শুরুটা হলো যেভাবে

71 1 0
                                    

সেদিন ছিল ১৭ই জুলাই ১৯৮৯। সকাল বেলা হতেই দিনটা আমার পক্ষে ছিল। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। তারপর হাত-মুখ পরিষ্কার করে রীতি মতো পড়তেও বসলাম। কিন্তু পড়ায় মোটেও মন বসছিল না। মাথায় পূর্বের সেই চিন্তাটি বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল। ঘুরপাক খেতে খেতে চিন্তাটি এক সময় এমন এক স্থানে গিয়ে পোঁছাল যে, সেখান থেকে চিন্তাটি আর ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। তাই নিতান্ত বাধ্য হয়েই আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হলো আজই আমার সেই আশাটিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। আমি এর জন্য সম্ভব সব রকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। তারপর কয়েকটা ঘণ্টা আমার নিজের অজান্তে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি, যখন এই ঘটনার শুরু হয় তখন আমি পিতা-মাতা সহ মাগুরা সদরে বাস করি। আর তখন আমার বয়স ১৪ বছর এবং ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। এখন মূল ঘটনায় আবার ফিরে আসা যাক।

স্কুল সেদিন কি কারণে যেন বদ্ধ ছিল। বেলা তখন আনুমানিক ১২টা ৩০মিঃ। সম্ভবত আমার দেশ দেখার বা ভ্রমণের কোন কাজের জন্য আমি আমার পড়ার রুমে ঢুকেছিলাম। আমার পড়ার রুমেই ছিল আমাদের পরিবারের একটা আলমারি। আমি জানতাম ঐ আলমারিতে প্রায়ই টাকা থাকে। সঙ্গত কারণেই আমার নজর আলমারির উপরে পড়লো। আলমারির দিকে চেয়ে দেখি আলমারি খোলা। আমি আশায় বুক বেঁধে আলমারির আরও কাছে গেলাম। আল্লাহ্‌ আমার প্রতি সহায় হলেন। দেখলাম অনেক টাকা। আনুমানিক ১১০০-১২০০(১৯৮৯ সাল) টাকা। আমার বুকের ভিতর তখন প্রাচীন দিল্লীর রাজ-প্রাসাদের ঘণ্টা বাজা শুরু করে দিয়েছে। আমি বেশী দেরী না করে ওখান থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে পকেটে গুঁজলাম। তারপর আলমারির দরজা দুটো ভিজিয়ে পড়ার চেয়ারে এসে বসলাম। একটা বই খুলে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলাম। মন দিয়ে পড়া তো না। একেবারে স্রেফ লোক দেখান পড়া। মা-বাবা যাতে সন্দেহ না করে তার জন্য এই ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর যখন ভাবলাম এখন আর আমাকে কেউ সন্দেহ করবে না তখন চেয়ার থেকে উঠলাম।

আমরা ছিলাম তিন ভাই। বাবা সখ করে আমাদের তিন ভাইকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। পরিবারের বড় ছেলে বলে সাইকেলের উপর আমারই বেশী অগ্রাধিকার ছিল। সাইকেলের চাবিটা সব সময় আমার কাছেই থাকতো। সাইকেলের চাবিটা নিয়ে সদর দরজার কাছে এলাম। সদর দরজায় এসে দেখি বাবা বসে রয়েছেন। আমি মনে মনে যাই সন্দেহ করেছিলাম তাই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
"এই ভর দুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?" তিনিই আমাকে প্রশ্ন বললেন।
"কোথাও না, এই দীপুদের বাসায়। দীপুর সাথে আমার কিছু কথা আছে।" আমি ওনার উত্তরে বললাম। ভাবলাম বাবা আরও কিছু প্রশ্ন করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। আমিও কোন মতো বেঁচে গেলাম। চাবিটা নিয়ে সাইকেলটা খুলে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। আমাদের বাসাটা ছিল তখন কলেজ পাড়ায়। যখন আমি বাসা থেকে বের হলাম তখন আমার সম্বল ছিল :- একটা লুঙ্গি, এক জোড়া স্যান্ডেল, একটি ফুল হাতা শার্ট, ৩০০ টাকা, একটি ঘড়ি আর একটি হিরো রয়্যাল সাইকেল। অর্থাৎ সর্বমোট যার মূল্য হতে পারে ২৫০০টাকা। কলেজ পাড়া থেকে প্রথমে সাইকেল চালিয়ে ভায়না মোরে এলাম। দীপুদের বাসাটা ছিল পুলিস লাইনয়ে। আমার এই বিদায় বেলায় দীপুকে দেখতে খুবই ইচ্ছা করছিল। কারণ দীপু আমার বন্ধুদের ভিতর সবচেয়ে প্রিয়। তাই দীপুদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, দীপুদের বাসায় পৌঁছে শুনি দীপু বাসায় নাই। কি একটা কাছে বাইরে গেছে। অগত্যা ওর সাথে দেখা না করেই আমাকে বিদায় নিতে হলো। আমি মাগুরা শহরকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেশ ভ্রমণের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লাম।

আমার জীবনের সত্য কথাМесто, где живут истории. Откройте их для себя