-রাফাত কি খাবি বল, কফি নাকি চা?
-উফ্ বাবা তুমি আসলে কি? বাসায় আসতে না আসতেই খাওয়া নিয়ে উঠেপড়ে লাগলে কেন? একটু ফ্রেশ হতে দিবে না আমাকে?
-এজন্যই বলছি। তুই ফ্রেশ হতে হতে এদিক দিয়ে আমিও একটা কিছু করে ফেলি। তারপর দুইজনে ছাদে বসে জমিয়ে গল্প করব। তাছাড়া অনেকদিন হয়ে হয়ে গেল তোর সাথে বসে কফি খাওয়া হয় না। তাই বলছিলাম।
শেষ কথাটা বাবা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল। আমার বুঝতে বাকি নেই বাবার মন খারাপ হয়ে গেছে। আমারও একটু খারাপ লাগল। অাসলে অনেকদিন পর অাজ বাড়ি আসলাম। যদিও বেশি দিন না মাত্র ৩ মাস। তারপরেও অনেক। এর আগে কখনো এত দিন পর বাড়ি আসি নি। বাড়িতে বাবা একা থাকেন। ছোটবেলা যখন মাকে হারিয়েছি তারপর থেকে মায়ের অভাবটা বাবা কখনোই বুঝতে দেয় নি। আমাকে নিয়েই তার জীবন চলা। মাঝে মাঝে দু'একদিনের জন্য বাড়ি আসি আর এই সময়টা আমাকে পেয়ে বাবা যেন অমাবস্যার চাঁদ হাতে পান। ইদানিং লেখাপড়ার চাপ কেবল বেড়েই চলছে। এসাইনমেন্ট, সাপ্তাহিক আর মাসিক পরীক্ষা দিতে দিতে কখন যে মাসটাই শেষ হয়ে যায় বুঝতেই পারি না। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে নিজেকে অনেক কিছু থেকেই বিসর্জন দিতে হচ্ছে। তারপরেও এত কষ্টের পর যদি বাবার মুখে একটু খানি সুখের হাসি দেখি তখন এসব কষ্টের কথা আর মনে থাকে না। আমি বাবাকে বললাম।- বাবা এক কাজ কর গরম কফি বানাও। এই শীতের মধ্যে গরম কফিই ভাল হবে। কি বল তুমি?
-হ্যা, একদম ঠিক বলেছিস। আমিও সেটাই ভাবছিলাম। তাহলে তুই চট করে তৈরি হয়ে নে।আমার কথা শুনে বাবা মুচকি হাসলেন। এটুকুতেই বাবা অনেক খুশি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি। আমি ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
-তারপর, লেখাপড়া কেমন চলছে? কোন সমস্যা হচ্ছে না ত? চেহারা দেখে মনে হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত করিস না। দিন দিন এভাবে শুকিয়ে যাচ্ছিস কেন?
বাবা কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল। আমি বাবার কথা শুনে একটু চমকে উঠলাম। মাসকয়েক যাবত লেখাপড়া নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে নিজের চেহারাটাও আয়না দেখার কথা মনে থাকে না। আর রাত জেগে লেখাপড়া করা আবার সকালে উঠেই কলেজের দিকে দৌড় এটা যেন প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। অন্যকিছু খেয়ালই থাকে না। আমি বাবার কাছ থেকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলাম আর বললাম।
-কোথায়! কি বল! আমি ঠিক আছি। আর খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতই হচ্ছে।
-দেখ রাফাত লুকানোর চেষ্টা করবি না। তুই আমার ঘরে জন্মেছিস নাকি আমি তোর ঘরে জন্মেছি? ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবি বলে দিলাম। আর ক্লাস কেমন চলছে?