ঈদের ছুটি

3 0 0
                                    

               ঈদের ছুটি
              তায়েফ নাজ

ঈদের আনন্দে ভাসছে সবাই। প্রিয় মুখগুলো সব এখানে ওখানে। সন্ধ্যায় বাজার কেন্দ্রিক আড্ডা জমে। এখানে ওখানে জটলা হয়। অকারন হাসি হয়, তামশা হয় এর মাঝেই আলাপ চারিতা চলে। আমাদেরও বড় একটা গ্রুপ আছে। সিনিয়র-জুনিয়র মিশে আমরা একাকার হয়ে আছি। সবাইকে আপন মনে হয়। মুখে এক চিলতে হাসি ধরে রেখে সবাইকে সংঙ্গ দিয়ে যাচ্ছি। মনের বেদনার বিন্দু মাত্র রংও বের হতে দিচ্ছি না। খুব যত্নে সামলে নিচ্ছি।
এক মাস আগেও আমার অর্থনৈতিক অবস্থা এমন ছিল না। ভাল একটা প্রাইবেট কোম্পানিতে চকরির সুবাদে ভালই থাকত ব্যাংক একাউন্ট। গত মাসেই এই দেশ থেকে কোম্পানিটা ব্যবসা গুটিয়ে নিল। ব্যাংকের ক্যাসটা এক মাসও স্থায়ি হল না। জব চলে যাওয়ার সাথে সাথেই যেন আমার পারিবারিক খরচ বহুগুনে বেরে গেছে। যেই দিন সব হিসেব বুজে নিয়ে বাড়ি এলাম, বাবা বলল,
-কিরে, জব কেমন চলছে? একটা নিউজ দেখলাম।
আমি বললাম,- এত সহজ না। সব গুছিয়ে নিতে ওদের আরও অনেক সময় লাগবে। চিন্তা কর না। এর মাঝে অন্য কোম্পানিতে ঢুকে যাব।
বাবা বলল- হুম। আমার ইন্ডিয়া যাওয়ার সময়টাও মনে হয়ে চলে এল। চেক আপ টা করা দরকার। বুকের ব্যাথাটা বেরেছে।
আমি অস্পষ্ট করে বললাম- যাও, পাসপোর্ট টা রিনিউ করে নাও। ক্লান্ত লাগছে বাবা, ঘুমিয়ে যাও।
কথা শেষ করে ওয়াস রুমে থেকে বের হয়ে বেজা টাওয়াল টা নিয়েই বারান্দায় আসলাম। বারন্দা থেকে দূরের ল্যাম্পপোস্ট এর আলো টা দেখা যায়। চোখে আলোটা দেখতে দেখতে ঝাপসা হয়ে আসে, চিন্তা আসে-
বাসা বাড়া।
খাওয়া খরচ।
বাবার চিকিৎসা।
বুয়ার বেতন।
নিজের খরচ।
নতুন আর একটা জব না ফেলে বাবাকে নিয়ে গ্রামের চলে যেতে হবে। উপায় নাই। হয়তো নতুন নিয়মে নতুন যুদ্ধে নামতে হবে।
তবে আমার কপাল ভাল, বাবা ছাড়া আর কেউ আমার নেই। হয়তো যেমন তেমন করে আমার চলে যাবে। কিন্তু যাদের পুরো সংসার রয়েছে, আমার চিন্তা করতেও ভয় হয়।
ঈদের ছুটি কাটাতে বাবাকে নিয়ে গ্রামে এসেছি। সবাই এটাই জানে। আমাদের এবার এর ছুটিটা যে শেষই হবে না। হয়তো কেউই জানে না।

ঈদের ছুটিWhere stories live. Discover now