বিষবৃক্ষ প্রমোশনাল পোস্ট- ১

305 14 0
                                    


১।

আমাদের বাড়ির সকাল দুপুর ও রাতগুলো সব এক রকম লাগে আমার কাছে। শুধু পার্থক্য বুঝতে পারি যখন দেখি রাবেয়া আপা সকালের নাস্তা করার জন্য ডাকে। দুপুর এবং রাতও ঠিক একই ভাবে বুঝতে পারি। দিনের বেলায় আমার ঘুমের অভ্যাস নেই তেমন। মেট্রিক পরীক্ষা শেষ করে সারাদিন শুধু চুপচাপ চিলেকোঠার ঘরে বসে থাকা। রাবেয়া আপা আমাকে ইন্টার এর জন্য ভর্তি কোচিং এ ভর্তি করাবেন ভাবছিলেন। কিন্তু সেদিন রাতের বেলায় খাবার টেবিলে এ কথা বলতেই দুলাভাই একদম খেঁকিয়ে উঠলেন, 'আমরা জীবনে কোনদিন ভর্তি কোচিং করেছি? আমরা কি পড়ালেখা করিনাই? কোচিং এর খরচ কি তমার মরা বাপ এসে দিবে? টাকা কি গাছের পাতা যে ছিঁড়ে ছিঁড়ে দিয়ে দিব?'

এতটুকু বলতেই আপার চোখমুখ একদম শুকিয়ে গেলো। আমি মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছিলাম। দুলাভাই এর সাথে তেমন একটা কথা বলা হয় না আমার, খুব না পারতেও তিনি আমার সাথে কথা বলেন না।

আমাদের বাসার আরেকটা মজার চরিত্র হল ময়নার মা। তার কাছে মনে হতে থাকে সারাদিন রাত ভুত প্রেত পুরা বাসাটাকে ঘিরে রেখেছে। সারা বাসার আনাচে কানাচে ময়নার মা শুধু ভুত দেখেন। সেদিন চিলেকোঠায় এসে আমাকে কি ধরনের ভুত আছে, আর তিনি এই বাড়িতে কয়টা ভুত দেখেছেন এই পর্যন্ত তার এক বিশাল ফিরিস্তি দিলেন।
আমি চুপচাপ ময়নার মা'র কথা শুনে যাই। কারো সাথে কথা বার্তা বলতে আমার তেমন একটা ভালো লাগে না। ময়নার মা'র কথা গুলো এক কান দিয়ে ঢুকলেও আরেক কান দিয়ে বের হয় না। রাতের বেলা প্রচণ্ড ভয় লাগে আমার। অবশ্য ময়নার মা আমাকে সবসময় আশ্বাস দেন, "ভাইজান! ভয় পাইয়েন না। আমি থাকতে আপনার কিছু হইব না। আমি মন্ত্র পইড়া রুমে ফু দিয়া দিছি। তেনারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারব না" 

ময়নার মা নিঃসন্তান, সন্তান হয় না দেখে স্বামী তাকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমার প্রায় সময় বেশ কৌতূহল হয় যে সবাই তাকে ময়নার মা বলে ডাকে কেন? কৌতূহল হলেও আমার কখনো ময়নার মাকে এই প্রশ্ন করা হয়ে ওঠে না।

আমার দিন কাটে বেশির ভাগ সময় চিলেকোঠার ঘরে একটা চড়ুই পাখির সাথে গল্প করতে করতে। আমার তো কথা বলার মত মানুষ নেই, তাই চড়ুই পাখিই এখন আমার শেষ ভরসা। সেদিন চড়ুই পাখিদের সাথে গল্প করছিলাম, এমন সময় পাশের বাসার বারান্দা থেকে একটা মেয়ে হাত নাড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টায় আমার চড়ুই পাখির সাথে কথা বলার বেশ ব্যাঘাত ঘটল। আমি জানালা দিয়ে গলা বারিয়ে দিতেই মেয়ে টা প্রশ্ন করল- "এই! তুমি কি জানো, এখন কয়টা বাজে?"
তেমন চিৎকার করতে হলনা মেয়েটার, কারণ পাশে বাসা থেকে আমাদের বাসা একদম লাগোয়া। আমি চিলেকোঠার জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে "আড়াইটা বাজে" বলতেই মেয়েটা "আচ্ছা" ঠিক আছে বলে ভিতরে চলে গেলো। বলার পরে আমি ভাবতে থাকলাম, আমি তো জানিনা যে এখন আড়াইটা বাজে কিনা... না জেনে এভাবে বলে ফেলাটা কি উচিৎ হয়েছে। যাক সেসব কথা পরে ভাবলেও চলবে।

বিষবৃক্ষDonde viven las historias. Descúbrelo ahora