ক্যামেরা কিনব এইজন্য অনলাইনে ক্যামেরা খুঁজতে লাগলাম, পেলামও ভালো একটা আবার সুলভ মূল্যে। যার ক্যামেরা তার সাথে কথা বললাম সে বলল, " ভৈরব এলে দাম আরো কমবে। "ইহা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো হলো। আমি রাজি হয়ে গেলাম।দিনক্ষণ ঠিক হলো। ট্রেন দিয়ে যাব, তাই ট্রেনের খোঁজখবর নেয়া হলো। সব প্লেন করা হলো।
একদিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুর বাসায় যাব বলে, আমি, হামিম, রাফি ও আকিব বাসা হতে বের হয় ভোর পাঁচটায়। রিক্সা নিয়ে স্টেশনে চলে গেলাম। খোঁজ নিয়ে দেখি ট্রেন ছাড়তে আধ-ঘটা দেরি হবে। তাই একটি হোটেলে ঢুকে নাস্তা করে নিলাম। তারপর তিন ট্রেনে চড়ে বসলাম। আটটা বা নয়টা টা বাজে এমন সময় যার কাছ থেকে ক্যামেরা কিনবো তাকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরল না। ফোন দিতে থাকলাম একটা সময় ফোন বন্ধ করে দিল।
অপেক্ষার যেন শেষ নেই। প্রায় ৬ ঘন্টা ভ্রমণের পর ভৈরব পৌছালাম। এরই মাঝে যেন জীবনের অর্ধেকটা ব্যয় করে দিলাম। এই ছয় ঘন্টার মাঝে যেন পৃথিবীটাকে অনুধাবন করে নিলাম। কি অদ্ভুতা ৬ঘন্টা ধরে যেন ট্রেন ছুটে চলল পথ, ঘাট, মাঠ বিভাজিত করে।
কিছুক্ষণ পর দমকা হাওয়া আরেকটি দুঃসংবাদ নিয়ে আসলো ক্যামেরা বিক্রি করবেন না। তা শুনে সবার চোখে মুখে হতাশা আঘাত হানলো। ক্লান্ত মূর্ত যেন মানুষ নয় চার চারটি হাতে গড়া মাটির মানুষ পাঁড়িয়ে আছে।
অবচেতন মনে জাগ্রত হল যত দ্রুত সম্ভব ফিরতে হবে। পরবর্তী ট্রেনের খোঁজ নিলাম। দুপুর দুটোই ট্রেন ছাড়বে। আমরা পাঁচ মূর্তি মসজিদে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে একটি হোটেলে গেলাম। সাদা ভাত, ডাল মাছ, সবজি!! আর কি চাই! এগুলো যেন সবচেয়ে দামি খাবার মন তৃপ্ত করল এমন ভাবে। পেস্ট তৃপ্ত হল কিন্তু মন তৃপ্ত হলো না। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিলাম লোকটার ব্যাপারে, এক-আধটা ঠিকানাও পেলাম কিন্তু সময় নেই...... ট্রেন এসে পড়েছে। ট্রেনে উঠে দেখলাম যাত্রী ততটা নেই, কোলাহল নেই সচারাচর যেমনটা থাকে। প্রাইস অফ টেবিল ফাঁকা বললেই চলে। আমরা যেন একটা কেবিন দখল করে বসলাম।
পড়ন্ত বিকেলের মৃদু আলো যেমন উঁকি দিচ্ছিল তেমনি উকি দিচ্ছিলাম আমরা বাড়ি ফেরার জন্য। কেবিনে শুয়ে-বসে, ঘুমিয়ে কোনভাবেই যেন সময় কাটে না, ওইদিকে ট্রেন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলেছে মেঠো পথ ধরে। যাত্রার সময় যেমন জোশ ছিল এখন তার বিপরীত ভাবলে শরীরে। যাই হোক
এই শেষ না হওয়া সফর শেষ হলো মাত্র 13 ঘন্টা ভ্রমণের মাধ্যমে।
ইতিহাসের পাতা হয়তো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিবে বোকা হিসাবে হয়তো অন্য কিছু কিন্তু ট্রেন ভ্রমণ মন্দ নহে কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়।
এখানে একটা বিশেষ দিক আছে তা হল যে মাতার কথার অমান্য করে সে নিজের পায়ে যেন কুড়াল মারলো। মা আমাকে আগেই বলেছিল যাসনে তুই। "
মাতৃ আজ্ঞা পালনই শ্রেয়।"