ঘুম ভেঙে লিভিং রুমে এসে তিশা কিমকে ইয়োগা ম্যাট গোটাতে দেখলো। শনিবার সকালেও কিম নিয়ম করে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে ইয়োগার জন্য। তিশার হাতে কফিমগ দেখে বিরক্ত হলো ও,
"স্মুদি বানিয়ে রেখেছি, দেখোনি?"
তিশা যেনো কথাটি শুনতেই পেলো না। সকালবেলার কফি ওর কাছে প্রার্থনার মতো। আজ অবশ্য মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
"আচ্ছা, বায়োজিন কি জিন থেরাপি নিয়ে কাজ করছে?"
- " তা তো করিই!"
সাধারণত কাজ নিয়ে বাসায় কথা হয় না দুইজনের। যদিও কাজের সূত্রেই ওদের পরিচয়। পিএইচডির শেষ বছরে নরওয়েতে একটি তিনদিনের কনফারেন্সে ওদের দেখা। কনফারেন্স শেষে প্রায় সপ্তাহ খানেক পর কিমই তিশার সাথে যোগাযোগ করে। কোনো কোলাবরেটিভ রিসার্চ নয় বরং নেহায়েত কফি আড্ডায়। সেদিনও নিজেদের কাজ নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
কিম ম্যাট্রেস পাশে রেখে মেঝেতে সন্ন্যাসীর মতো আসন গেড়ে বসে জিজ্ঞাসা করলো,
"হঠাৎ?"
"জার্মলাইন এডিটিং তো এখনো নিষেধ।"
তিশা পা ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে দুই হাত দিয়ে কফি মগ আগলে ধরে আপন মনেই বলতে লাগলো,
"ছয় মাসের প্রেগন্যান্সিতে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চার ব্যাপারটা তো আরো জার্মলাইন থাকছে না।"
কিম বোকা নয়। সেখান থেকেই ওর কথার প্রেক্ষাপট ধরলো,
"না, তবুও এতে মানা আছে। অনেকেই এটা নিয়ে কাজ করছে- কিন্তু মানুষের উপর ট্রায়ালের অনুমতি এখনো ইইউতে মিলে নি।"
- "ইউরোপীয় ইউনিয়নে মিলেনি, সাউথ এশিয়ায় হয়তো মিলছে।"
সাথে সাথে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিলো মাটিতে আসন গেড়ে বসে থাকা কিম,
"ইইউ'র কোম্পানি হলে সাউথ এশিয়াতে গেলেও মানুষের উপর ট্রায়াল করতে পারবেনা। আমাদের কোম্পানি চেয়েছিলো তো।"
কিম বায়োজিনে বেশ ভালো একটা পজিশনে আছে। রিসার্চার হিসেবে ওখানে ক্যারিয়ার শুরু করলেও এখন রিসার্চ কম ব্যবসা বেশি দেখছে। রিসার্চ সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় বায়োজিনের মতো কোম্পানি ওকে আর ছাড়ে নি।
"চাইনিজদের ব্যাপার অবশ্য আলাদা- নিজেদের নিয়ম-কানুন নিজেরাই মানে না।"
একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে কিম বললো,
" তবে এখন বেশ কিছু ভারতীয় কোম্পানিও মাথা চাড়া দিচ্ছে।"বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ এশিয়ার একটি কোম্পানি দেশটির জনগণের ডিএনএ সংগ্রহ করে নমুনা অন্যান্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলো। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, দেশটির সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে কোম্পানিটি তথ্য সংগ্রহ করেছিলো। প্রচলিত আছে, পাকিস্তানের জনগণের সাথে এই স্ক্যাম করা হয়েছে, যদিও ওই দেশের সরকার কখনোই তা স্বীকার করেনি।
"বায়োজিনের সাউথ এশিয়া অফিসও তাহলে ইইউ এর রেগুলেশন মেনে চলে?"
কিম মাথা নাড়লো। সাথে একটু চিন্তা করে বললো,
"অবশ্য ওরা সম্ভবত কোনো স্ক্যামে পড়েছিলো। ভ্রূণের বয়স ছয় মাস হয়ে যাওয়ার পর সিস্টিক ফিব্রোসিস এর জিন থেরাপি দেয়া থিওরিতে সম্ভব না।"
তিশা এবার পা নামিয়ে নড়েচড়ে বসলো। কিম অবশ্য খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে লাগলো,
"জিন ট্রীটমেন্ট নিয়ে স্ক্যামিং প্রায়ই হচ্ছে। কী আর বলবো, কিছু থার্ড ক্লাস হাসপাতালই জড়িত।"
ওকে থামিয়ে দিলো তিশা,
"বলতে চাইছো সাইফদের আসলে কোনো ট্রীটমেন্টই হয়নি?"
"খুব সম্ভবত!"
কাঁধ ঝাকিয়ে কিম উঠে দাঁড়ালো। তিশার কাছে এসে উবু হয়ে ওর গালে আলতো চুমু দিয়ে বললো,
"বাদ দাও, এই চমৎকার শনিবার এসব ভেবে মাথা নষ্ট করো না।"
নিজের সরু শরীরটাকে এক ধরনের নাচের ভঙ্গি করে গোসল করতে চলে গেলো ও। তিশার যেন আবার নতুন করে কিমের প্রেমে পড়লো। মাথা নেড়ে মৃদূ হেসে একটু ঝুঁকে টেবিল থেকে নিজের মোবাইল ফোনটা হাতে নিলো ও।
YOU ARE READING
যাপিত মাত্রা
General Fictionগল্পটি শুরুর আগে জেনে রাখুন, এটি একটি অসমাপ্ত গল্প। আস্তে ধীরে একেকটা অধ্যায় আপলোড করা হবে। কাল্পনিক গল্পে সব চরিত্র, ঘটনা কাল্পনিক। এটা আলাদাভাবে কেন বলতে হয় বুঝি না। যাইহোক, সত্যিকার জীবনে সব মানুষের চিন্তাভাবনা যেমন আপনার সাথে মিলে না, তেমনি এ...