এই সেই সুদীর্ঘ বালুকাতট। আমার জীবনের শেষ থেকে শুরু, - শুরু থেকে শেষের নীরব সাক্ষী। সুবিশাল বালুকারাশিরমাঝে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা সারিবদ্ধ শালবনের কোনটার বা নাম-'তপোবন'।আমি তপোবনের গভীরে প্রবেশ করিনি। দুর থেকে অস্তাচলের সূর্যালোকে তার অপরিসীম সৌন্দর্য কে সানন্দে উপভোগ করেছি মাত্র। সামনে রক্তিম আভায উদ্ভাসিত বিশাল জলরাশি, ঘরে ফেরা পাখিদের কলকোলাহল,- এরই মাঝে আমার ভ্যান রিকশা র চালককে প্রশ্ন করে ছি-বলতে পার, 'তপোবন' নাম হলো কেন। ও শুধুই বলেছে- "আমি ওসব বলতে পারব না, - দ্বীপের সবাই বলে, আমি ও বলি।"
গ্রাম্য পথের এক পাশে আদি শঙ্করাচায্যের মন্দির অন্য পাশে নিজের হাতে বানানো খেজুর এর গুডের সে কি সমারহ।
ভাবলে সত্যিই অবাক হই- আমার বান্ধবী, - 'নীলাঞ্জনা ' - যার হাত ধরে আমার নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, - সে যখন এক্কেবারে ছেলেমানুষ এর মতো আমাকে জোরাজুরি করে বলে, - চলো না স্নান করতে নেমে পড়ি, তুমি না এক্কেবারে ধীরজ, - সব জল চলে যাবে যে, - আর জল পাব না, - আমি আর স্নান করতে পারব না। আমার সব আশা তুমি নষ্ট করে দেবে। আমার আর পূণ্য স্নান করা হবে না, - এ শুধু তোমারই জন্য।
নীলাঞ্জনা, - যেন সন্ধ্যা সবিতা র আলোকে উদ্ভাসিত একফালি চাঁদ, - ডাক সুন্দরী।
পড়ন্ত বেলার সূর্যালোকে অবগাহন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দ্যাখে, - আর আমি ওর মায়াবী আলোয় আলোকিত, - জীবন যুদ্ধে পরাভূত এক সৈনিক, - নতুন করে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন দ্যাখাএক পুরুষ।ঈশ্বরের কি বিচিত্র লীলা। বিশাল সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে জলের জন্য হাহাকার।
হায়, যিনি সারাটা জীবন ধরে মানুষের সেবা করে গেছেন আজ সে কিনা নিজের সেবার জন্যে কেঁদে আকুল, - প্রাণযাঁয।
এ এক বিচিত্র সংসার, দস্যু দানবেরা মারধর করে নদীর জলে ফেলে দেওয়ার পরে কোনক্রমে রাতের অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে থানায় পৌছে নিজের আর অন্য সকল মহারাজের জীবন বাঁচানো, এ কি কম দায।
কিন্তু কেন, - কেন একদল দস্যু দানবের হাতে মার খেতে হল তাকে। কি অপরাধ ছিল সে দিনের সেই মহারাজের।
যারা আর্ত র সেবা করেন, যারা সেবার আসনের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলেন - মা গো, পেট ভরেছে তো। - মা।
সুদূর কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে এসেছেন, বিকলাঙ্গ মানুষের সুচিকিৎসার আশায় - আমি তার নীরব সাক্ষী।
বন্যা দুর্গত মানুষের সেবায় নিজেদের সব শক্তি কে উজাড় করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এত সবের পরেও বিনিময়ে শুধু মার খেতে হবে। মার খেয়ে সুস্থ্য ভাবে চলাফেরা করার সব ক্ষমতা কে হারিয়ে ফেলতে হবে।
এ শুধুই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের খেসারত। জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার অনভিপ্রেত পরিণাম। তবুও নিজের জীবনের বাজি রেখে, সাথীদের আর :' ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের 'ঐতিহ্য ও মহৎ উদ্দেশ্য কে বাঁচিয়ে রাখার-সেই মূর্ত প্রতীক স্বয়ং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহারাজ- এক অবতার।
