প্রারম্ভিক

5 0 0
                                    

#অদৃশ্য

লিখাঃ তামান্না ইসলাম শুচি
পর্ব:১
০১.
চাঁদের  আলোয় পুরো শহরটা আলোকিত হয়ে আছে।কেউ একজন জানালায় দাঁড়িয়ে চাঁদটা দেখছে।সত্যি বলতে মেয়েটা কাঁদছে।মেয়েটার নাম সাদিয়া রহমান ছায়া।অবশ্য সবাই দিয়া বলেই ডাকে।ছায়া বলে খুব কম মানুষই ডাকে ওকে।একটা সময় ছিল ছায়া নামটা শুনলে গা জ্বলে যেত।রাগারাগি ও করতো।সেইজন্য কেউই ওকে ছায়া বলে ডাকতে চাইতো না।
সেই ছায়া নামটাই বড্ড প্রিয় হয়ে গেছে ওর।কারণ ও আছে।খুব প্রিয় একজন মানুষ ওকে ছায়া বলে ডাকতো।দিয়ার খুব পছন্দের মানুষ ছিল সে।দিয়া মধ্যম গড়নের একটা মেয়ে।বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান তিন সন্তানের মধ্যে।ওর জমজ এক ভাই সায়ন ওর থেকে ৫ মিনিটের ছোট।আর বড় ভাই ওদের থেকে ৮ বছরের বড়। সাদিত
বিয়ে করেছে দুবছর হলো। তৃণা ভাবী সন্তান সম্ভাবা।বড় ভাই ব্যবসা করে।বাবা ব্যাংকার  ছিলেন।দিয়া অনার্সে ভর্তি হলেও সায়ন মেডিকেলে ভর্তি হয়।রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এ থার্ড ইয়ারে আর দিয়া অনার্স  থার্ড ইয়ারে। ওদের দাদাভাই  আর দাদাভাইয়ের বাবা জমিদার ছিলেন।
সে হিসেবে এলাকায় ওদের খুব নামডাক সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। ওদের বাড়িটাও রাজবাড়ী।তবে আগের জমিদার বাড়ি থেকে চেঞ্জ করেছে ওর বাবা আর চাচা।চাচা সপরিবারে নিউজিল্যান্ডে থাকে।মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন।আগে দেশেই ছিল।কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট ঘটার পর নিউজিল্যান্ডে চলে যান।
দিয়া জানালার পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শুতে যায়।
তারপর ড্রয়ারে রাখা ডাইরিটা হাতে নেয়।
লিখতে আরম্ভ করে।
" আজ প্রায় ৯ বছর ৮ মাস,পেরিয়ে গেল তুমি নেই।আজ তোমার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন।তুমি যেখানেই থাকো না কেন ভালো থাকো।জানো তুমি চলে যাওয়ার পর আমি আর আগের মত নেই। তোমার টুনটুনিটা আর আগের মতো বকবক করে বেড়ায় না।সায়নের সাথে আর মারামারি করে না।খাবার নিয়ে মর্জি করে না। আচ্ছা তোমার কি একবার ও আমাদের বা আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না বড়দা।
সেই যে গেলে গাড়ি দিয়ে আর ফিরলে না।
তুমি আমায় বলেছিলে অনেক চকলেট এনে দিবা।তুমি জানো বড়দা রুশমি আপু আসে প্রতিবার তোমার জন্মদিনের দিন।
কালকে সকালেই হয়ত আসবে।আপুর বিয়ে হয়েছে দুইবাচ্চা আছে তবু ও তোমার জন্য এখনো কাঁদে।কেন বড়দা চলে গেলে? ভালো লাগছে না আর লিখতে।শুভ জন্মদিন ভাইয়া।ভালো থেকো।"
ডাইরিটা রেখে চোখ বন্ধ করে দিয়া।সকাল থেকে ক্লাস করে ক্লান্তই ছিল দিয়া তাই চোখ বন্ধ করে শুতেই ঘুমিয়ে গেল।
লক্ষ্য করলো না ওর রুমের জানালাটার পর্দাটা নড়ছে আর সেখানে কার ও নিঃশ্বাস পড়ছে।

০২.
তার্থ তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে ড্রাইভার কে বললো গাড়ি চালাতে এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আজকে ওর একজনের সাথে দেখা করার কথা।সেই একজনের সাথে ওর বিয়ে ঠিক  করেছে ওর বাবা। তার্থ কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবেনা।
তাই ফোন করে দেখা করতে চেয়েছে।
মাইমুনা খানম তার্থ।পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বাবা বিশিষ্ট  হাড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনামুল খান।মা একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক।
দুই ভাই বোনের মধ্যে বড়।মাস্টার্স কম্পিলিট করে দু জায়গায় চাকরি করে
ফ্যাশন ডিজাইনের উপর কোর্স করে নিজেই একটা অনলাইন শপ খুলেছে।
সেখানে ২০ টা মেয়ে কাজ ও করে।
আর ডেলিভারি দেয়ার জন্য পাঁচজন ছেলেও আছে।
ভালো ইনকাম হয়।এখন এরই মধ্যে ওর বাবা ওকে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।
তার্থ আপাতত বিয়ে করতে চায় না।
রাস্তায় জ্যাম পড়েছে অনেক।ওদিকে টাইম যাচ্ছে।

০৩

হাতের চামড়া কেমন যেন দেখাচ্ছে বলে ফ্রিজ থেকে একটা কাচের বোতল বের করে রাইসান।লাল তরল পদার্থ টা চকচক করছে।রাইসান দ্রুত হাতে তরল পদার্থ টা হাতে মাখিয়ে ফেললো তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিল।
"হ্যাঁ পরিষ্কার দেখাচ্ছে হাতটা।এবার বেরোনো যায়।"
শার্ট প্যান্ট পরে বেরিয়ে পড়লো রাইসান।হঠাতই মনে পড়ল আর রাতে সম্মেলন আছে যেতে হবে।তাই দ্রুত দেখার পর্ব শেষ করতে হবে এই বিয়ে করতে পারবে না রাইসান।মা অবুঝ বিয়ে তিনি দেবেন।
রাইসান মাহমুদ বিজনেসম্যান। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের হাতেই মানুষ।
যদিও ওর মা বলে ওর যখন চার বছর ওর বাবা মারা গেছেন ও বিশ্বাস করে না।
ওর মনে হয় ওর বাবা মারা যাননি এখনো বেঁচেই আছেন।
তার প্রমাণ ও পেয়েছে রাইসান।কিন্তু মাকে সেটা বলেনি।আজ রাতের সম্মেলনে গেলে বুঝতে পারবে আসল ঘটনা কি।চিন্তার ভেলা বন্ধ করে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো রাইসান।তখুনি মনে হলো কে যেন ওকে ফলো করছে।
০৪.
আধাঁর নেমেছে অনেকক্ষন আগে।
আকাশে কালো ছায়া যেন চাঁদের উপর।
আকাশটা কালো হচ্ছে।হয়ত মেঘ হবে।
একটা ঘন জংগলের মাঝে  সে দাঁড়িয়ে।
কেউ যেন ওকে ডাকছে
" এসো,এসো, এসোনা,
তোমার অপেক্ষায় আছি আমি,
এসো,এসো।জলদি এসো তোমায় আমার প্রয়োজন তানিয়া।স্ট্রোনহেঞ্জিদের উত্তসুরী তুমি চলে এসো।নিজেকে জানো।
এসো।"

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Mar 11 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

অদৃশ্য Where stories live. Discover now