নাঈমের সাথে অামার প্রথম দেখা ও'র বড় ভাইয়ের বিয়েতে।ধবধবে ফুলহাতা সাদা শার্ট পরনে, মাথার উপরে সানগ্লাস তুলে দিয়ে, ও ওয়েটারদের সাথে দিব্যি খাবার সার্ভ করছে।
অামার পাতের কাছে এসে দইয়ের পাতিল উপর করে ঢেলে দিলো।সারা পাতে দই ছিটকে পরে, অামার শাড়ি একাকার।অামি অবাক!!
পাশের টেবিল থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
--নাঈম, সাবধানে।লতায় পাতায় তোর কিন্তু ভাগ্নী হয়!
নাইম চোখ মুখ কুচকে বলল
ও অাচ্ছা খেলামণি তাহলে,
সোজা খালামনি থেকে অামায় খেলামণি করে দিলো!অামি রাগে বিস্ফোরিত হয়ে বললাম,
--অাশ্চর্য!! এটা কি করলেন??
সে অামাকে দ্বিগুণ ধমকের সুরে বলল,
--দই দিয়েছি খেলামণি, দই খাও!অামি কিছু বলতে যাবার অাগেই নাঈম চলে গেলো।দই মাখামাখি শাড়ি নিয়ে ছানাবড়া অবস্থায়, অামি বোকার মত কেঁদে ফেললাম।এত বেয়াদব ছেলে....
তার কিছুদিন পর, শপিংমলে দেখা।অামি দেখেই যেই না পালাতে যাচ্ছিলাম, সে সামনে চলে অাসলো।ব্যাগ টেনে ধরে বলল
--খেলামণি, মামাকে দেখে পালাচ্ছো নাকি??
অামি কোনোমতে মাথা নাড়লাম।
অামার ব্যাগ টেনে ধরে অামাকে সাথে নিয়ে চললো,
--অান্টি কি খাবা বলো??
নাঈম অামাকে এক প্যাকেট ম্যাংগোবার কিনে দিলো।
--খেলামণি, বিড়ি খাবে?? বিড়ি কিনে দিই?
এবং অামাকে অবাক করে দিয়ে সে অামাকে এক প্যাকেট সিগারেটও কিনে দিলো।
একটা মানুষ এত অসভ্য হয় কি করে??তার অনেকদিন পর, অামি তখন ভর্তি কোচিং করছি, দিনরাত এক করে পড়ছি। এর মাঝে নাঈমের বাসা থেকে বিয়ের অালাপ এলো, নাঈমদের ভালো ফ্যামিলি, ও তখন ইন্জিনিয়ারিং শেষ করেছে সবে, বাবা না করে দিলেন।এই মুহূর্তে বিয়ে অসম্ভব! মেয়ে পড়ছে।
অামি মহাখুশি।
নাঈম অামার সাথে নিজে থেকে দেখা করলো, চুল উসকোখুসকো, বিষণ্ণ চোখ, হাতে সিগারেট,
--খেলামণি, অামাকে বিয়ে করবা না, তো কি লন্ডনী বিয়ে করবা?লন্ডনী তো কয়েকদিনের জন্য এসে বিয়ে করে পেটে বাচ্চা দিয়ে অাবার ফুরুৎ করে লন্ডন চলে যাবে।অামি রাগ চেপে ঠোট কামড়ে বললাম,
--অামি, পড়াশোনা করছি, এখন।
--খেলামণি, পরে কিন্তু পস্তাবা!অামি কিন্তু তোমার পড়াশোনায় একটুও জালাতাম না।দুদিন ভাবো..ভেবে বলো অামাকে।
--ভাবাভাবির তো কিছু নেই, অামি অাপনাকে বিয়ে করবোনা।অামার কি যে হলো তখন, অামি শক্ত হয়ে বললাম,
--অাপনি একটা প্রচন্ড, অসভ্য ও বেয়াদব লোক।বিয়ে করার প্রশ্নই অাসে না।
নাঈম অামার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে অামার দুগাল চেপে ধরে বলল,
--কি বললে, অাবার বলো??অামি দাঁতে দাঁত চেপে কান্না অাটকালাম।নাঈম চলে গেলো...
পরে শুনলাম স্কলারশিপ নিয়ে ও বাইরে চলে গেছে।
অামার কেনো জানিনা, কষ্ট হলো তখন; ভীষণ কষ্ট।অবস্থা এমন যে, নাঈমের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করলাম।কাজ হলো না।নাঈম পাত্তা দেয়নি।তারপর অনেক বছর..... অামি তখন হন্য হয়ে চাকরি খুঁজছি।ইন্টার্ভিউ দিচ্ছি বিভিন্ন জায়গায়।বাড়িতে একটার পর একটা সম্বন্ধ অাসছে।অামি না করে দিচ্ছি।এক কোম্পানিতে ইন্টার্ভিট দিবার পর, সেই কোম্পানির এমডি রায়হান সাহেব নিজে থেকে, অামাকে ফোন করে বাসায় চলে অাসলেন দেখা করতে,
অামি অাহামরি কিছু ইন্টার্ভিউ দিইনি, উনার বাসায় অাসাতে অামি বিস্মিত হয়ে গেলাম, তিনি বললেন,
--অামি এমন একটা ছেলেকে জানি,যে অামার সবথেকে ভালো বন্ধু ছিলো,একসময়ের সেরা ছাত্র ছিলো, যেকিনা একটা মেয়েকে ভুলে থাকবার জন্য তাঁর পুরো দেশটাকে ফেলে চলে গেছে।প্রতিদিন কাজ শেষে সে যখন বিকেলে এক মগ কফি নিয়ে বসে, তখন সে কি করে জানো???
প্রচন্ড অভিমান ভরা চোখে
একটা মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বসে থাকে,
ছবিটাতে সবুজ শাড়ি পড়া দই মাখামাখি অবস্থায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।তুমি কি জানো, সেই মেয়েটা কে???অামার চোখ ভিজে গেলো। দুনিয়া ভেংগে কান্না অাসলো।
--তাহলে, অামি যখন যোগাযোগ করতে চাইলাম....
--তখন তো সে রেগে ছিলো।
--অামিও রেগে অাছি এখন...অামি কি সত্যিই রেগে অাছি এখন??
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম অামি,
--তাকে বলুন, অামি তাঁকে কিছুতেই দেশে অাসতে বলবো না..কিছুতেই না....রায়হান সাহেব, অামার সামনে বসে নাঈমকে ফোন করলেন,
--তোর, দইবানু এখনো অামার সামনে বসে কাঁদছে, তুই কি দেশে এসে ওর কান্না দেখবি, নাকি অামি ওর ছবি তুলে পাঠাবো?ফোন ধরে নাঈমের সাথে অামি কোনো কথা বলতে পারলাম না, অনবরত কেঁদেই গেলাম।সে বললো,
--কান্না থামাও নিতু, কাঁদলে তোমার চোখের পানির চেয়ে নাকের পানি বেশি বের হয়!
অামি চোখের জল নিয়ে হেসে ফেললাম।অানন্দে অার অন্যরকম ভালো লাগায়,
অামার চোখের জল যেনো থামতেই চাইছে না..
অনবরত কেঁদে যাচ্ছি অামি।অাজ অামার বুক ভাসিয়ে কাঁদার দিন....(কাল্পনিক)
YOU ARE READING
নাঈম
Romanceনাইম চোখ মুখ কুচকে বলল ও অাচ্ছা খেলামণি তাহলে, সোজা খালামনি থেকে অামায় খেলামণি করে দিলো!