংলায় মুসলিম শাসন না এলে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটত না। অর্থ্যাৎ মুসলিম শাসন ছিলো আশীর্বাদ। এই নিয়ে বেশ কিছু লেখা চোখে পড়ল যেখানে দাবী করা হচ্ছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বাংলা ভাষাকে হিন্দুত্ববাদী করে তুলেছিলো। তারাই বাংলা সাহিত্যকে সাম্প্রদায়িক করে তুলেছিলো ইত্যাদি। আসলে এই একপেশে বিকৃত ইতিহাস দিয়েই প্রকৃত সাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পন্ন জেনারেশন তৈরি করা সম্ভব। এরকম ইতিহাস পাঠ করলেই আপনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে সর্বদা ‘জাগ্রত সুলতান’ বলে আহ্লাদিত হতে পারবেন। ইরানের ইসলামিক শাসনের ক্রিমিনালদের সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বীর মনে করে গর্ব অনুভব করবেন!
বাংলা ভাষা নিয়ে হিন্দু মুসলমান দুপক্ষে সাম্প্রদায়িকতা একটি বাস্তবতা। তাদের দুপক্ষকেই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলা ভাষার আদি মাতা হচ্ছে চর্যাপদ। চর্যাপদের তিন কন্যা যথাক্রমে- বাংলা, ওড়িয়া, অহমিয়া। পরিস্কার করে বললে বাংলা ভাষার মায়ের নাম চর্যাপদ। আর এই চর্যাপদ ছিলো বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত। বৌদ্ধ বিহারগুলোতে এইসব চর্যাপদ রচিত হয়। সেন রাজাদের সময় বৌদ্ধদের উপর রাষ্ট্রীয় উৎপীড়ন নেমে এসেছিলো। একই সঙ্গে বাংলায় মুসলিম শাসনের সময়কালেও বৌদ্ধরা দেশছাড়া হয়েছিলো। নালন্দা পোড়ানো হয়েছিলো বখতিয়ার খিলজির সময়কালে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তখন প্রাণ বাঁচাতে নেপালে আশ্রয় নিয়েছিলো। যে কারণে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদ আবিস্কার করেছিলেন। অবিকৃত ইতিহাস বলতে হলে অবশ্যই বলতে হবে, ব্রাহ্মণ্যবাদী সেন বংশ ও মুসলিম শাসনকালে বাংলা ভাষার জননী দেশান্তরিত হয়েছিলেন।
চর্যাপদের শ্লোকগুলোর কিছু পড়লে বুঝা যায় সেন আমলে বৌদ্ধরা তখনো তাদের সাহিত্য সাধনা বাংলাতে বসেই করছিলেন। যেমন এই শ্লোকটিতে সেন আমলের জাতপাতের উঁচু নিচু সমাজের কথাই বলছে- ‘নগর বারিহিরেঁ ডোম্বি তোহোরি কুড়িয়া/ ছই ছোই যাই সো বাহ্মণ নাড়িআ’ মানে নগরের বাইরে বাস করে ডোমনী আর নেড়ে বাহ্মণ তার ছঁই ছুয়ে যায়…।