সেই ভয়ংকর রাতের কথা আর নাই বা বললাম। কিন্তু আমার নিশ্চিত বিশ্বাস- সাধু মহাত্মা গনের উপর এই অমানবিক পৈশাচিক আক্রমণ শুধুমাত্র দুষ্কৃতকারী দের পক্ষেই সম্ভব কারন ওরা বিহারের গযার ই হোক বা অন্য কোনও জায়গার ই হোক। দুষ্কৃতী কখনো কোন নির্দিষ্ট জায়গার হয় না, ওদের কোন নির্দিষ্ট জাত বা ছোট বড় হয় না। দুষ্কৃতীরা সর্ব কালের, ছোট বড় যে কোন জাতির হয়। আসলে ওরা সর্ব কালের মানুষের শত্রু। ওরা সভ্য সমাজকে ভয় পায়, আর সেই জন্যই ওরা সভ্য সমাজ থেকে নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখে। ওদের উচিত সভ্যসমাজের কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসা। হয় তো ওরা জানে না - হিংসাই শেষ কথা বলে না। সেই জন্যই উচিত পৃথিবীর সমস্ত দেশের সমস্ত মানুষের এক সাথে হয়ে ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং ওদের চিরকালের মত নির্মূল করা।
এত সবের পরেও আর্ত র সেবায় ব্রতী সেই মানুষটার কি হল।
অসহায় এর সহায়, - আজ অসহায় হল।
দিদিমা র কাছে মানুষ। সেই ছোট্ট বেলায বাবা - মা র অকাল মৃত্যু।সহায় সম্বল হীন হয়ে জীবন সংগ্রামে র প্রতি টি মুহুর্ত কে সামনে করা, - এরই মাঝে নিজের পড়াশুনা করে বঙ্গবাসী কলেজ র কলা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ। চাকরির কম্পিটিশন পরীক্ষায় বসা। ইংরাজী তে প্রথম হ ওরা ছাএর সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ, - তবু তাকে ধরে রাখা গেল না, - মানব কল্যাণে ব্রতী নিষ্ঠাবান ঐ পুরুষ টাকে।
। অসহায় মানুষদের শীতের কম্বল বিতরণ করলেন কিন্তু প্রচন্ড শীতে ও নিজের জন্য একটা ও নিলেন না প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে দীর্ঘদিন ধরে জ্বর-সরদি-কাশিতে
ভুগলেন। আজও সুস্থ ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। আতংকবাদীরা মেরে বুকের হাড় ভেঙে দিয়েছিল। আজ কোন ভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলা। যিনি কামনা বাসনা থেকে মুক্তি লাভ করেছেন, যিনি ভগবানের তৈরি বিশাল উদ্যান কে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছেন, - যিনি সমস্ত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে, সমস্ত অহংকার ত্যাগ করে সদাসর্বদা ঈশ্বরের চিন্তায় তন্ময় থেকে, তার মধ্যে থেকে ই আনন্দ খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন, যাঁর বাড়ীতে ভগবানের নাম-জপ, যিনি সমস্ত মানুষকে স্বয়ং নারায়ণ এর অংশ মনে করেন, - যিনি সকল জীবের সেবার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করে যেতে চান- যিনি আজ ও সকলের মাঝে নীরব একাকীত্বের বোঝা বহন করে বেঁচে আছেন সেই সাগর দ্বীপে - - সেই একাধারে সাধু, সংস্কারক এবংপ্রকৃত - - 'অবতারের' চরণপদ্মে আমার শতকোটি প্রণাম।।
পরিশেষে বলি, - 'আমরা একে অপরের' - - আমাদের অন্তরে ধ্বনিত হোক এই মূলমন্ত্র।।
YOU ARE READING
অবতার
RandomIt's my 1st wattpad book hope u all like it.... এই গল্পের স্থান, কাল, পাএ সব কাল্পনিক। কাকতালীয় ভাবে যদি কারো চরিত্রের সাথে মিলে যায় তবে লেখক কোনভাবেই দায়ি থাকবে না।