দাদুর কীর্তি

7 0 0
                                    

মর্চ্যুয়ারির দরজায় তালা লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। পরিবেশ এখনও বেশ থমথমে। ধূসর কালো মেঘ আকাশপটে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে। যা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তার মধ্যে আজ রাতে লাশ আসার সম্ভাবনা খুব কম। তাই বোধহয় নতুন জয়েন করা নাইটগার্ড ছোকরাটা গলা অবধি মদ গিলে বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছে। তবু আমাকে সজাগ থাকতে হবে। হারাধন নতুন হতে পারে, আমি তো এখানে বছরখানেক ধরে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে নিযুক্ত।

বছর পাঁচেক হল এলাকায় এই সরকারি হাসপাতালটা গড়ে উঠেছে। নোলকপুর জায়গাটা নিপাট গ্রামাঞ্চল, একদম অজ পাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায় আর কি। দশ মাইলের ব্যাসার্দ্ধে কোনও ভাল চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। এই হাসপাতাল গ্রামের এক্কেবারে শেষপ্রান্তে অবস্থিত। নির্জন একটা মাঠের মাঝখানে বেখাপ্পা ভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে হস্পিটাল-বিল্ডিং। যতদূর চোখ যায়, কোনও জনবসতি চোখে পড়ে না। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মেঠো পথ ধরে অল্প এগোলেই পদ্মভাগা নদী।

আজ মনটা খানিক ভারাক্রান্ত। নাতির শরীর একদম ভাল নেই....কাল সকাল থেকে ধূম জ্বর। এখানে এনে একবার ডাক্তারবাবুর কাছে দেখানোর কথা যে মাথায় আসেনি তা নয়। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনও নামগন্ধ নেই। এই দুর্যোগের মধ্যে বাচ্চাটা কে এতদূর পর্যন্ত আনা মহা সমস্যা। বৃষ্টির জন্য এখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থাও শোচনীয়।

জামাই মারা গেল গত বছর। আমার মেয়েটাও ডাইনির অপবাদ মাথায় নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হল। এতদিন পেনশানের টাকা দিয়ে আমার একার পেট দিব্যি চলে যাচ্ছিল। কিন্তু আচমকা মেয়ে-নাতির দায়িত্ব ঘাড়ে চাপার পরে আমাকেও তড়িঘড়ি এর-ওর হাতে পায়ে ধরে নাইটগার্ডের এই চাকরিটা জোগাড় করতে হয়েছে।

টর্চ হাতে একবার মর্চ্যুয়ারির গোটা চত্বরটা ভালভাবে পর্যবক্ষেণ করে নিয়ে গার্ড-রুমে ফিরে এলাম। টিনের চালে একনাগাড়ে চলছে বর্ষার প্রলয়নাচন। বিকট শব্দে ঘন-ঘন বজ্রপাত....তার সঙ্গে ঝিঁঝি আর ব্যাঙের একঘেয়ে যুগলবন্দী'তে কানে তালা লাগার জোগাড়। নাতির চিন্তায় মাথাটা দপদপ করছে। একটা বিড়ি ধরিয়ে চৌকিতে গুছিয়ে বসলাম।

দাদুর কীর্তিWhere stories live. Discover now