তোমায় নতুন করে পাব বলেই

159 0 0
                                    

   এক

সায়ন আর অভীপ্সার একই পাড়ায় বাড়ি।দু পা হাঁটলেই একে অপরের বাড়ি পৌঁছে যায়।সায়ন বছর খানেকের বড়। ওদের বাবা বাল্যবন্ধু হওয়াতে একে অপরের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত।একই স্কুলে পড়া, একই জায়গায় ড্রইং, গিটার শেখা, দুই পরিবারের এক সাথে মাঝেসাঝে পিকনিক যাওয়ার মধ্যে দিয়ে একটা মিষ্টি সম্পর্ক দুই বাড়ির মধ্যে গড়ে উঠেছিল।অভীপ্সা সায়নকে নাম ধরেই ডাকত তুই সম্বোধনে।
সায়ন পড়াশোনাতে খুব মেধাবী।তাই প্রোজেক্ট, হোম ওয়ার্ক সহ বহু কাজে অভীপ্সার সায়নকে ছাড়া চলত না।ওরা ছিল একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড।ওরা একে অপরের সম্পর্কে জানত না এমন কোনো কথাই ছিল না।ওদের একে অপরকে ছাড়া ভাবাই যেত না।ওদের মানিকজোড় বলে বন্ধুরা কত রাগাত।
ওরা একে অপরকে সব কথা শেয়ার করত।যে কথাগুলো মা বাবাকেও বলা যেত না সেগুলো ছিল দুজনের সিক্রেট।টপ সিক্রেট। ওদের এই অবাধ মেলামেশাতে কারো কোনো আপত্তি ছিল না।বরং এই রকম মিলে যাওয়াতে অবাকই হত।
উচ্চমাধ্যমিকের পর সায়ন চেন্নাই চলে গেল পড়তে।আর অভীপ্সা ওই শহরেই রইল। ফোন আর মেসেজে প্রচুর কথা হত।যতই ব্যস্ত থাক, কাজ থাক এগুলো হবেই।
চার বছর কেটে গেল।সায়ন মাঝে মাঝে বাড়ি আসত।তখন দুই বন্ধুতে মিলে সারাদিন আড্ডা দিত আর বলা  কথাগুলো বলত।সায়ন অপেক্ষাকৃত চুপচাপ।ওর অভীপ্সার কথা শুনতে ভালোলাগে।আর অভীপ্সার ভালো লাগে বলতে।
মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে অভীপ্সার জীবনে বসন্ত এল।ভর্তির সাত দিনের মাথাতেই দীপের কাছ থেকে প্রোপোজাল পেল।প্রথম প্রেম, প্রথম অনুভূতি।অভীপ্সা এতকাল ওর বহু মেয়ে বন্ধুর লাভ স্টোরি শুনেছে।ও-ও প্রোপোজাল পেয়েছে প্রচুর।কিন্তু কাউকৈ ভাল লাগেনি।
কিন্তু দীপের ব্যাপারটাই আলাদা।দীপ ছিল কলেজের হার্টথ্রব।বহু মেয়ের ক্রাশ।পড়াশোনাতেও ভাল বলা চলে।ধনী, হ্যান্ডসাম দীপের প্রোপোজালে কী করবে অভীপ্সা বুঝে উঠতে পারেনি।দোমনা করছিল।ওর-ও দীপকে দুর্দান্ত লাগে।কিন্তু কাউকে বলতে পারছিল না।এমনকি সায়নকেও না। একটা অপরিচিত অনুভূতি।একে গ্রহণ কলবে কি করবে না।
কিন্তু একদিন কলেজে দীপের গান শুনে অভীপ্সা দীপকে সারাজীবনের জন্য নিজের জীবনের দীপ করে নিল।ওর দীপশিখা হতে চাইল।
সেই বিকেলে বাড়ি ফিরেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টের সাথে লাভ রিকুয়েস্টও অ্যাকসেপ্ট করল দীপের।
সেই রাতে সায়নের সাথে কথা হল অভীপ্সার।সায়নকে বলল সব।
- সায়ন তোকে একটা সিক্রেট বলছি।আমাদের টপ সিক্রেট।মা বাবা বা আন্টি আঙ্কেল কাউকে বলবি না।
- না বল।
- আমাদের কলেজে দীপ সেন নামে একটা ছেলে আছে।বিরাট হ্যান্ডসাম।একদম মডেলদের মত।আর দারুণ গান গায়।

- শুনছিস?
- হ্যাঁ।
- ওই দীপ দু সপ্তাহ আগে আমাকে প্রোপোজ করেছিল। আমি...
- কী?
- এই এত জোরে চেঁচাচ্ছিস কেন? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
- তোকে বিরক্ত করছে না তো? তাহলে আমি আঙ্কেলকে বলে..
- আমি তোকে বলতে বারণ করেছি।বলবি না বাবাকে।
- মানে? তোকে বিরক্ত করবে আর তুই সহ্য করবি। এসব করিস না।
- ও আমাকে বিরক্ত করে তোকে কে বলল?
- মানে?
- বিরক্ত কেন করবে? আমাকে জাস্ট অর্কিড দিয়ে প্রোপোজ করেছিল।
- তোর প্রিয় ফুল ও জানল কী করে?
- রাকা বলেছিল।রাকার থেকে আমার পছন্দ অপছন্দ ও সব জেনে নিয়েছে।তারপর আমাকে ইমপ্রেশ করার চেষ্টা করছিল।আজ ও একটা গান গাইল।এত সুন্দর গায় না।ছেলেটা খুব ভাল। চ্যাটিং-এ টুকটাক কথা হয়। আসানসোলে আসল বাড়ি।এখানে মেসে থাকে।ভূগোলে পড়ছে।
- বাঃ।সব জেনে গেছিস দেখছি।
- এভাবে কথা বলছিস কেন? তোর কি মুড অফ?
- না।তুই দীপকে ভালোবাসিস?
-  না মানে আসলে...
- হ্যাঁ কি না?
- হ্যাঁ।ওকে বিকেলেই আমি আমার মনের কথা বলে দিয়েছি।

- সায়ন , হ্যালো এই...

তোমায় নতুন করে পাব বলেইOù les histoires vivent. Découvrez maintenant